ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। মূলত গ্রিন টি তে থাকা ক্যাটেচিন এবং ক্যাফেইন উপাদান দুইটি ওজন কমাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এই উপাদান দুইটি শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে অতিরিক্ত ফ্যাট বার্নিং করে থাকে।
নিয়মিত গ্রিন টি সেবন করলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর পাশাপাশি রক্তে ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ, মেটাবলিজম বাড়ানো, ক্ষুধা দমন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ন কাজ করে থাকে। তবে সঠিক নিয়মে গ্রিন টি পান না করলে উপকারের চাইতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার একটি সম্ভাবনা থাকে।
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
- ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
- গ্রিন টি বানানোর সঠিক নিয়ম
- গ্রিন টি নাকি কফি কোনটি ওজন কমাতে বেশি কার্যকর
- গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময় ও ডায়েট
- খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া ঠিক কি না
- কাদের গ্রিন টি সেবন করা উচিত নয়
- কোন ধরনের গ্রিন টি ওজন কমাতে সবচেয়ে কার্যকর?
- আসল ও নকল গ্রিন টি চেনার সহজ উপায়
- ওজন কমানোর কিছু কার্যকরী ব্যায়াম
- শেষ কথাঃ ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানলে আপনি খুব সহজে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারবেন। অনেকে লোক মুখে শুনেন ঠিকই যে নিয়মিত গ্রিন টি খাওয়ার ফলে ওজন কমে কিন্তু অনেকে গ্রিন টি পান করার সঠিক নিয়ম জানেন না। তাই আজকে আমরা ওজন কমানোর জন্য কিভাবে গ্রিন টি সেবন করতে হয় সে বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক নিয়ম হচ্ছে সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা কিছু নাস্তা করে তারপর গ্রিন টি পান করা। অনেকে এক্ষেত্রে একটি ভুল করে থাকে যে তারা মনে করেন সকালে উঠে খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আসলে একটি সম্পূর্ন একটি ভুল ধারনা। কেননা খালি পেতে গ্রিন টি পান করার ফলে পাকস্থলীর অম্লতা বা অ্যাসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে আয়রন শোষণে বাধা, বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়।
তাই সকালে গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা কিছু খাবার খেয়ে তার ৩০ মিনিট পর গ্রিন টি পান করা। এর ফলে পাকস্থলীর উপর ক্ষতিকর কোন প্রভাব পড়বে না এবং সেই সাথে এটি শরীরকে ডিটক্স করে ও মেটাবলিজম প্রক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। শরীরের মেটাবলিজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বি বার্ন হতে শুরু করে। আপনি যদি নিয়মিত এই গ্রিন টি পান করতে থাকেন এবং সাথে অল্প পরিমাণ করে হলেও শরীর চর্চা করেন তাহলে কম সময়ের মধ্যেই অনেক ওজন কমিয়ে আনতে পারবেন।
আরোও পড়ুনঃ রোজা রেখে রমজান মাসে ওজন কমানোর ০৭ উপায়
এছাড়াও আপনি চাইলে গ্রিন টি খাবারের পরে, ব্যায়ামের আগে, রাতের খাবারের পর গ্রিন টি পান করতে পারেন। এরপর যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে সেটি হচ্ছে গ্রিন টি তে ক্যাফেইন থাকায় অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই দিনে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৩ বারের বেশি গ্রিন টি পান করা উচিত হবে না। ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি এর সাথে সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত পানি পান, চিনি, ফাস্টফুড ও অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা সহ রাতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করলে আশা করা যায় খুব অল্প সময়ে আপনার অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে।
গ্রিন টি বানানোর সঠিক নিয়ম
অনেকে নিয়মিত সঠিক নিয়ম অনুসারে গ্রিন টি পান করার পরেও দেখা যাচ্ছে তাদের ওজন কমছে না বরং শরীরের অন্যান্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এই সমস্যাটি হতে পারে সঠিক নিয়মে গ্রিন টি না বানিয়ে পান করা। অনেকে এক্ষেত্রে ভুল করে থাকেন যে গ্রিন টি এর সাথে স্বাদ বাড়ানোর জন্য চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু মিশিয়ে থাকেন। চিনিতে থাকে অতিরিক্ত পরিমাণ সুক্রোজ যাকে বলা হয় প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট এবং ডাইস্যাকারাইড। এই উপাদান গুলো আমাদের ওজন বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরের অনেক ক্ষতি করে তাই একে বলা হয় হুয়ায়িট পয়জন।
তাই গ্রিন টি বানানোর সময় চিনি বা মধু অথবা মিষ্টি জাতীয় কিছুই দেওয়া যাবে না। কারণ মিষ্টি জাতীয় উপাদান গুলোতে সুক্রোজ থাকার কারণে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে বাঁধা প্রদান করে থাকে।
উপকরনঃ
- ১ চা চামচ গ্রিন টি পাতা অথবা ১টি টি ব্যাগ
- ১ কাপ পানি
- লেবু (এড়িয়ে চলতে পারেন)
গ্রিন টি বানানোর সঠিক নিয়মঃ
- প্রথমে একটি পাতিলে এক কাপ পানি হালকা গরম করে নিতে হবে।
- এরপর একটি কাপে ১ চা চামচ গ্রিন টি পাতা অথবা ১টি টি ব্যাগ রেখে দিতে হবে।
- পানি গরম হয়ে আসলে উক্ত কাপে পানি ঢেলে দিতে হবে।
- কাপে পানি দেওয়ার ২ থেকে ৩ মিনিট পর গ্রিন টি পাতা বা ব্যাগ তুলে ফেলতে হবে।
- স্বাদ বাড়ানোর জন্য লেবু যোগ করতে পারেন।
- তবে চিনি ভুলেও যোগ করা যাবে না।
গ্রিন টি নাকি কফি কোনটি ওজন কমাতে বেশি কার্যকর
গ্রিন টি তে থাকা ক্যাটেচিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। এটি শরীরের চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে থাকে। বিশেষ করে পেটের ফ্যাট কমাতে কার্যকর। দিনে ২ থেকে ৩ কাপ গ্রিন টি খেলে ক্যালোরি বার্নের হার কিছুটা বাড়ে। এটি ক্ষুধা দমন করে অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করে। হালকা ক্যাফেইন থাকার ফলে শরীরে এনার্জি তৈরি করে। এছাড়া গ্রিন টি একটি প্রাকৃতিক ডিটক্স হিসেবেও কাজ করে। যার ফলে গ্রিন টি ওজন কমাতে বেশ কার্যকরি হিসেবে পরিচিত। তবে গ্রিন টি ওজন কমাতে সহায়ক হলেও এটি অনেক ধীর গতিতে ওজন কমিয়ে থাকে।
কফি তে থাকা ক্যাফেইন শরীরের স্নায়ুকে উত্তেজিত করে ও শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি মেটাবলিজম প্রক্রিয়া দ্রুত করে এবং শরীরে ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াকে বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। বিশেষ করে ওয়ার্কআউট বা শরীর চর্চার আগে কফি খেলে কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যায়। কফি ক্ষণিকের জন্য ক্ষুধা কমায় এবং ক্যালোরি গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন ঘুমের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক এবং উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তাই কফি ওজন কমাতে কার্যকর হলেও পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো।
গ্রিন টি এবং কফি দুটোই ওজন কমাতে সহায়ক হলেও এদের কার্যকারিতা ভিন্ন। কফির ফ্যাট বার্নিং ক্ষমতা কিছুটা বেশি হলেও এতে থাকা অতিরিক্ত ক্যাফেইন কিছু মানুষের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অপরদিকে গ্রিন টি ধীরে কাজ করে তবে এটি নিরাপদ ও দীর্ঘমেয়াদী উপকার দেয়। যাদের হালকা ও সহনীয় পানীয় দরকার তাদের জন্য গ্রিন টি উপযুক্ত। আবার দ্রুত এনার্জি ও ওজন কমাতে চান তাদের জন্য কফি ভালো হতে পারে। সুতরাং আপনার শারীরিক অবস্থা ও সহ্যশক্তা অনুযায়ী নির্বাচন করা উচিত ওজন কমানোর জন্য কফি নাকি গ্রিন টি কোনটি আপনার জন্য ভালো হবে। তবে কফির চাইতে গ্রিন টি সেবনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কম থাকায় ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি পান করা ভালো একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে।
গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময় ও ডায়েট
গ্রিন টি খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় মেনে চললে ওজন কমানোর ফল আরও ভালো হয়। সকালে নাস্তার ৩০ মিনিট পর এক কাপ গ্রিন টি খেলে এটি মেটাবলিজম বাড়ায়। দুপুরে খাবারের আগে বা পরে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট বিরতিতে খেলে হজমে সাহায্য করে। ব্যায়ামের ৩০ মিনিট আগে গ্রিন টি খেলে ফ্যাট বার্ন বাড়ে। রাতে ঘুমানোর আগে না খাওয়াই ভালো কারণ এতে থাকা ক্যাফেইন ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপের বেশি না খাওয়াই উত্তম।
আরোও পড়ুনঃ দ্রুত ওজন কমাতে নিমপাতা যেভাবে খাবেন
ওজন কমাতে শুধু গ্রিন টি খেলে হবে না এর সঙ্গে দরকার সুষম ডায়েট। বেশি প্রোটিন ও কম কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। ভাজা, তেলযুক্ত ও মিষ্টিজাত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে। সবুজ শাকসবজি, ফলমূল ও হালকা স্ন্যাকস খাবারের তালিকায় রাখা দরকার। গ্রিন টি ও স্বাস্থ্যকর ডায়েট একসঙ্গে চালালে ফল দ্রুত দেখা যায়।
গ্রিন টি খাওয়ার সময়সূচি চার্ট
সময় | করনীয় | উপকারিতা |
---|---|---|
সকাল ৮টা–৯টা | হালকা নাস্তার ৩০ মিনিট পর ১ কাপ গ্রিন টি | মেটাবলিজম শুরু করতে সাহায্য করে |
দুপুর ১টা–১ঃ৩০ | খাবারের ৩০ মিনিট আগে ১ কাপ গ্রিন টি | ক্ষুধা কিছুটা কমায়, কম খেতে সাহায্য করে |
দুপুর ১টা–১ঃ৩০ | ব্যায়ামের ৩০ মিনিট আগে ১ কাপ গ্রিন টি | ফ্যাট বার্নিং ক্ষমতা বাড়ায় |
রাত ৮টা–৯টা | ঘুমের ২ ঘণ্টা আগে ১ কাপ গ্রিন টি | হজম প্রক্রিয়াতে সাহায্য করে থাক |
ওজন কমানোর কার্যকরী ডায়েট চার্ট
সময় | খাবার | পরামর্শ |
---|---|---|
সকাল | ওটস, ১টি ডিম সেদ্ধ, ১টি কলা | বেশি ফাইবার ও প্রোটিন যুক্ত খাবার |
দুপুর | ব্রাউন রাইস, সেদ্ধ সবজি, চিকেন/ডাল | কম ক্যালোরি ও হালকা প্রোটিনযুক্ত খাবার |
বিকেল | ১ কাপ গ্রিন টি + বাদাম/ফল | হালকা স্ন্যাকস |
রাত | স্যুপ/সালাদ + ১ স্লাইস ব্রাউন ব্রেড | হজম সহজ হয় এমন খাবার |
সারাদিন | ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি | শরীর ডিটক্স ও হাইড্রেশন বজায় রাখে |
খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া ঠিক কি না
অনেকে ওজন কমাতে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে গ্রিন টি পান করে থাকেন কিন্তু এটি সবার জন্য উপকারী নাও হতে পারে। খালি পেটে গ্রিন টি খেলে গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি ও পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে। এতে থাকা ট্যানিন উপাদান পাকস্থলীর দেয়ালে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা পেটের অস্বস্তি দেখা দেয়। তাই বিশেষ করে সংবেদনশীল পেটের মানুষদের ক্ষেত্রে এটি ঝুঁকিপূর্ণ।
গ্রিন টি খেতে চাইলে সকালে হালকা নাস্তার অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর খাওয়া উত্তম। এতে শরীর ভালোভাবে গ্রহণ করে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। আপনি চাইলে ১টি বিস্কুট বা কলা খেয়ে তারপর গ্রিন টি পান করতে পারেন। এতে শরীর ডিটক্সিফাই হয় এবং মেটাবলিজম সঠিকভাবে সক্রিয় হয়। দিন শুরু হয় সতেজভাবে এবং হজমেও সহায়তা করে। সব মিলিয়ে খালি পেটে নয় বরং হালকা খাবারের পর গ্রিন টি খাওয়াই স্বাস্থ্যকর।
কাদের গ্রিন টি সেবন করা উচিত নয়
কাদের গ্রিন টি সেবন করা উচিত নয় এই বিষয় নিয়ে এখন আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করবো। সবার আগে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের গ্রিন টি সেবনে সতর্ক থাকা উচিত। গ্রিন টিতে থাকা ট্যানিন এসিড পেটে অ্যাসিড বাড়িয়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে বমি বমি ভাব, বুক জ্বালা বা অম্বলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তাদেরও গ্রিন টি এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ এতে থাকা ক্যাফেইন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। রাতে গ্রিন টি না খাওয়াই উত্তম।
এছাড়াও গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের গ্রিন টি খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গ্রিন টি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে শরীর থেকে আয়রন শোষণ কমে যেতে পারে যা গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর হতে পারে। যাদের রক্তচাপ কম থাকে তাদের ক্ষেত্রেও গ্রিন টি ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ এটি রক্তচাপ আরও কমিয়ে দিতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীরা গ্রিন টি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু ওষুধের সঙ্গে গ্রিন টি পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। তাই যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে গ্রিন টি সেবনের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কোন ধরনের গ্রিন টি ওজন কমাতে সবচেয়ে কার্যকর?
ওজন কমাতে গ্রিন টি-এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর হলো ম্যাচা গ্রিন টি। এই চা সাধারণ গ্রিন টি থেকে ভিন্ন কারণ এটি পুরো চা পাতার গুঁড়ো দিয়ে তৈরি হয়। এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ক্যাটেচিন বিশেষ করে EGCG, যা শরীরের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। ম্যাচা শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে ক্যালরি বার্নের হার বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা শরীরকে ডিটক্স করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন নিয়ম করে ম্যাচা খাওয়া ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।
আরোও পড়ুনঃ সবরি কলার ১০ উপকারিতা - কলা খাওয়ার নিয়ম
ম্যাচা গ্রিন টি তে ক্যাফেইন এবং L Theanine একসাথে কাজ করে শরীর ও মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি কর্মক্ষমতা বাড়ায় ও ব্যায়ামের সময় এনার্জি দেয়। ফলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া আরোও দ্রুত হয়। যেহেতু এটি মনোযোগ বাড়ায় তাই মানসিক চাপ কমিয়ে খাওয়া নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। সাধারণ গ্রিন টি তে শুধুমাত্র চায়ের রস পান করা হয় কিন্তু ম্যাচায় সম্পূর্ণ পাতার গুঁড়ো গ্রহণ করা হয়। এজন্য এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি থাকে। তবে দিনে ১ থেকে ২ কাপের বেশি খওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত খেলে ক্ষতি হতে পারে। স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও ব্যায়ামের সঙ্গে মিলিয়ে ম্যাচা সেবন করলে তা ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করে থাকে।
আসল ও নকল গ্রিন টি চেনার সহজ উপায়
আসল ও নকল গ্রিন টি চেনার সহজ উপায় নিয়ে নিচে একটি টেবিল দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় যে নিচে দেওয়া টেবিলের তথ্য থেকে আপনি খুব সহজে আসল ও নকল গ্রিন টি সনাক্ত করতে পারবেন।
যাচাই | আসল গ্রিন টি | নকল গ্রিন টি |
---|---|---|
রং | হালকা ঝকঝকে প্রাকৃতিক সবুজ | অনেক সময় ঘন সবুজ বা বাদামি হয়ে থাকে |
ঘ্রাণ | হালকা ও মাটির ঘ্রাণযুক্ত | কৃত্রিম পারফিউম বা তীব্র গন্ধ থাকতে পারে |
স্বাদ | হালকা তেতো ও সতেজ | অতিরিক্ত তেতো, ঝাঁঝালো বা কৃত্রিম স্বাদযুক্ত |
পাতা | পাতাগুলো অসমান, ঘূর্ণানো ও শুকনা থাকে | পাতাগুলো ভাঙা, গুঁড়ো ও ধুলাবালিময় হতে পারে |
পানিতে ফেলা হলে | ধীরে ধীরে রঙ ছড়ায় ও পাতাগুলো ফেঁপে উঠে | সাথে সাথে গাঢ় রং ছেড়ে দেয়, পাতায় ফেনা হতে পারে |
প্যাকেটের তথ্য | পরিষ্কার ব্র্যান্ড, উৎপাদন ও মেয়াদ উল্লেখ থাকে | ব্র্যান্ড স্পষ্ট নয় বা কোনো তথ্য অনুপস্থিত থাকতে পারে |
ওজন কমানোর কিছু কার্যকরী ব্যায়াম
বসে থেকে শুধু গ্রিন টি পান করলেই ওজন কমবে না বরং করতে হবে কিছু ব্যায়াম ও শরীর চর্চা। তবে এটি সত্য যে গ্রিন টি পান করলে ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে কিন্তু আপনি যখন গ্রিন টি পান করার পাশাপাশি একটি প্রপার ডায়েট ও ব্যায়াম করবেন তখন আপনার ওজন আরোও দ্রুত কমতে শুরু করবে। এখন আমরা নিচে কিছু ওজন কমানোর ব্যায়াম এর নাম তুলে ধরলাম আপনি চাইলে এই ব্যায়াম গুলো ওজন কমানোর করতে পারেন।
- জগিং
- স্কিপিং/দড়ি লাফ
- বার্পি
- স্কোয়াট
- প্ল্যাঙ্ক
- লাংগেস
- মাউন্টেন ক্লাইম্বার
- বাইসাইকেল ক্রাঞ্চ
- হাই নিস
- পুশ আপস
শেষ কথাঃ ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সঠিক নিয়মে গ্রিন টি পান করলে আসলেই ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু আমরা অনেকে সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি না জানার কারণে গ্রিনটি পান করি ঠিকই কিন্তু কোন উপকার হয়না। ঠিক এই কারণে আমরা উপরে কিভাবে গ্রিন টি পান করলে ওজন কমে ও স্বাস্থ্য ঠিক থাকে এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা আশা করি যে উপরের লিখা গুলো সম্পূর্ন বিস্তারিত পড়লে ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না। 250311
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url