OrdinaryITPostAd

খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

 খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। চিরতা হলো এক ধরনের তিতকুটে স্বাদ যুক্ত ভেষজ উদ্ভিদ যা বহুকাল আগে থেকেই  আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সঠিক নিয়ম ও পরিমাণ মত এটি গ্রহণ করলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।

খালি-পেটে-চিরতা-খাওয়ার-উপকারিতা

চিরতা সাধারণত সর্দি-কাশি, জ্বর, হজমের সমস্যা, লিভারের অসুখ এবং ডায়াবেটিস এর মত জটিল সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি সঠিক নিয়ম না জেনে ও পরিমাণ মত গ্রহণ না করেন তাহলে আপনার বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে এখন আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো। চিরতা প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে আসছে। খালি পেটে চিরতা খাওয়ার ফলে দেহের টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও খালি পেটে চিরতা খাওয়ার রয়েছে নানান গুণাগুণ ও উপকারিতা। নিয়মিত খালি পেটে চিরতা খাওয়ার ফলে  হজম শক্তি ও পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। নিয়মিত খালি পেটে চিরতা খাওয়ার ফলে পিত্তরস নিঃসরণে সহায়তা করে, ফলে খাদ্য সহজে হজম হয়। খালি পেটে চিরতা খেলে গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি, পেট ফুলে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা খুব সহজে দূর হয়ে যায়।

যাদের ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস এবং জন্ডিস জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য চিরতা অনেক উপকারে আসতে পারে। কারণ নিয়মিত খালি পেটে চিরতা খাওয়ার ফলে এটি লিভারকে ডিটক্সিফাই করে এবং লিভারের কোষকে সজীব রাখে। এর ফলে ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস এবং জন্ডিস জনিত সমস্যার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও খালি পেটে নিয়মিত এক টানা চিরতা খাওয়ার ফলে  রক্ত বিশুদ্ধ করে ও ত্বকের সমস্যা গুলো দূর করতে সহায়তা করে থাকে। এটি রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ দূর করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে থাকে। এর ফলে ত্বকে ব্রণ, ফুসকুড়ি, চুলকানি বা এলার্জির সমস্যা অনেক অংশে কমে যায়। এছাড়াও খালি পেটে চিরতা খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে,  জ্বর ও সর্দি কাশি কমাতে, কৃমিনাশক হিসেবে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ওজন কমাতেও সাহায্য করে থাকে।

চিরতা খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম

আমরা উপরে এতক্ষণ চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। এখন আমাদের জানা উচিত চিরতা খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম। কেননা আপনি যদি চিরতা খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম না জেনে প্রতিদিন নিয়মিত চিরতা খেয়ে যান তাহলে এর ফলে আপনার শরীরের উপকারিতা না হয়ে ক্ষতিও হতে পারে। তাই আপনি যদি চিরতার সকল উপকারিতা পেতে চান তাহলে চিরতা খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম সম্পর্কে জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। তাই এখন আমরা সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করবো কখন চিরতা খেতে হবে এবং চিরতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

  • সকালে খালি পেটেঃ আপনি যদি চিরতার সকল উপকারিতা পেতে চান তাহলে সকালে খালি পেটে চিরতা খাওয়া হতে পারে আপনার জন্য সেরা সিদ্ধান্ত। কেননা এই সময় আমাদের পেট খালি থাকে এর ফলে চিরতার সকল উপাদানগুলো সরাসরি শরীরের ভেতরে কাজ করতে পারে।
  • সকালে খাওয়ার ৩০ মিনিট পরঃ অনেকে সকালে খালি পেটে চিরতা খেতে পারেন না। অনেকের পেট ব্যথা, মাথা ঘুরানো, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাদের জন্য চিরতা খাওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে সকালে নাস্তা করার ৩০ মিনিট পর চিরতা খাওয়া। এর ফলে এই ধরনের সমস্যা হবে না এবং পেটের এসিডিটির সমস্যা দূর করার পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে খুব ভালো কাজ করে থাকে।
এতক্ষণ আমরা চিরতা খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে আলোচনা করেছি এখন আমরা জানবো চিরতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম। সাধারণত চিরতা দুইভাবে খাওয়া যায়। একটি হচ্ছে  চিরতার গুঁড়ো এবং অপরটি হচ্ছে চিরতার পানি। চিরতার পানি বানানোর নিয়ম হচ্ছে রাতে এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ চিরতার গুঁড়ো ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং সকালে এই পানি ভালোভাবে ছেঁকে নিয়ে পান করতে হবে। আর চিরতার গুঁড়ো খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানিতে এক থেকে দুই চা চামচ চিরতার গুঁড়ো মিশিয়ে পান করতে হবে। আপনি এই ক্ষেত্রে স্বাদ বাড়ানোর জন্য মধু অথবা লেবু যোগ করতে পারেন। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এই ভাবে এক থেকে দুই মাস নিয়মিত চিরতা সেবন করতে হবে। সাধারণত ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই ফলাফল লক্ষ্য করা যায়।

খালি পেটে চিরতা খাওয়ার অপকারিতা

উপরে আমরা শুধু চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি কিন্তু চিরতা খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি রয়েছে অনেক অপকারিতা। এখন আমরা খালি পেটে চিরতা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো। চিরতা তিতা প্রকৃতির হওয়ার কারণে এটি খাওয়ার ফলে অনেকের বমি বমি ভাব হতে পারে। বিশেষ করে যাদের পাকস্থলী সংবেদনশীল তাদের জন্য এটি সেবনের ফলে পেট ব্যথা ও সাথে সাথে বমি হয়ে যাতে পারে। আবার যাদের পাকস্থলী দুর্বল বা আগে থেকেই আলসার বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা যদি খালি পেটে চিরতা সেবন করেন তাহলে তাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। আবার আপনি যদি বেশি উপকারের আশায় বেশি করে চিরতা খাওয়া শুরু করেন তাহলে আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি কমে যেতে পারে।
গর্ভবতী নারী ও শিশুর জন্য খালি পেটে চিরতা খাওয়া একদম উচিত নয়। কারণ যদি গর্ভবতী নারীরা খালি পেটে চিরতা সেবন করেন তাহলে এটি গর্ভে সংকোচন সৃষ্টি করতে পারে যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। একইভাবে ছোট শিশুদের জন্যও এটি উপকারের চাইতে শরীরের ক্ষতি করতে পারে।ডায়াবেটিস রোগীরা যদি চিরতার পাশাপাশি ডায়াবেটিসের ওষুধও খান তবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে যেতে পারে। তাই যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ খান তাদের জন্য উচিত হবে চিরতা পরিমাণে কম খাওয়া বা একদম না খাওয়া। এছাড়াও চিরতা যদি আপনি অনেক দীর্ঘদিন যাবত সেবন করতে থাকেন তাহলে আপনার  লিভার ও কিডনির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। পরিশেষে বলা যায় যে চিরতা যেমন শরীরের জন্য উপকারী ঠিক তেমন অপকারী। তাই আমাদের উচিত হবে সঠিক নিয়মে ও পরিমাণ মত চিরতা সেবন করা অথবা একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।

চিরতা কি ও আসল চিরতা চেনার উপায়

চিরতা একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। চিরতা হজমশক্তি বাড়ানো, লিভার পরিষ্কার রাখা এবং দেহের বিষাক্ত পদার্থ দূর করার জন্য সব চেয়ে বেশি খাওয়া হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চিরতার মতই দেখতে কিছু উদ্ভিদ বিক্রি করে আসছে। যেগুলো খেলে শরীরের মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে। এখন আমরা চিরকার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও আসল চিরতা চেনার উপায় সম্পর্কে জানবো।

চিরতার সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
বৈশিষ্টবিবরন
বাংলা নামচিরতা
বৈজ্ঞানিক নামSwertia chirata
বৈজ্ঞানিক পরিবারGentianaceae
উদ্ভিদের ধরনবার্ষিক ভেষজ উদ্ভিদ
দৈর্ঘ্য২ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়
স্বাদঅত্যন্ত তিতা
ব্যবহারযোগ্য অংশমূলত গাছের কাণ্ড, পাতা ও শিকড়

আসল চিরতা চেনার উপায়ঃ আসল চিরতার স্বাদ হচ্ছে তীব্র তিতা। আপনি যদি আসল চিরতা অল্প পরিমাণে মুখে নেন তাহলে এর তীব্র তিতা স্বাদ মুখে অনেকক্ষন পর্যন্ত থেকে যাবে। আর নকন চিরতা সাধারণত তিতা হলেও তা অল্প পরিমাণে হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি এর পূর্বে আসল চিরতা না দেখে থাকেন তাহলে আপনার জন্য নকল চিরতা সনাক্ত করা অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে। এছাড়াও আসল চিরতার গন্ধ হালকা ঘাসের গন্ধের মত হয়ে থাকে এবং নকল চিরতার গন্ধ সাধারণত শুকনো খড়ের মত হয়ে থাকে। আসল চিরতার রঙ সাধারণত হালকা বাদামি এবং গাছের কাণ্ডে ছোট ছোট গিট দেখা যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিরতা খাওয়ার নিয়ম

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিরতা অনেক জনপ্রিয় একটি ভেষজ। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ইনসুলিন কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। তবে সঠিক নিয়মে চিরতা না খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসার পরিবর্তে ডায়াবেটিস এর মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে কমে যেতে পারে। তাই এখন আমরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিরতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। প্রথমে ২৫০ মি.লি. পরিমাণ পানিতে এক থেকে দুই চা চামচ চিরতা পাতা রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তবে এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে সেটি হচ্ছে রাতে সর্বোনিম্ন ৮ থেকে ১০ ঘন্টা চিরতা পাতা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর সকালে খালি পেটে এটি পান করতে হবে।
সকালে খালি পেটে চিরতা পান করার ৩০ মিনিট পর সকালের নাস্তা করতে হবে। তাহলে এটি ভালোভাবে কাজ করবে। খালি পেটে পান করার পাশাপাশি আপনি চাইলে চিরতার চা বানিয়েও খেতে পারেন। চিরতা অনেক তিতা হওয়ার কারণে অনেকে খালি পেটে এটি খেতে পারেন না। তাদের জন্য চিরতার চা সব চেয়ে সহজ বিকল্প পদ্ধতি হতে পারে। চিরতার চা বানানোর জন্য প্রথমে এক কাপ পানিতে ২ থেকে ৩ চা চামচ চিরতা দিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। এর পর এই পানীয় পান করতে হবে। তবে বলে রাখা ভালো এই চা দিনে একবার এবং সর্বোচ্চ দুই বার খেতে পারবেন। এর বেশি পান করলে আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা অনেক কমে যেতে পারে।

লিভার পরিষ্কার রাখতে চিরতার কার্যকারিতা

চিরতা লিভার পরিষ্কার বা ডিটক্সিফিকেশনে একাধিক দিক থেকে সহায়তা করে থাকে। আমাদের শরীরের লিভার হলো প্রাকৃতিক ফিল্টার যা প্রতিনিয়ত রক্ত পরিশোধন করে এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর করে থাকে। তবে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, বেশি ওষুধ সেবন, অতিরিক্ত চিনি বা তেলযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে লিভার তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারাতে পারে। ঠিক তখনই প্রাকৃতিক উপায়ে লিভার পরিষ্কারের জন্য চিরতা হতে পারে একটি কার্যকর সমাধান। চিরতার মূল উপাদান হলো সুইয়ারিন ও আমারোগেন্টিন যা লিভারের এনজাইম কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। এটি লিভারে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি ও বিষাক্ত টক্সিন পরিষ্কার করতে সাহায্য করে থাকে। 
খালি-পেটে-চিরতা-খাওয়ার-উপকারিতা
নিয়মিত চিরতা সেবনে লিভারের ফাংশন উন্নত হয়, হজম শক্তি বাড়ে এবং শরীরে পিত্তরসের ভারসাম্য বজায় থাকে। এতে করে লিভার সুস্থ থাকে ও বিভিন্ন লিভার সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। চিরতা খেলে লিভারে ইনফ্ল্যামেশন কমে এবং ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হ্রাস পায়। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ফলে ফ্রি র‍্যাডিকেলের মত সমস্যা থেকে লিভার কোষগুলো রক্ষা পায়। এছাড়াও এটি হেপাটোপ্রোটেকটিভ প্রভাব রাখে বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। তবে লিভার পরিষ্কারে চিরতা ব্যবহার করতে হলে সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে। সাধারণত ১ গ্লাস পানিতে ১ থেকে ২ চা চামচ চিরতা এক রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করা সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। 

ত্বকের সমস্যা দূর করতে চিরতার উপকারিতা

ত্বকের সমস্যা দূর করতে চিরতার রয়েছে অনেক উপকারিতা। আমাদের অনেকের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান করার জন্য অনেকে বাজার থেকে অনেক দামি দামি ফেসওয়াশ ও ক্রিম ব্যবহার করছে। যেগুলো ব্যবহারের ফলে হয়ত সাময়িক ফল পাওয়া গেলেও যখন এই পণ্য গুলো ব্যবহার করা ছেড়ে দেয় তখন আবার একই সমস্যা দেখা দেয় অথবা আগের তুলনায় আরো বেশি সমস্যা দেখা দেয়। মূলত ত্বকের সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য ত্বকের বাহিরের অংশ পরিচর্যা করার আগে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার করা উচিত। ত্বক ভেতর থেকে সুস্থ হলে তবেই এই সমস্যা গুলো থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আর ত্বক ভেতর থেকে সুস্থ করতে চিরতার ভূমিকা অনেক। এখন আমরা ত্বকের সমস্যা দূর করতে চিরতার উপকারিতা সম্পর্কে জানবো।

  • চিরতা প্রাকৃতিকভাবে রক্ত পরিশোধন করতে সাহায্য করে যা ব্রণ, ফুসকুড়ি, চুলকানি ও অন্যান্য চর্মরোগ দূর করতে কার্যকর।
  • চিরতার অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি গুণাগুণ ত্বকে ফুসকুড়ি ও এলার্জি প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
  • চিরতা খাওয়ার ফলে লিভার পরিষ্কার থাকে এবং শরীরের অতিরিক্ত তাপ দূর হয় যার ফলে ব্রণের প্রবণতা কমে যায়।
  • চিরতাতে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান যা ত্বকে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
  • নিয়মিত চিরতা খেলে ভেতর থেকে দেহ পরিষ্কার হয় যা ত্বকে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে চিরতা খাওয়ার নিয়ম

চিরতা শুধুমাত্র ডায়াবেটিস, লিভার পরিষ্কার ও ত্বকের সমস্যা সমাধানের জন্য নয় বরং হজম শক্তি বাড়াতেও একটি জনপ্রিয় ভেষজ উপাদান হিসেবে পরিচিত। এটি লিভার পরিষ্কার করে পিত্ত রসের নিঃসরণ বাড়ায় এবং অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা উন্নত করে ফলে খাবার সহজে হজম হয়। তবে চিরতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম না জানলে হজমের উপকারের পরিবর্তে গ্যাস্ট্রিক মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এখন আমরা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে চিরতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।প্রথমে ১ গ্লাস প্রায় ২৫০ মি.লি. পরিমাণ পানিতে ১ থেকে ২ চা চামচ চিরতা কুচি বা পাতা নিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সর্বনিম্ন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে চিরতার কার্যকর উপাদান পানিতে মিশে যায়। এরপর সকালে খালি পেটে সেই পানি ছেঁকে পান করতে হবে। 
এটি পেটে জমে থাকা গ্যাস এবং অ্যাসিড দূর করতে সহায়তা করে থাকে। খালি পেটে চিরতা পানি পান করার অন্তত ৩০ মিনিট পর হালকা নাস্তা করা উচিত। এতে করে চিরতা ভালোভাবে কাজ করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে যাদের তিতা খেতে সমস্যা হয় তারা চাইলে চিরতার চা বানিয়ে খেতে পারেন। চিরতার চা বানানোর জন্য এক কাপ পানিতে দুই চা চামচ চিরতা মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর এই চা ছেঁকে সরাসরি অথবা স্বাদ বাড়ানোর জন্য লেবু অথবা মধু যোগ করতে পারেন। তবে  অতিরিক্ত পরিমাণে চিরতা খেলে হজমের উন্নতির বদলে গ্যাস্ট্রিক বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চিরতা সবসময় নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে।

কাদের চিরতা খাওয়া একদম উচিত নয়

আমরা ইতিমধ্যে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। চিরতা একটি ভেষজ হলেও এটি সকলের খাওয়া উচিত নয়। এখন আমরা কিছু বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানবো যেগুলোর কোন একটি যদি কারো মধ্যে থেকে থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির চিরতা খাওয়া একদম উচিত নয়। নিচে যে বৈশিষ্ট গুলো দেওয়া হবে সেগুলো ছাড়াও বিশেষ কিছু ব্যক্তি এবং রোগাবস্থায় চিরতা খাওয়া উচিত হবে না। 
খালি-পেটে-চিরতা-খাওয়ার-উপকারিতা
  • গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের চিরতা খাওয়া উচিত নয়।
  • ৮ বছরের নিচের শিশুদের চিরতা খাওয়া উচিত নয়।
  • নিম্ন রক্তচাপ যাদের রয়েছে তাদের চিরতা খাওয়া উচিত নয়।
  • গ্যাস্ট্রিক ও আলসার রোগে ভোগা ব্যক্তির চিরতা খাওয়া উচিত নয়।
  • যারা ইনসুলিন বা বিভিন্ন ওষুধ খাচ্ছেন তাদের চিরতা খাওয়া উচিত নয়।
  • লিভার বা কিডনির সমস্যা যাদের আছে তাদের চিরতা খাওয়া উচিত নয়।
  • অ্যালার্জি জাতীয় সমস্যা যাদের আছে তাদের চিরতা খাওয়া উচিত নয়।

পরিশেষেঃ খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা উপরে এতক্ষণ বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা শুধু উপরে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করিনি বরং চিরতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সময় থেকে শুরু করে কাদের চিরতা খাওয়া উচিত নয় এবং চিরতা খাওয়ার কিছু অপকারিতা সম্পর্কেও আলোচনা করেছি। এছাড়াও অনেকে চিরতা কি এবং আসল চিরতা কেমন দেখতে এই সম্পর্কে জানে না। ঠিক এই কারণে চিরতা কি এবং কিভাবে বুঝবেন এটি আসল চিরতা কিনা এই বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিরতা খাওয়ার নিয়ম থেকে শুরু করে হজম শক্তি বৃদ্ধিতে চিরতা খাওয়ার নিয়ম নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। তাই আশা করা যায় যে আপনি যদি উপরের লিখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা থেকে শুরু করে চিরতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। 250311

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url