OrdinaryITPostAd

ছাগল কোরবানির বয়স - ছাগল কোরবানির নিয়ম ও দোয়া

কোরবানি ঈদের প্রধান তাৎপর্য হলো পশু কোরবানির মাধ্যমে আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। কোরবানি হিসেবে অনেকেই ছাগল কোরবানি দিয়ে থাকি। নিচে ছাগল কোরবানির বয়স, ছাগল কোরবানির নিয়ম, ও ছাগল কোরবানির দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।

পেজ সূচিপত্রঃ ছাগল কোরবানির বয়স ও ছাগল কোরবানির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত

ছাগল কোরবানির বয়স ও ছাগল কোরবানির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতঃ ভূমিকা

শুধু কোরবানির দিলেই কোরবানি হয়ে যায় না। নির্দিষ্ট নিয়মে কোরবানি করতে হয়। সঠিক নিয়মে কোরবানি করলেই কেবল মাত্র তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। কুরবানী করার নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে।বিশেষ করে ছাগল কোরবানির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলোঃ ছাগল কোরবানির বয়স কত হতে হবে? ছাগল কোরবানির নিয়ম কি? এবং ও ছাগল কোরবানির দোয়া কি? ইত্যাদি বিষয়গুলো।

এ বিষয়গুলো সঠিকভাবে পালন না করলে কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই নিচে ছাগল কোরবানির নিয়ম এবং ছাগল কোরবানির বয়স কত হতে হবে? ছাগল কোরবানির নিয়ম কি? এবং ও ছাগল কোরবানির দোয়া কি? ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। চলুন দেখে নেয়া যাক ছাগল কোরবানির বয়স, ছাগল কোরবানির নিয়ম, ও ছাগল কোরবানির দোয়া সম্পর্কে।

ছাগল কোরবানির নিয়ম

'কোরবানি' শব্দটি মূলত আরবি শব্দ। এই শব্দটির অর্থ হলো নৈকট্য অর্জন করা বা কাছে যাওয়া।ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইসলামের বিধান অনুসারে পশু জবাই করাই হলো কোরবানি।

কুরবানী কার উপর বাধ্যতামূলক? এ প্রশ্নটির জবাব হলোঃ সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মুসলিম যদি ঈদের তিন দিনের মধ্যে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় (নিসাব পরিমাণ সম্পদ মানে হলোঃ সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর যেকোনো একটির মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা ব্যবসার পণ্যের মালিক) । তাহলে তার ওপরে কোরবানি করা বাধ্যতামূলক।

তবে যদি কোরবানি কারো উপরে বাধ্যতামূলক না থাকে, এরপরেও সে কোরবানি করতে পারবে এতে কোন সমস্যা নেই। অর্থাৎ কেউ যদি ইচ্ছে করে যে আমি কোরবানি করব তাহলে সে কোরবানি করতে পারবে। যদিও কোরবানি তার ওপরে বাধ্যতামূলক নয়।

কোরবানির পশু অবশ্যই ৬ প্রকারের কোনো এক প্রকার হতে হবে। আর এই ছয় প্রকার হলোঃ উট,  মহিষ, গরু, ছাগল দুম্বা ও ভেড়া। কোরবানি বলতে এটি একটি ছাগল হতে পারে, বা একটি ভেড়া অথবা একটি দুম্বা ও হতে পারে। আবার সামর্থ্য বেশি থাকলে একটি গরু মহিষ অথবা উট কোরবানি হিসেবে গণ্য হতে পারে।

কোরবানি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি বিষয় মনে রাখতে হবে আর তা হল কোরবানির পশুর যেন গৃহ পালিত হয়। অর্থাৎ বন্য পশু দিয়ে কোরবানি বৈধ নয়। যেমন কোন ব্যক্তি যদি হরিণ দিয়ে কোরবানি করতে চায় তাহলে তার কোরবানি বৈধ হবে না। যদিও সে হরিণটি বাসায় লালন পালন করে থাকে।

কোরবানি করার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে আর তা হলো কুরবানীর পশুতে যেন কোন ধরনের খুঁত না থাকে। পশুর শারীরিক কোনো সমস্যা থাকলে বা খুঁত থাকলে সেই পশু দিয়ে দিয়ে কখনই কোরবানি হবে না। 

খুঁজে কোন ধরনের হতে পারে যেমনঃ শিংভাঙ্গা থাকা, লেজ বাগানের অধিকাংশ কাটা ধাকা, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা, পশু অন্ধ হওয়া বা কোন পশু অপূর্ণ থাকা। এ ধরনের সমস্যা যদি কোন পশুর ভিতর থেকে থাকে তাহলে সেই পশু দিয়ে কখনই কোরবানি বৈধ হবে না। 

পশু কোরবানি করার নিয়ম হলোঃ নিজের পশু নিজে কুরবানী করা উত্তম। তবে যদি নিজে কোরবানি করতে সক্ষম না হয় তাহলে অবশ্যই অন্য কারো সাহায্যে কোরবানি করিয়ে নিতে পারবে এতে শরীয়তে কোনো বাধা নেই। তবে অন্য কাউকে দিয়ে কোরবানি করিয়ে নিলে কোরবানির সময় নিজে উপস্থিত থাকা উত্তম।

কোরবানির সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলে এই কোরবানির পশুর মাংস কে তিন ভাগে বিভক্ত করতে হবে। এরপর আত্মীয়স্বজনকে দিতে হবে এক, ভাগ গরিব পাড়া - প্রতিবেশীকে দিতে হবে এক ভাগ। আর বাকি এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য রেখে দেবে। তবে যদি কেউ কোরবানির সম্পূর্ণ অংশ দান করে দেয় এতে কোন সমস্যা নেই।

কোরবানি নিয়ে কিছু কুসংস্কার ও সমাজে প্রচলিত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, কোরবানির পশুর শিং অথবা কোরবানির পশুর হাড় যদি দরজায় লুকিয়ে রাখা যায়, তাহলে সেই ঘরের ভিতরে জিন বা ভূত প্রবেশ করবেন না। এগুলো নিতান্তই সংস্কারমূলক কালচার।  ইসলাম এসবের কোনো ভিত্তি নেই।

আবার অনেকে মনে করে যে কোরবানির পশুর রক্ত পায় মাখলে পায়ের রোগ ভালো হয়ে যায়। ইসলামে এই বিষয়গুলোর কোন ভিত্তি নেই। এবং এগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কোন বিষয় নয় তাই এই বিষয়গুলো আমরা অবশ্যই এড়িয়ে চলব। 

ছাগল কোরবানির বয়স

পশু কোরবানির ক্ষেত্রে সকল পশুর বয়স ভিন্ন ভিন্নভাবে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। উট কোরবানি করার ক্ষেত্রে একজনের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে, আবার গরু মহিষ কোরবানি করার ক্ষেত্রে আরেক ধরনের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে ছাগল ভেড়া দুম্বা কোরবানি ক্ষেত্রেও ভিন্ন ভিন্ন বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। নিচে ছাগল কোরবানির নিয়ম এবং ছাগল কোরবানির বয়স কত হতে হবে তা উল্লেখ করা হলো।

ছাগল কোরবানির বয়স সর্বনিম্ন এক বছর হতে হবে। কিংবা যদি এমন কোন ছাগল পাওয়া যায় সেই ছাগল দেখতে এক বছর বয়সে বলে মনে হয় তাহলে সেই ছাগল দিয়ে কোরবানি করা যেতে পারে। ছাগল কোরবানির বয়স সম্পর্কে হাদিসে বর্ণনা রয়েছে। হাদীসটি নিম্নরূপঃ 
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই মুসিন্না (নির্দিষ্ট বয়সের পশু) কোরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর (পাওয়া কষ্টকর) হলে ছয় মাসের মেষশাবক কোরবানি করতে পারবে। (মুসলিম)

অন্যান্য পশুর বয়সের ক্ষেত্রে যে সকল তথ্য পাওয়া যায় তা হলোঃ উট কোরবানি দেওয়ার সর্বনিম্ন বয়স হল ৫ বছর। গরু ও মহিষ কোরবানি দেওয়ার বয়স হলো সর্বনিম্ন ২বছর। তবে এক্ষেত্রে যদি কোন পশু উল্লেখিত বয়সে না পৌঁছায়। কিন্তু দেখতে উল্লেখিত বয়সের মত মনে হয়। তাহলে সেই পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে।

ছাগল কোরবানির দোয়া

ছাগল কোরবানির বয়স ও ছাগল কোরবানির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আর এখানে আলোচনা করা হবে ছাগল কোরবানির দোয়া নিয়ে। কুরবানীর সময় ছাগল কোরবানির দোয়া কখন পড়তে হয়? ছাগল কোরবানির দোয়া নিয়ে সম্পর্কিত বিষয়গুলো এখানে আলোচনা করা হবে। চলুন দেখে নেই ছাগল কোরবানির নিয়ম এবং ছাগল কোরবানির দোয়া।

ছাগল কুরবানী করার সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, নির্ধারিত নিয়মে কোরবানির না করলে কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে না নিচে ছাগল কোরবানির দোয়া গুলো উল্লেখ করা হলোঃ

ছাগল কোরবানির দোয়া - ১

পশুকে কোরবানির জন্য শোয়ানোর পরে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে হবেঃ
اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ - إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ - بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।

ছাগল কোরবানির দোয়া - ২
উপরোল্লিখিত দোয়াটি যদি করতে না পারে তাহলে ছোট এই দোয়াটি পড়তে পারেনঃ
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।

ছাগল কোরবানির দোয়া - ৩
নিজের পশু নিজে কুরবানি করলে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে হবে।
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।'
ছাগল কোরবানির দোয়া - ৩  অন্য কেউ কুরবানি বা অন্য কারো কুরবানি করলে নিচের দোয়াটি পড়তে হবে। 
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম’ কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।'

ছাগল কোরবানির বয়স ও ছাগল কোরবানির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতঃ উপসংহার

ছাগল কোরবানির বয়স, ছাগল কোরবানির নিয়ম এবং ছাগল কোরবানির দোয়া সম্পর্ক করেছে সকল আলোচনা করা হলো আশা করি এই আলোচনা গুলো আপনাদের উপকারে আসবে। কোরবানি করার পূর্বে অবশ্যই কোরবানির সঠিক নিয়ম জানতে হবে। কেননা সঠিক নিয়মে কোরবানির না করলে কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url