OrdinaryITPostAd

কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া - গরু কুরবানী করার বয়স

কোরবানির ঈদ মানেই পশু কোরবানির মাধ্যমে আত্মত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করা। গরু কোরবানি করার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, নিচে গরু কুরবানী করার দোয়া বা কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পেজ সূচিপত্রঃ গরু কুরবানী করার দোয়া - কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া

গরু কুরবানী করার দোয়া - কোরবানির গরু জবাই করার দোয়াঃ ভূমিকা

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আনন্দোৎসব ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা মুসলমানদের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। আল্লাহর প্রিয় নবী ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে কোরবানির বিষয়টি ইসলাম ধর্মে ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করে। যদিও ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পূর্বেও কুরবানীর বিধান ছিল।

ইব্রাহীম (আঃ)  কোরবানির মাধ্যমে যে ত্যাগের শিক্ষাদান করে গিয়েছেন, সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অনুকরণীয়। এবং আমাদের কোরবানি ঠিক ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের কোরবানির মত হওয়া উচিত। আর তাই সঠিক নিয়মে কোরবানি করতে হবে। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার প্রিয় সন্তানকে স্বপ্নে কোরবানি করার বিষয়টি দেখে কুরবানী করতে গিয়েছিলেন, আল্লাহর নির্দেশ মেনে নিয়ে। 

কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর সন্তানকে কোরবানির বদলে পশু কুরবানী করার নির্দেশ প্রদান করেন, আর তখন থেকেই ইব্রাহিম(আঃ) নিয়মিত এই নির্দেশ পালন করতেন। পরবর্তীতে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের উপরেও কুরবানীর বিধান নাযিল করা হয়।

নিচে গরু কুরবানী করার দোয়া বা কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া সম্পর্ক বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক গরু কুরবানী করার দোয়া বা কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া।

গরু কুরবানী করার দোয়া বা কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া

কোরবানি করার নির্ধারিত যে নিয়ম রয়েছে এই এই নিয়ম অনুসরণ করে কোরবানি করতে হবে। এই নিয়ম অনুসরণ না করলে কোরবানির সঠিক হবে না। তাই কোরবানির নিয়ম জেনে রাখা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিচে গরু কুরবানী করার দোয়া বা কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া এবং নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কিভাবে কুরবানী করতে হবে, কোরবানির পশু কেমন হবে এবং কোরবানি করার সময় কোন দোয়া পড়তে হবে এসকল বিষয় সম্পর্কে সরাসরি হাদিসে বর্ণনা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম নিজের কোরবানি নিজ হাতে সব সময় করতেন। তাই নিজ হাতে কোরবানি করা সুন্নাত। নিচে কোরবানির নিয়ম সবিস্তারে বর্ণনা করা হলোঃ

পশু জবেহ করার সময় অবশ্যই বিসমিল্লাহ দিয়ে জবাই করতে হবে। কেননা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে কোরবানি করা হলে সেটি কখনোই কোরবানির অন্তর্ভুক্ত হবে না। আর তাই গরু কুরবানী করার দোয়া বা কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া এবং কোরবানির গরুর বয়স সর্বনিম্ন কত হতে হবে বা কুরবানী করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উচিত। 

পশু জবাই করার সময় আরেকটি বিষয় খুব ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে, তা হলোঃ পশু কোরবানি করার সময় পশুর খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী আর দুই পাশে যে দুটি নালী রয়েছে এই নালী দুটির খুব ভালোভাবে কেটে দিতে হবে। কেননা এই নালীগুলো ভালোভাবে না কাটলে কোরবানির বিশুদ্ধ হবে না।

যে ছুরি দিয়ে পশু কোরবানি করা হবে, সেই ছুরিটি অবশ্যই ধারালো হতে হবে। কেননা ভোতা বা কম ধারালো ছুরি দিয়ে পশু জবেহ করা সমীচীন নয়। এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীসে এসেছে, 'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'পশু জবেহ করার আগে ছুরি-চাকুতে ভালোভাবে ধার দিয়ে নেয়া।' (মুসলিম)। 

একটি বছর সামনে অন্য কোন পশু জবেহ না করা উত্তম। কেননা একটি বাসের সামনে আরেকটি বছর উপরে ছুরি চাকু চালালে, পশু ভয় পেতে পারে।  কোরবানির পশুকে অবশ্যই বাম কাতে শোয়াতে হবে, এবং গলা পশ্চিম দিকে থাকবে। 

গরু কোরবানির দোয়া বা পশু কোরবানির দোয়াঃ
পশু কোরবানি করার সময় নিম্নবর্ণিত দোয়াটি অবশ্যই পাঠ করতে হবে। কেননা নির্ধারিত বর্ধিত কোরবানি করা বৈধ নয়।
اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ - إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ - بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।

নিচে আরও কিছু গরু কুরবানী করার দোয়া বা কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া উল্লেখ করা হলো। কেউ যদি উপরোল্লিখিত দোয়াটি পড়তে না পারে, তাহলে সে নিচের এই ছোট দোয়াটি পড়ে ও কোরবানি করতে পারবে।
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।

যদি কেউ নিজেই নিজের পশুকে কোরবানি করতে চায় তাহলে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করবে।
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।'
আর যদি অন্য কেউ কোরবানি করে দেয় বা অন্য কারো পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে কোরবানির সময়নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করবে।
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম’ কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।

গরু কুরবানী করার দোয়া বা কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া সম্পর্কে উপরে যে সকল তথ্য প্রদান করা হলো। আশা করি এই বিষয়গুলো আপনাদের উপকারে আসবে। বিশেষ করে যারা কোরবানি দিতে চান তাদেরকে অবশ্যই উপরোল্লিখিত নিয়ম-কানুন গুলো মেনে কোরবানি দিতে হবে। অন্যথায় কোরবানি বৈধ হবে না। 

কোরবানির গরুর বয়স

সব বয়সী বা সব ধরনের গরু কোরবানির জন্য উপযুক্ত নয়। কোরবানির পশুর জন্য নির্ধারিত শর্ত রয়েছে। এই শর্তগুলো যে সকল পশুর মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব কেবলমাত্র সেই সকল পশু দিয়েই কোরবানি করা বৈধ। নিচে কোরবানির গরুর বয়স সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। চলুন দেখে নেয়া যাক কোরবানির গরুর বয়স কত হওয়া উচিত।

মহিষ অথবা কোরবানির গরুর বয়স সর্বনিম্ন ২ বছর হতে হবে। আর ছাগল কিংবা ভেড়ার ক্ষেত্রে বয়স এক বছর হতে হবে। তাই কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোরবানির গরুর বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গরুর বয়স কিভাবে বের করবেন? তা নিয়ে চিন্তিত? খুব সহজভাবেই কোরবানির গরুর বয়স নির্ধারণ করতে পারবেন। চলুন দেখে নেই কোরবানির গরুর বয়স ধারণ করার পদ্ধতি সমূহ.

গরুর বয়স সাধারণতঃ তিনভাবে বের করা যায়। প্রথম পদ্ধতিটি হলো একটি বয়স নির্ণয় করা, দ্বিতীয়টি হলো শিং দেখে বয়স নির্ণয় করা। আর তৃতীয় পদ্ধতিটি হলো জন্ম তারিখ হিসেবে রেখে বয়স নির্ণয় করা। উপরে গরু কুরবানী করার দোয়া বা কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

দাঁত দেখে বয়স নির্ণয় করার পদ্ধতিঃ
গরুরও প্রথমে দুধ দাঁত থাকে। এরপর স্থায়ী দাঁত  গজায়। গরুর জন্মের এক মাস বয়সের মধ্যে স্থায়ী দাঁত উঠা শুরু করে দেয়। এবং এই এক মাসের মধ্যেই নিচের পাটির সামনের আটটি দাঁত সম্পূর্ণরূপে গজিয়ে যায়।
আর এক বছর বয়সের মধ্যেই সামনের মাসের দুটো দুধ দাঁত পড়ে যায়, এবং সেখানে স্থায়ী দাঁত ওঠে।স্থায়ী দাঁত দুধ দাঁতের চেয়ে মোটা এবং বড় হয়ে থাকে। সুতরাং কোন  গরুর যদি এ এরূপ দাঁত দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে সেই গরুর বয়স এক বছর। আর যদি সামনের পাশে আরও দুইটি তার দেখা যায় তাহলে সেটাকে বয়স আড়াই বছর। আর যদি সামনের দাঁতের সংখ্যা ছয়টিতে দাঁড়ায় তাহলে সেই গরুর বয়স তিন বছর।

শিং দেখে বয়স নির্ণয় করার পদ্ধতিঃ
সাধারণত গরুর বয়স যখন দুই থেকে আড়াই বছর হয় তখন একটি গোলাকৃতির দৃষ্টিগোচর হয় এবং প্রতি বছর পর পর একটি করে গোল আকৃতির লিংক বাড়তে থাকে। সেই হিসেবে গরুর বয়স নির্ণয় করা যায়।

জন্ম তারিখ দেখে বয়স নির্ণয় করার পদ্ধতিঃ 
গরুর বয়স নির্ণয় করার সবচেয়ে নিরাপদ এবং নির্ভুল পদ্ধতি হলো জন্ম তারিখ দেখে বয়স নির্ণয় করা।এই পদ্ধতিতে নির্ভুলভাবে গরুর বয়স জানতে পারা যায়।

গরু কুরবানী করার দোয়া - কোরবানির গরু জবাই করার দোয়াঃ উপসংহার

উপরে গরু কুরবানী করার দোয়া, কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া এবং কোরবানির গরুর বয়স সর্বনিম্ন কত হতে হবে বা কিভাবে নির্ধারণ করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি উপরোক্ত আলোচনা টি আপনাদের উপকারে আসবে।

কোরবানি দেওয়ার পূর্বে সঠিক নিয়ম অবশ্যই জন্য প্রয়োজন। কেননা সঠিক নিয়ম ব্যতীত কোরবানি বৈধ হবে না। আর তাই সঠিক নিয়ম জেনে, সঠিক নিয়ম মেনে কোরবানি করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url