OrdinaryITPostAd

কুরবানীর সকল গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় মাসআলা মাসায়েল

কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল গুলো একজন মুসলিমের জন্য জানা অত্যন্ত জরুরী। কুরবানী হচ্ছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল রয়েছে। এই আর্টিকেলে কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল

ভূমিকাঃ কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল

আমরা যারা ইসলাম ধর্মাবলম্বীর মানুষ রয়েছে সাধারণত তারা জানি আমাদের কাছে কুরবানী কত বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। সাধারণত আল্লাহ তাআলা কুরবানী ওয়াজিব করেছে যাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্পদ রয়েছে তাদের ওপর। প্রতিটি সামর্থ্যবান নারী এবং পুরুষের উপর আল্লাহতালা কোরবানি কে ওয়াজিব করেছেন। কুরবানী করার ক্ষেত্রে কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল জেনে নেওয়া জরুরী।

আরো পড়ুনঃ কোরবানি কার উপর ফরজ - কোরবানি কাদের উপর ফরজ

এ গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে কোরবানির ফাজায়েল ও মাসায়েল pdf, কুরবানীর ইতিহাস ও মাসায়েল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। প্রতিটি মুসলিমের এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা জরুরী। উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনি এখানে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

কোরবানির ফাজায়েল ও মাসায়েল pdf

আমরা আল্লাহতালার নৈকট্য অর্জনের জন্য কুরবানী দিয়ে থাকি। কোরবানি হলো একটি আর্থিক ইবাদাত। কারণ যে সকল নর-নারীর পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্পদ রয়েছে সাধারণত তাদের উপর আল্লাহ তায়ালা কোরবানি ওয়াজিব করেছেন। কোরবানির ফাজায়েল ও মাসায়েল pdf সম্পর্কে জানতে চাইলে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল জানতে পারবেন।

আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট জন্তু জবাই করা। আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়ের কিছু উৎসর্গ করেছিল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হয়েছিল এবং আরেকজন এর গৃহীত হয়নি। সে বলল আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। সে বলল আল্লাহ ধর্মভীরুদের পক্ষ থেকেই গ্রহণ করেন।{সূরা মায়েদাঃ ২৭}

হযরত জায়েদ ইবনে আকরাম রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসুল আল্লাহ সাঃ এ কুরবানী কি? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম আঃ এর সুন্নাত তারা পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। তারা বলেন হে আল্লাহর রাসূল! লোমশ পশুদের পরিবর্তে কি হবে? তিনি বলেন, লোমশ পশুর প্রতি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। {সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩-১৩৬}

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ মদিনাতে দশ বছর অবস্থান করেছেন এবং তিনি প্রতিবছর কোরবানিও করেছেন।{তিরমিজিঃ ৪-১৩৪} হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাঃ বলেছেন, কুরবানীর দিন রক্ত প্রবাহিত করা অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় মানুষের কোন আমল হয় না। কেয়ামতের দিন এর শিং লোম ও পায়ের খুর সব সহ উপস্থিত হবে।

পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায় সুতরাং স্বাচ্ছন্দ হৃদয়ে তোমরা তা করবে। {তিরমিজিঃ ৪-১২৪} তাহলে উপরের হাদিস থেকে বোঝা যায় যে কোরবানির দিন কোরবানি করার চাইতে অন্য কোন নেক আমল নেই। আমরা যারা সামর্থ্যবান রয়েছি তাদের সকলকেই কোরবানির পশু আল্লাহ তায়ালার জন্য কোরবানি করতে হবে।

কুরবানীর সকল গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় মাসায়েল

আমাদের ইসলাম ধর্মের প্রতিটি কাজে সুনির্দিষ্ট একটি নিয়ম বলা রয়েছে। আমাদের সব থেকে বড় শিক্ষক আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সকল বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। মুসলিমদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত কুরবানী কিভাবে করতে হবে কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল রয়েছে।

  • কোরবানির হিসাব পরিমাণ সম্পদ
  • কোরবানির পশু ও বয়স
  • ভাগে কোরবানি দেওয়া
  • কোরবানির পশুর বিধান
  • কোরবানির গোসল হারিয়ে গেলে বিধান

১। কোরবানির নেসাব পরিমাণ সম্পদ - কুরবানির নেসাব হলো হাজাতে আসলিয়া তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও উপার্জনের উপকরণ ইত্যাদি ব্যতিরেকে যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য কিংবা তার মূল্য বা সমমূল্যের সম্পদের মালিক হওয়া। জাকাতের নেসাব যা কুরবানির নেসাবও তা। তবে কুরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে একটু অতিরিক্ত বিষয় রয়েছে।

অত্যাবশ্যকীয় আসবাবপত্র ব্যতীত অন্যান্য অতিরিক্ত আসবাবপত্র, সৌখিন মালপত্র, খোরাকি বাদে অতিরিক্ত জায়গা-জমি, খালিঘর বা ভাড়া ঘর অর্থাৎ যার ভাড়ার ওপর জীবিকা নির্ভরশীল নয় এসব কিছুর মূল্য কুরবানির নেসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। {ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ৫-২৯২}

২। কোরবানির পশু ও বয়স - এমন পশু দ্বারা কুরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে, আর তা হলো ছয় ধরনের পশু। সেগুলো হলো উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দুই বছরের হতে হবে।

ছাগল, ভেড়া, দুম্বা পূর্ণ এক বছরের হতে হবে। তবে যদি ছয় মাস বয়সের ভেড়া বা দুম্বা মোটাতাজায় এক বছরের মতো মনে হয়, তখন তা দিয়েও কুরবানি করা জায়েজ আছে। কিন্তু ছাগল যতই মোটাতাজা হোক, এক বছরের একদিন কম হলেও তা দিয়ে কুরবানি জায়েজ হবে না।

যেমন হজরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, 'তোমরা অবশ্যই মুসিন্না নির্দিষ্ট বয়সের পশু কুরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কুরবানি করতে পার'। {সহিহ মুসলিম: ১৯৬৩}

৩। ভাগে কোরবানি - সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয।

৪। কুরবানির পশুর বিধান - কুরবানির জন্য পশু আগেই নির্ধারণ করতে হবে। নির্ধারিত পশু জবেহর আগে কোনো কাজে ব্যবহার বা তা থেকে কোনো ধরনের উপকার নেওয়া যাবে না। যেমন-দান করা, বিক্রি করা, কৃষিকাজে ব্যবহার করা, দুধ ও পশম বিক্রি করা ইত্যাদি। কুরবানির পশু ছাগল, ভেড়া কিংবা দুম্বা হলে একটিতে এক ভাগ এবং উট, গরু কিংবা মহিষ হলে একটিতে সাত ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে।

আরো পড়ুনঃ ১০টি কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কি জানুন

কুরবানির উদ্দেশ্যে পশু ক্রয়ের পর যদি বাচ্চা হয় বা জবেহ করার পর তার পেট থেকে বাচ্চা পাওয়া যায়। তাহলে সে ক্ষেত্রে হুকুম হলো মায়ের সঙ্গে বাচ্চাটিকেও কুরবানি করে দিতে হবে। তবে ওই বাচ্চার গোশত নিজে খাবে না, বরং দান করবে। আর যদি বাচ্চাটি কুরবানি না করে কোনো গরিব-মিসকিনকে দান করে, তাও জায়েজ রয়েছে। {ফতোয়ায়ে আলমগিরিঃ ৩-৩৫৪)}

৫। কুরবানির পশু হারিয়ে গেলে বিধান - যদি পশুটি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায় বা মারা যায়, আর কুরবানিদাতা যদি বিত্তশালী হয় কিংবা তার ওপর পূর্ব থেকেই কুরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে; তাহলে আরেকটি পশু কুরবানি করা তার ওপর ওয়াজিব হবে। আর যদি সে গরিব হয় কুরবানি ওয়াজিব না থাকে তাহলে তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানি করা ওয়াজিব নয়।

কুরবানির জন্য নতুন পশু ক্রয়ের পরে যদি হারানো পশুটি পাওয়া যায়, তাহলে কুরবানিদাতা গরিব হলে দুটি পশুই কুরবানি করা ওয়াজিব হবে। আর ধনী হলে যে কোনো একটি কুরবানি করলেই তার ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। {বাদায়ে সানায়েঃ ৪-২১৬}

কুরবানীর ইতিহাস ও মাসায়েল

কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা মুসলিম হিসেবে সকলেই কোরবানির ইতিহাস সম্পর্কে জানি। যেহেতু কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত তাই কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল সম্পর্কে জেনে থাকা আমাদের সকলের দায়িত্ব কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম কুরবানি হলো মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদম আঃ এর দুই পুত্রের মাঝে সংঘটিত হওয়া কুরবানি। এখান থেকেই কুরবানির প্রথম প্রচলন শুরু হয়। তবে পবিত্র ইসলামে আমরা হজরত ইবরাহিম আঃ এর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল আঃ এর স্মরণে কুরবানি করে থাকি। কোরবানি হলো আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আঃ এর সুন্নত।

ইবনে মাজাহ শরিফে এসেছে, হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম রাঃ থেকে বর্ণিত, "কতিপয় সাহাবি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাঃ কুরবানি কী? হজরত রাসূলে মকবুল সাঃ বললেন, তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম আঃ এর সুন্নাত।" সাহাবারা বললেন, এতে আমাদের জন্য কী প্রতিদান রয়েছে? রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে।’ {ইবনে মাজাহঃ ৩১২৭}

কুরবানির গুরুত্ব বলতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ইবরাহিম! স্বপ্নে দেওয়া আদেশ তুমি সত্যে পরিণত করেই ছাড়লে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। অবশ্যই এটা ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি এক মহান কুরবানির বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম। {সূরা সাফফাত, আয়াতঃ ১০৪-১০৭}

সূত্রঃ আল-কাউসার

আমাদের শেষ কথাঃ কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল

প্রিয় পাঠক গন আজকের এই আর্টিকেলে কুরবানীর ইতিহাস ও মাসায়েল, কুরবানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল, কোরবানির ফাজায়েল ও মাসায়েল pdf সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের উচিত উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা।

আরো পড়ুনঃ কোন কোন পশু কোরবানি দেওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত

আপনি যদি এই তথ্যগুলো জানতে চান তারা অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন। কারণ আমরা যেহেতু মুসলিম আমাদের জীবনে চলার পথে এর উক্ত বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরী। ২০৭৯১

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url