OrdinaryITPostAd

১২ মাসের প্রতিদিনের তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি ২০২৪

৩৬৫ দিনের তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচিতাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি ২০২৪ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? ৫ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা তাহাজ্জুদের সময় কোনটি ও তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানবো।

তাহাজ্জুদ-নামাজের-ওয়াক্ত-শেষ-কখন

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। তবে পুরুষ-মহিলা আমাদের সকলের উচিত দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজের পাশা-পাশি নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা। চলুন তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল সে সম্পর্কে জেনে নেই। 

পেইজ সূচিপত্রঃ তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি ২০২৪

বিভাগ ভিত্তিক তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

বিভাগ ভিত্তিক তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সম্পর্কে চলুন দেখে নেই। তাহাজ্জুদ নামাজ নফল ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন এবং সবাইকে এ ব্যাপারে আদেশ করতেন। তবে তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট একটি সময় রয়েছে. এবং এটি বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন সময়ে হয়ে থাকে। নিচে প্রতিটা বিভাগ ভিত্তিক তাহাজ্জুদ নামাজের সময় উল্লেখ করা হলো।

তাহাজ্জুদ-নামাজের-ওয়াক্ত-শেষ-কখন

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি ২০২৪

জানুয়ারি মাসের তাহাজ্জুদসহ ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময় সূচি

বিভাগ-ভিত্তিক-তাহাজ্জুদ-নামাজের-সময়

ফেব্রুয়ারী মাসের তাহাজ্জুদ সহ ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি
বেতের-নামাজের-পর-তাহাজ্জুদ-নামাজ-পড়া-যাবে-কি
মার্চ মাসের তাহাজ্জুদ সহ ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি
বিভাগ-ভিত্তিক-তাহাজ্জুদ-নামাজের-সময়
এপ্রিল মাসের তাহাজ্জুদ সহ ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি
বিভাগ-ভিত্তিক-তাহাজ্জুদ-নামাজের-সময়
মে মাসের তাহাজ্জুদ সহ ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি
বিভাগ-ভিত্তিক-তাহাজ্জুদ-নামাজের-সময়
জুন মাসের তাহাজ্জুদ সহ ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি
বিভাগ-ভিত্তিক-তাহাজ্জুদ-নামাজের-সময়
জুলাই মাসের তাহাজ্জুদ সহ ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি
বেতের-নামাজের-পর-তাহাজ্জুদ-নামাজ-পড়া-যাবে-কি
আগষ্ট মাসের তাহাজ্জুদ সহ ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি
তাহাজ্জুদ-নামাজের-ওয়াক্ত-শেষ-কখন
সেপ্টেম্বর মাসের তাহাজ্জুদ সহ ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি
বিভাগ-ভিত্তিক-তাহাজ্জুদ-নামাজের-সময়
অক্টোবর মাসের তাহাজ্জুদ সহ ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি
বেতের-নামাজের-পর-তাহাজ্জুদ-নামাজ-পড়া-যাবে-কি
নভেম্বর মাসের তাহাজ্জুদ সহ ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি
তাহাজ্জুদের-সময়-কোনটি
ডিসেম্বর মাসের তাহাজ্জুদ সহ ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি
বেতের-নামাজের-পর-তাহাজ্জুদ-নামাজ-পড়া-যাবে-কি

তাহাজ্জুদের সময় কোনটি?

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত যে অভ্যাসগুলো ছিল তার মধ্যে অন্যতম একটি অভ্যাস হচ্ছে নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ সঠিক সময় আদায় করা। তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনেও বিভিন্ন আয়াত রয়েছে। তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে আল্লাহতালা বলেনঃ " এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, ইহা তোমার একটি অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে(মাকামে মাহমুদে)।" আল কোরআন, সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত নংঃ ৭৯। 

কুরআনে স্পষ্ট রয়েছে রাত্রি কিছু অংশে অর্থাৎ তাজুদের নামাজ অবশ্যই রাতে আদায় করতে হবে।রাতের শেষভাগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সবচেয়ে উত্তম সময়। তবে যদি আশংকা থাকে যে আপনি রাতের শেষভাগে জাগ্রত হতে পারবেন না তাহলে এশার সালাতের পরে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার সুযোগ রয়েছে। 

তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে একটি হাদিস রয়েছে হাদিসটি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন প্রতিদিন রাতের শেষ রাতে আল্লাহতালা দুনিয়ার আসমানে আগমন করেন, এরপর বলেন কে আছো তোমরা আমার কাছে দোয়া করবে আমি তার দোয়া কবুল করবো? কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর তা আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো? কে আছো আমার কাছে কোন কিছু চাইবে আমি তাকে তা দিব?- মুসনাত আহমাদ হাদিস নংঃ ১৪/৪৬

আরও পড়ুনঃ আজকের তাহাজ্জুদ নামাজের সময় - নিয়মসহ

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোজা হলো সিয়ামে দাউদ তিনি একদিনও রোজা রাখতেন আর একদিন রোজা রাখতেন না সেই রাতের অর্ধেক ঘুমাতেন এবং এক-তৃতীয়াংশ নামাজ আদায় করতেন এরপর ষষ্ঠ অংশ আবার ঘুমাতেন।

উপরের কোরআন এর আয়াত এবং হাদিস দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজের উত্তম সময় রাতের শেষ অংশে।

তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত শেষ কখন?

আল্লাহতালার কাছে যে সকল আমলগুলো সবচেয়ে প্রিয় তার মধ্যে অন্যতম হলো তাহাজ্জুদ এর নামাজ। তবে তাহাজ্জুদ এর নামাজ এর নির্দেশের সময় রয়েছে এই সময়ে এটি আদায় করলে এর ফজিলত পাওয়া যাবে। তাহাজ্জুদ নামাজ এর ওয়াক্ত শুরু হয় মূলত এশার সালাতের পর থেকে এবং তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয় রাতের শেষ ভাগ অর্থাৎ ফজর এর সালাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত। 

নামাজ অবশ্যই ওয়াক্ত অনুযায়ী সঠিক সময়ে আদায় করা উচিত। এশার সালাত শেষ হওয়ার পরে খাওয়া-দাওয়া ব্যাতিত অন্য কোন কাজ না করে ঘুমিয়ে যাওয়া যাতে করে রাতের শেষভাগে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা যায় এবং তাহাজ্জুদের নামাজ অবশ্যই ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগেই শেষ করা উচিত।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল ছিল তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। তাহাজ্জুদ নামাজ মূলত নফল ইবাদত হিসাবে আদায় করা হয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাজ ২ রাকাত করে করে আদায় করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কোনদিন ৪ রাকাত, কোন কোন দিন ৮ রাকাত এবং সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পর্যন্ত তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতেন। হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ" যে ব্যক্তি এশার সালাত শেষ করে দুইবার রাকাত সালাত আদায় করে নেয়, সেই ব্যক্তি তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলতের অধিকারী।"

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দিষ্ট কোন সূরা নেই। পবিত্র কোরআনের যে কোন সূরা তেলাওয়াত করার মাধ্যমে এই নামাজ আদায় করা যায়। তবে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় লম্বা সুরা কেরাতের মাধ্যমে এই নামাজ আদায় করে থাকতেন। শুধু সূরা তেলাওয়াতই নয় নামাজের মধ্যে রুকু সিজদা সহ সকল বিষয়গুলো ধীর স্থির এবং অনেক সময় নিয়ে আদায় করতেন। তাহাজ্জুদ নামাজে আপনি তেলাওয়াত জোরে কিংবা আস্তে পড়ার অনুমতি রয়েছে। তবে উচিত হবে নিচু স্বরে এই নামাজ আদায় করা যাতে করে আপনার ঘরে বা আশেপাশে অবস্থানরত কারো অসুবিধার কারণ না হয়। 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম যে কোন নফল নামাজের মতই। অর্থাৎ প্রথমে আপনাকে তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে নামাজের নিয়ত করতে হবে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী ছানা পড়তে হবে এবং সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত করতে হবে। সূরা ফাতেহা তেলাওয়াত করা হলে তার সাথে মিলিয়ে পবিত্র কোরআন থেকে যে কোন সূরা তেলাওয়াত করতে হবে তবে অবশ্যই বড় সূরা তেলাওয়াত করা অধিক উত্তম। এরপর স্বাভাবিক অন্যান্য নামাজের মতই হতে হবে এবং সেজদা গুলো আদায় করতে হবে এইভাবে দুই রাকাত করে করে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে হয় এবং সালাম ফিরে নামাজ শেষ করতে হয়।

আপনি যদি এশার সালাত আদায় করার পরে বেতের সালাত আদায় করে থাকেন সেক্ষেত্রে তাহাজ্জুদ নামাজ শেষে বেতের নামাজ পড়ার প্রয়োজন নেই। তবে যদি আপনি এশার সালাত পড়ে বেতের না পড়ে থাকেন তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে বেতরের নামাজ আদায় করে নিতে হবে।

রাত ১২ টার পর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যাবে কি?

তাহাজ্জত নামাজের সময় শুরু হয় এশার নামাজের পর হতে এবং শেষ হয় ফজরের সালাত এর ওয়াক্তের আগে। তবে রাসুল সাঃ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন রাতের শেষ তৃতীয় অংশে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর। আর হাদিসে এটা বর্ণনা বর্ণিত রয়েছে যে রাসুল সাঃ বিনা কারণে রাত জাগতে নিষেধ করেছেন। 

তাই আপনার উচিত হবে অবশ্যই এশার সালাত আদায় করার পরে দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়া এবং ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। কিন্তু যদি আপনার সন্দেহ হয় যে আপনি ঘুম থেকে উঠতে পারবেন না বা ঘুম থেকে উঠে সালাত আদায় করা সম্ভব হবে না সে ক্ষেত্রে রাত ১২ টার পর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যাবে। তবে উত্তম হলো রাসুল সাঃ এর সুন্নত অনুসরণ করা।

বেতের নামাজের পর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যাবে কি?

প্রতিটা আমলের উদ্দেশ্যে একটি সীমারেখা রয়েছে তাহাজ্জুদ নামাজ তার বাহিরে নয় প্রতিটা এবাদত তার নির্দিষ্ট সময়ে করা উত্তম তাই আপনাকে অবশ্যই তাহাজ্জুদ নামাজ এর নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা উত্তম হবে. তবে বিশেষ কারণবশত অর্থাৎ যদি আপনি তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ঘুম থেকে জাগ্রত হতে পারবেন না বলে মনে হয় তাহলে বেতরের নামাজের পর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে নিতে পারবেন।

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য অবশ্যই কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে তবে সেটি পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্যই একই। শুধুমাত্র মহিলাদের আলাদা ভাবে তাহাজ্জুদ নামাজের কোন নিয়ম নেই। তবে অনেক মহিলাদের মধ্যে এটা নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে যে মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম আলাদা কিন্তু এই কথাটি আদৌ কোন সঠিক উত্তর নয়। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে হবে অর্থাৎ তাহাজ্জুদের যখন ওয়াক্ত শুরু হয় তখন আদায় করা উত্তম এবং তাহাজ্জুদের নিয়ত করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা শুরু করতে হবে। 

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অনেক। নফল ও সুন্নত ইবাদত এর মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ একটি যা আমাদের পরকালে মুক্তি দিবে। তাহাজ্জুদ অর্থ কষ্ট-ক্লেশ, শ্রম-পরিশ্রম। রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে মাঝরাতে সকল সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে ঘুম থেকে উঠে মহান রাব্বুল আলামিনের ডাকে সারা দিয়ে উত্তম পন্থায় যে নামাজ য়াদায় করা হয় তাই তাহাজ্জুদ। আর রাতের  দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ রাত দুইটার পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হয়। 
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘আর রাতের  দুই-তৃতীয়াংশ তোমরা তাহাজ্জুদ আদায় করবে কারণ এটা তোমাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব। অচিরেই তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৯)

এছাড়াও মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘রমজান মাসের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। ঠিক তেমনি ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো গভীর রাতের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৬৩)

মহান আল্লাহ তা'আলা রাতের  দুই-তৃতীয়াংশ প্রথম আসমানে এসে বলেন 'তোমরা কে কোথায় আছো আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো'। 

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল সে সম্পর্কে অনেকে জানতে চান। আজ আমরা তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল সে সম্পর্কে জানবো। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৫ ওয়াক্ত ফরয নামাজের পাশাপাশি প্রতি রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। তাই তাহাজ্জুদের নামাজ সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা বা নফল। তাহাজ্জুদের নামাজ ৮ রাকাত পড়া উত্তম। কিন্তু আপনি চাইলে যত ইচ্ছা তত রাকাত পড়তে পারবেন। তবে বিভিন্ন হাদিস থেকে এসেছে প্রিয় নবী (সাঃ) তাহাজ্জুদের নামাজ ৪, ৬, ৮ ও ১০ রাকাত পড়তেন। 
বেতের-নামাজের-পর-তাহাজ্জুদ-নামাজ-পড়া-যাবে-কি
আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান বলেছেন, তিনি হযরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, রমজান মাসে মহানবীর নামাজ কেমন হত? তিনি উত্তরে জানান, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রমজানে এবং রমজানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে ৪ রাকাত পড়তেন, যেটার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও ৪ রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিনি ৩ রাকাত (বিতর) পড়তেন।

(সহিহ বুখারি ১/১৫৪, হাদিস ১১৪৭; সহিহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদিস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮, হাদিস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদিস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদিস ২৪০৭৩}

এছাড়াও আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস থেকে বর্ণিত-

قلت لعائشة : بكم كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر؟ قالت: كان يوتر بأربع وثلاث, وست وثلاث, وثمان وثلاث, وعشر وثلاث, ولم يكن يوتر بأنقص من سبع, ولا بأكثر من ثلاث عشرة.

আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বললামঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সালাত কতটুকু আদায় করতেন? তিনি বললেনঃ তিনি চার ও তিন, ছয় ও তিন, আট ও তিন, দশ ও তিন দিয়ে বিতর করতেন এবং সাতের কম ও তের এর বেশি বিতর করতেন না। -{সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৩, হাদীস ১৩৫৭ (১৩৬২); তহাবী শরীফ ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদীস ২৫১৫৯} সূত্রঃ ourislam24

তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য কি ঘুম শর্ত?

তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য কি ঘুম শর্ত সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান? এখন আমরা আপনাদের তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য কি ঘুম শর্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। চলুন তাহলে তাহাজ্জুদের নামাজে ঘুমের শর্ত সম্পর্কে জেনে নেই। সাধারণত রাতের শেষ তৃতীয়াংশে ও ফজরের নামাজের পূর্বে যে নামাজ পড়ে থাকি তাকেই তাহাজ্জুদের নামাজ বলে। আর মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এই নামাজের জন্য আলাদা গ্রহণযোগ্যতা আছে। তাহাজ্জুদের নামাজে বসে আল্লাহ তায়ালার কাছে আপনি যাই চাইবেন মহান আল্লাহ তায়ালা তাই আপনাকে দান করবেন ইনশাল্লাহ। 

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার উত্তম সময় হচ্ছে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ সময়ে ঘুম থেকে উঠে আদায় করা। কারণ মহান আল্লাহ তা‘আলা 'প্রতি রাতের শেষাংশে – শেষ তৃতীয়াংশে'- নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে আহবান জানাতে থাকেন ‘এমন কেউ কি আছে যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে দেব? আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?” [বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫, মুসলিম হাদীস নং ৭৫৮] 
অনেকেই প্রশ্ন করেন তাহাজ্জুদের নামাজে ঘুমের শর্ত সম্পর্কে। অনেকে মনে করেন তাহাজ্জুদের নামাজ ঘুম থেকে উঠে পড়তে হবে, আবার অনেকে মনে করেন না ঘুমিয়েও পড়া যাবে। এই বিষয়টি নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিমত আছে। সাধারণত তাহাজ্জুদ শব্দটি নিদ্ৰা যাওয়া ও জাগ্রত হওয়া এই পরস্পর বিরোধী দুই অর্থে ব্যবহৃত হয় তাই অনেক মনে করেন তাহাজ্জুদ নামাজ কেবল মাত্র ঘুম থেকে উঠেই আদায় করা উচিত।

কেননা মহান আল্লাহর দেওয়া বড় একটি নিয়ামত ঘুম। রাতের ঘুম কিয়ামুল লাইল ও ফজরের শক্তি সঞ্চয় করে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন ও শেষতৃতীয়াংশে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন আর এটা সুন্নাতী তরিকা। তারপর তিনি প্রয়োজন মনে করলে বিছানায় যেতেন। (সহীহ শামায়েলে তিরমিযী, হাদিস নম্বরঃ ১৯৬ সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪৭৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/২৫৯৩ হাদিসের মানঃ সহিহ)।

আর আপনি রাতে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলে যে পরিমান সওয়াব পাবেন, না ঘুমিয়ে আদায় করলে সে পরিমান সওয়াব পাবেন। তবে রাতের ঘুম শরীরের জন্য ও সারাদিনের শক্তি সঞ্চায়ের জন্য খুবই উপযোগী। 

মহানবী (সাঃ) তাহাজ্জুদের নামাজে কোন দোয়া পড়তেন?

মহানবী (সাঃ) তাহাজ্জুদের নামাজে যে দোয়াটি পড়তেন এখন আমরা সেটা নিয়ে আলোচনা করব।মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে তার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাহাজ্জুদ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যার কারনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার পূর্বে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া আবশ্যক ছিল। মহান আল্লাহ তায়ালার বান্দা ও আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) সারারাত জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন এবং মহান আল্লাহতালার প্রশংসা করতেন। 

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) গভীর রাতে যখন তাহাজ্জুদের নামাজে দাঁড়াতেন তখন নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করতেন। দোয়াটি হলো-

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ، لَكَ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ،
وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ، وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ،
وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ـ أَوْ لاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আংতা কায়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না ওয়া লাকালহামদু। লাকা মুলকুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু আংতা নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়া লাকাল হামদু আংতাল হাক্কু। ওয়া ওয়া’দুকাল হাক্কু। ওয়া লিক্বাউকা হাক্কু। ওয়াল ঝান্নাতু হাক্কু। ওয়ান নারু হাক্কু। ওয়ান নাবিয়্যুনা হাক্কু। ওয়া মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হাক্কু। ওয়াস সাআতু হাক্কু। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু। ওয়াবিকা আমাংতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু। ওয়া ইলাইকা আনাবতু। ওয়া বিকা খাসামতু। ওয়া ইলাইকা হাকামতু। ফাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু। ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লাংতু। আংতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুআখ্খিরু। লা ইলাহা ইল্লা আংতা। লা ইলাহা গাইরুকা।’ (বুখারি)

অর্থ : 'হে আল্লাহ, সকল প্রশংসা আপনার, আপনি আসমান-জমিন ও তাদের মধ্যে যা কিছু আছে তার পালনকর্তা এবং সমস্ত প্রশংসা আপনারই। আসমান ও যমীন এবং তাদের মধ্যে যা আছে তার রাজত্ব আপনারই।

প্রশংসা আপনার, আপনি নভোমন্ডল ও পৃথিবীর আলো, প্রশংসা আপনারই, আপনি সত্য, আপনার প্রতিশ্রুতি সত্য, আপনার সাথে সাক্ষাৎ সত্য, আপনার কথা সত্য, জান্নাত সত্য এবং জাহান্নাম সত্য এবং নবীগণ সত্য, এবং মুহাম্মদ (সাঃ) সত্য এবং কেয়ামত সত্য।

হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি, এবং আমি আপনার উপর ঈমান এনেছি এবং আমি আপনার উপর আমার বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আপনাকেই ভরসা করি এবং আপনারই দিকে ফিরে আসি এবং আপনার দিকেই রুজু করলাম, এবং আপনিই বিচারক, অতএব আমার আগের ও পরের সকল প্রকাশ্য ও গোপন পাপের জন্য আমাকে ক্ষমা করুন। আপনিই শুরু এবং আপনিই শেষ মালিক। আপনি ব্যতিত সত্য কোনো প্রকৃত ইলাহ নেই অথবা আপনি ব্যতিত (ইবাদতের উপযুক্ত) অন্য কেউ নেই'।

তাহাজ্জুদের নামাজ যেমন বান্দার সাথে মহান আল্লাহ তায়ালার গভীর সম্পর্ক তৈরির সেতু। ঠিক তেমনই এই দোয়াও মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে বান্দার আবেগঘন কথপোকথন। 

এছাড়াও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজের পরে কোরআনের নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তেন। দোয়াটি হলো-

رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ - رَبَّنَا إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ - رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلإِيمَانِ أَنْ آمِنُواْ بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأبْرَارِ

উচ্চারণ : রাব্বানা মা খালাক্বতা হাজা বাত্বিলান, সুবহানাকা ফাক্বিনা ‘আজাবান্নার। রাব্বানা ইন্নাকা মাং তুদখিলিন্নারা ফাক্বাদ্ আখঝাইতাহু, ওয়া মা লিজজ্বালিমিনা মিন্ আংছার।

রাব্বানা ইন্নানা সামি’না মুনাদিআই ইউনাদি লিল ইমানি আন আমিনু বিরাব্বিকুম ফাআমান্না; রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফ্‌ফির আন্না সাইয়্যেআতিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মাআ’ল আবরার।’

উপরোক্ত আয়াতের সাথে সুরা আল-ইমরানের শেষ পর্যন্ত পড়তেন। যেটা তাহাজ্জুদের নামাজের পরে পড়া সুন্নাত। (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)

লেখক এর মন্তব্য

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি ২০২৪ সম্পর্কে আমাদের আজকের পোস্টটি সাজানো হয়েছে। আপনারা সকলেই জানেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন তাই তাহাজ্জুদের নামাজকে সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা বা নফল বলা হয়। যা পড়লে সওয়াব পাওয়া যায় কিন্তু না পড়লে গুনাহ নেই। তাই আমাদের সকলের উচিত ৫ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি দৈনিক তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। 20210000

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url