২০২৫ সালের বাংলাদেশে দুর্গা পূজার ও মহালয়ার সময়
২০২৫ সালের বাংলাদেশে দুর্গা পূজার ও মহালয়ার সময় এক বিশেষ সময় যখন দেশের
বিভিন্ন জায়গায় পূজা উৎসবের উৎসাহ ও আনন্দ সর্বাধিক মাত্রায় পৌঁছে। ২০২৫ সালের
দূর্গা পূজার সন্ধিপূজার সময় ভক্তদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময়টি
দেবী দুর্গার বিশেষ আরাধনার জন্য নির্ধারিত।
দুর্গাপূজা শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব না এটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং ঐতিহ্যগত একটি
উৎসবও। এই সময়ে পূজা মণ্ডপগুলো আলোকসজ্জা, ফুল ও ভক্তিমূলক পরিবেশে ভরে ওঠে।
ভক্তরা প্রার্থনা, মন্ত্রোচ্চারণ এবং নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে যা এই
উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় করে তোলে।
পেজ সূচিপত্রঃ ২০২৫ সালের বাংলাদেশে দুর্গা পূজার ও মহালয়ার সময়
- ২০২৫ সালের বাংলাদেশে দুর্গা পূজার ও মহালয়ার সময়
- দুর্গাপূজার ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
- মহালয়ার সময় ও সন্ধিপূজার বিস্তারিত
- মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপূজার সম্পর্ক
- ২০২৫ সালের দেবীর আগমন ও গমন কাহিনি
- ভক্তদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পূজার নিয়মাবলী
- পূজার সময় বিশেষ খাবার ও মিষ্টি প্রথা
- সন্ধিপূজা ও আরাধনার বিশেষ মুহূর্ত
- পরিবেশবান্ধব পূজা ও সামাজিক দায়িত্ব
- লেখকের মন্তব্য ঃ ২০২৫ সালের বাংলাদেশে দুর্গা পূজার ও মহালয়ার সময়
২০২৫ সালের বাংলাদেশে দুর্গা পূজার ও মহালয়ার সময়
২০২৫ সালের বাংলাদেশে দুর্গা পূজার ও মহালয়ার সময় সনাতন বাঙালির জীবনের
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব। ২০২৫ সালে বাংলাদেশে
দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার যা আশ্বিন মাসের
শুক্লপক্ষের প্রথম দিন অর্থাৎ দেবীপক্ষের প্রতিপদ তিথি। বাংলাদেশের হিন্দু
সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গা পূজা।
২০২৫ সালে দুর্গাপূজা শুরু হবে ২৮ সেপ্টেম্বর মহা ষষ্ঠী থেকে এবং শেষ হবে ২
অক্টোবর বিজয়া দশমী তে। সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার
দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঐচ্ছিক ছুটি এবং ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর
সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর মহা ষষ্ঠীর মাধ্যমে পূজার
আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী যেদিন দেবী দুর্গার পূজা পূর্ণমাত্রায় শুরু
হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী সবচেয়ে প্রধান আরাধনার দিন যেখানে কুমারী পূজা
ও বিশেষ অঞ্জলি অনুষ্ঠিত হয়। ১ অক্টোবর মহানবমী দেবী দুর্গার পূজা সমাপ্তির
প্রস্তুতির দিন। আর ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানিয়ে
মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হবে।
২০২৫ সালের দূর্গা পূজার সন্ধিপূজার সময় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি
পূজার প্রধান মুহূর্ত যেখানে লক্ষ লক্ষ ভক্ত দেবীর পূজায় অংশ নেন।
সন্ধিপূজা হল এমন একটি সময় যখন পূজা মণ্ডপগুলো আলোকসজ্জা, ফুল এবং
ভক্তিমূলক পরিবেশে ভরে ওঠে। ভক্তরা মন্ত্র পাঠ, প্রার্থনা ও সামাজিক
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে যা দুর্গাপূজাকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
অমাবস্যা তিথি অনুসারে মহালয়া ২০ সেপ্টেম্বর রাত ১১:৫৪ মিনিটে শুরু
হয়ে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২:২৩ মিনিটে শেষ হবে। ২০২৫ সালে মহালয়া ২১
সেপ্টেম্বর, রবিবার। দুর্গাপূজা ও মহালয়ার সময় বাংলাদেশে ভক্তি, আনন্দ
এবং ঐতিহ্যের এক অনন্য মিশ্রণ উদযাপিত। এই সময়ে বাঙালি পরিবারগুলো একে
অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে এবং পূজাকে স্মরণীয় করে তোলে।
এই সময় প্রতিটি বাঙালি পরিবার পূজা মণ্ডপে ভক্তি এবং আনন্দের
মিশ্রণে অংশ নিয়ে থাকে।
দুর্গাপূজার ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
দুর্গাপূজা হল বাঙালির অন্যতম প্রাচীন এবং জনপ্রিয় ধর্মীয় উৎসব যা দেবী
দুর্গার আরাধনার জন্য পালিত হয়। পুরাণে বর্ণিত আছে মহিষাসুর নামে একজন
শক্তিশালী অসুর ছিলেন যিনি স্বর্গ এবং পৃথিবীতে দাপট চালাতেন। দেবী দুর্গা,
ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের শক্তি সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছিলেন যাতে তিনি
মহিষাসুরকে পরাস্ত করতে পারেন। দুর্গাপূজা মূলত এই বিজয়ের স্মৃতিতে
উদযাপিত হয়।
বাংলাদেশে দুর্গাপূজা শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পালিত হয়ে আসছে। এটি কেবল
ধর্মীয় উৎসব না বরং বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও অংশ। ১৮ শতকের আগে
দুর্গাপূজা মূলত বাড়িতে, পরিবারের আচার অনুষ্ঠানে পালন করা হতো।
পরবর্তীকালে বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো এবং শহরের মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন
বৃদ্ধি পেয়েছে যেখানে মণ্ডপশিল্প, আলোকসজ্জা, থিম ভিত্তিক প্যান্ডেল আর্ট
এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
দুর্গাপূজা সমাজে ঐক্য ও সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলার ক্ষেত্রও কাজ করে। এই
সময়ে পরিবার, বন্ধু এবং সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে পূজা উদযাপন করে যা
সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঐতিহ্যকে ধারাবাহিকভাবে রক্ষা করে। তাই দুর্গাপূজা
কেবল দেবী দুর্গার আরাধনা না এটি বাংলার ইতিহাস, শিল্প ও সমাজের অঙ্গ এবং
বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
দুর্গাপূজা শিশুদের জন্যও একটি শিক্ষণীয় সময়। তারা ঐতিহ্য, শিল্প এবং
সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয় এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে
শৃঙ্খলা ও ভক্তি শেখে। তাই এটি বাংলাদেশের বাঙালি সমাজের সাংস্কৃতিক, সামাজিক
এবং ঐতিহ্যগত পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশও। এছাড়াও দুর্গাপূজার সময়
বিভিন্ন স্থানীয় খাদ্য ও মিষ্টির প্রচলন রয়েছে যা বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতির
অংশ।
মহালয়ার সময় ও সন্ধিপূজার বিস্তারিত
মহালয়া হিন্দু বাঙালির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন যা দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক
সূচনা হিসেবে ধরা হয়। ২০২৫ সালের বাংলাদেশে মহালয়া অনুষ্ঠিত হবে
সাধারণত আশ্বিন মাসের শেষ সপ্তাহে যা দেবী দুর্গার আগমন ও পিতৃসম্মানের
সঙ্গে সম্পর্কিত। মহালয়ার সকালে ভক্তরা ফল, জল, পত্র-পুষ্প ও অন্যান্য
প্রথাগত সামগ্রী দিয়ে প্রার্থনা করে থাকেন।
সন্ধিপূজা হল দুর্গাপূজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরাধনার মুহূর্ত। সন্ধিপূজা
সাধারণত মহাষষ্ঠী থেকে মহাসপ্তমীর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় যা দেবী দুর্গার
মহিষাসুর বধের বিজয়কে স্মরণ করে। এই সময়ে পূজা মণ্ডপে বিশেষ
মন্ত্রোচ্চারণ, অর্ঘ্য প্রদানের অনুষ্ঠান এবং দীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে
দেবীর আরাধনা করা হয়। সন্ধিপূজা ভক্তদের জন্য আধ্যাত্মিকভাবে সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময়ে দেবীর শক্তি সর্বাধিক উপস্থিত থাকে বলে বিশ্বাস
করা হয়।
বাংলাদেশে সন্ধিপূজার সময় মণ্ডপগুলো আলোকসজ্জা, ফুল এবং ধর্মীয় পরিবেশে
ভরে ওঠে। ভক্তরা প্রার্থনা, মন্ত্রোচ্চারণ এবং আরাধনার মাধ্যমে দেবীর
আশীর্বাদ লাভের জন্য উপস্থিত হন। এছাড়াও সন্ধিপূজা কেবল ধর্মীয় না
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময়ে মানুষ একত্রিত
হয়ে উৎসব উদযাপন করে যা সামাজিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে।
মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপূজার সম্পর্ক
২০২৫ সালের বাংলাদেশে দুর্গা পূজার ও মহালয়ার সময় অনুযায়ী মহালয়ার মধ্য
দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় মহাষষ্ঠী থেকে মহাদশমী
পর্যন্ত চলবে দুর্গোৎসবের মহাধুমধাম। মহালয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি
দিন। এটি মূলত পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনা নির্দেশ করে।
মহালয়ার সকালে পিতৃতর্পণ ও শ্রদ্ধানুষ্ঠানের মাধ্যমে পূর্বপুরুষদের প্রতি
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকে শুরু হয় দেবীপক্ষ যা সরাসরি শারদীয়া
দুর্গাপূজার সূচনা হিসেবে ধরা হয়।
বাংলা সংস্কৃতিতে মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপূজার সম্পর্ক গভীরভাবে জড়িত।
দেবী দুর্গার আগমনের বার্তা মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয়। ভোরবেলা রেডিও
বা টেলিভিশনে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ শোনা
প্রায় সব বাঙালির কাছে এক অবিচ্ছেদ্য ঐতিহ্য। এর মাধ্যমেই মানুষ বুঝতে
পারে যে দুর্গাপূজা একেবারেই দ্বারে উপস্থিত।
এই দিনটিতে দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের কাহিনি শ্রবণ ও আরাধনার মাধ্যমে
ভক্তরা নিজেদের প্রস্তুত করেন পূজার আনন্দে সামিল হওয়ার জন্য। তাই বলা
যায় মহালয়া হলো দুর্গাপূজার মূল ভিত্তি যা দেবীর আগমন বার্তা বহন করে
এবং পূজা পার্বণের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করে থাকে। ২০২৫ সালের
বাংলাদেশে দুর্গা পূজার ও মহালয়ার সময় নির্ধারণ অনুযায়ী বাঙালি হিন্দু
সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব দুর্গা পূজা
অনুষ্ঠিত হবে।
২০২৫ সালের দেবীর আগমন ও গমন কাহিনি
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছর দুর্গা পূজায় দেবীর আগমন ও গমন ভিন্ন
ভিন্ন বাহনে হয় যা মানবসমাজের জন্য আলাদা আলাদা ইঙ্গিত বহন করে। ২০২৫
সালে দেবীর আগমন হবে হাতি বাহনে এবং শাস্ত্রমতে এটি অত্যন্ত শুভ লক্ষণ
হিসেবে বিবেচিত। হাতি শান্তি, সমৃদ্ধি, বৃষ্টি ও শস্যবৃদ্ধির প্রতীক। ফলে
এই বছরে দেবীর আগমনে মর্ত্যলোক ভরে উঠবে সুখ, শান্তি ও উন্নতিতে এমনটাই
বিশ্বাস করা হয়।
অন্যদিকে ২০২৫ সালে দেবীর গমন হবে দোলা বাহনে যা তুলনামূলকভাবে অশুভ
লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। দোলা বাহনে গমন মানে অনিশ্চয়তা, অশান্তি ও
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা থাকে। তবে ভক্তরা বিশ্বাস করেন পূজা ও
ভক্তির মাধ্যমে এই অশুভ শক্তিকে প্রশমিত করা সম্ভব।
এভাবেই দেবীর আগমন ও গমন শুধু একটি ধর্মীয় আচার না বরং মানুষের জীবনে
আশা, ভরসা ও সামাজিক ঐক্যের বার্তা নিয়ে আসে। তাই ২০২৫ সালের
দুর্গোৎসবের বিশেষ তাৎপর্য হলো শুভ আগমনের আনন্দে ভরে ওঠা আর গমনের সময়
ভক্তির মাধ্যমে সব অশুভকে পরাজিত করার সংকল্প নেওয়া।
ভক্তদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পূজার নিয়মাবলী
দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় উৎসব না এটি ভক্তদের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা ও
সামাজিক ঐক্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভক্তদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট
পূর্ণাঙ্গ নিয়মাবলী ও পরামর্শ রয়েছে যা অনুসরণ করলে পূজা আরও ফলপ্রসূ ও
শুভ হয় বলে ধারণা করা হয়। আসুন বিস্তারিত জানি।
শুচি ও পবিত্রতা বজায় রাখাঃ পূজার সময় ব্যক্তি, পোশাক এবং স্থান
সবই পবিত্র রাখতে হবে। পূজা মণ্ডপে প্রবেশ করার আগে হাত ও মুখ ধোয়া এবং
শুদ্ধ জামা পরিধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মন্ত্র পাঠ ও প্রার্থনাঃ দুর্গাপূজার প্রতিটি দিন ভক্তরা দেবী
দুর্গার বিশেষ মন্ত্র পাঠ করেন। মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত
প্রতিদিনের নির্দিষ্ট পূজা মন্ত্র পড়া এবং প্রার্থনায় অংশ নেওয়া শুভ বলে
ধরা হয়।
অর্ঘ্য প্রদান ও প্রসাদ বিতরণঃ দেবীকে অর্ঘ্য অর্থাৎ ফুল, জল, দুধ,
ফল প্রদান এবং পূজার শেষে প্রসাদ বিতরণ করলে তা ভক্তদের জন্য ধন্যতা ও
কল্যাণ বৃদ্ধি করে।
সঙ্গতিপূর্ণ আচরণঃ পূজা মণ্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে আচরণ করা, উচ্চস্বরে
কথা না বলা এবং ভক্তি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভক্তি ও ধর্মীয় নীতি অনুসরণঃ পূজা উদযাপনের সময় শাস্ত্র অনুযায়ী
নিয়ম পালন করা বং দেবীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব বজায় রাখা আবশ্যক।
দুর্গাপূজার এই নিয়মাবলী পালন করলে ভক্তরা কেবল ধর্মীয়ভাবে সমৃদ্ধ হন না
বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও পূজা সমৃদ্ধ হয়। এটি আধ্যাত্মিক
শান্তি, আনন্দ এবং ঐতিহ্যবাহী ভক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক করে বলে ভক্তরা মানেন।
পূজার সময় বিশেষ খাবার ও মিষ্টি প্রথা
দুর্গাপূজা কেবল আধ্যাত্মিক উৎসব না এটি বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতির একটি
গুরুত্বপূর্ণ সময়ও বটে। দুর্গাপূজার সময় বিশেষ খাবার ও মিষ্টি প্রথা
দীর্ঘদিন ধরে বাঙালির মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। পূজার সময় পরিবার এবং মণ্ডপে
ভক্তদের জন্য ভোজনের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।
প্রচলিত খাবারের মধ্যে রয়েছে খিচুড়ি, লাবরা তরকারি, দই, চপ সহ বিভিন্ন
ধরনের তরকারি ও ডাল। বিশেষভাবে পূজার প্রসাদ হিসেবে দেবী দুর্গাকে নারকেল
নাড়ু, দুধের ক্ষীর, মিষ্টি, ফল এবং পিঠা অর্ঘ্য দেওয়া হয়। মিষ্টির মধ্যে
রসগোল্লা, সন্দেশ, পায়েস, মোদক ও নারিকেল পিঠা সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই প্রথা
কেবল ভক্তির অংশ না এটি সামাজিক মিলনমেলাকে আরও দৃঢ় করে।
দুর্গাপূজার সময় শিশু ও বৃদ্ধ সকলেই দুর্গাপূজা খাবার অর্থাৎ বিশেষ
খাবারের মাধ্যমে ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত হয়। এছাড়াও
অনেক মণ্ডপে এই খাবার ও মিষ্টি ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয় যা সামাজিক
বন্ধন ও সম্প্রদায়ের ঐক্যকে শক্তিশালী করে। পূজার সময় খাবার ও মিষ্টি
প্রথা কেবল ভক্তি ও আধ্যাত্মিকতার সাথে বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং
সামাজিক বন্ধনের প্রকাশও করে।
সন্ধিপূজা ও আরাধনার বিশেষ মুহূর্ত
সন্ধিপূজা হল দুর্গাপূজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আধ্যাত্মিকভাবে
শক্তিশালী সময়। এটি সাধারণত মহাষষ্ঠী থেকে মহাসপ্তমীর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত
হয়। সন্ধিপূজায় দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের স্মরণে বিশেষ পূজা ও আরাধনা
করা হয়। এই সময়ে পূজা মণ্ডপগুলো আলোকসজ্জা, ফুল ও ধূপবাতি দ্বারা পূর্ণ
হয় এবং ভক্তরা মন্ত্রপাঠ, প্রার্থনা ও অর্ঘ্য প্রদানের মাধ্যমে দেবীর
আশীর্বাদ লাভের চেষ্টা করেন।
সন্ধিপূজার বিশেষ মুহূর্তের মধ্যে অন্যতম হল দেবীর প্রতিমার কাছে প্রদীপ
প্রজ্জোলন, বিশ্বাস করা হয় দেবীর শক্তি এই সময়ে সর্বাধিক উপস্থিত
থাকে। এছাড়াও, মন্ত্রোচ্চারণ, অর্ঘ্য প্রদান এবং ফুল অর্পণ ভক্তদের জন্য
অত্যন্ত শুভ। অনেক মণ্ডপে এই সময় শোভাযাত্রা, ঢাকের তাল ও সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়, যা ভক্তি এবং উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
ভক্তদের জন্য এই মুহূর্তটি আধ্যাত্মিক শান্তি, সাফল্য এবং সমৃদ্ধির প্রতীক।
এছাড়াও, সন্ধিপূজা কেবল ধর্মীয় নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও
গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময়ে পরিবার, বন্ধু এবং সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে
পূজা উদযাপন করে। তাই সন্ধিপূজা এবং আরাধনার এই বিশেষ মুহূর্তগুলি
দুর্গাপূজার প্রাণ ও কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত।
পরিবেশবান্ধব পূজা ও সামাজিক দায়িত্ব
দুর্গাপূজা শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব না এটি পরিবেশ ও সামাজিক দায়িত্ব
সচেতনতাও জাগ্রত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ভক্ত ও মণ্ডপ উদ্যোক্তাদের
জন্য পরিবেশবান্ধব পূজা পালনের কিছু নির্দেশিকা রয়েছে যা অনুসরণ করলে
উৎসবটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। আসুন পরিবেশবান্ধব পূজা ও
আমাদের সামাজিক দায়িত্ব গুলো সম্পর্কে জানি।
- পলিথিন বা রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক মাটির মূর্তি ব্যবহারে জলদূষণ ও পরিবেশীয় ক্ষতি কমে।
- মূর্তিপ্রতিষ্ঠা ও বিসর্জনের সময় অতিরিক্ত জল ব্যবহারের পরিবর্তে সীমিত জল ব্যবহার ও পুনঃব্যবহার করা।
- কৃত্রিম রাসায়নিক রঙ ও আলো কমিয়ে প্রাকৃতিক এবং LED আলো ব্যবহার করা।
- প্লাস্টিক ও বর্জ্য কমিয়ে পুনঃব্যবহারযোগ্য সামগ্রী ব্যবহার এবং সঠিক বর্জ্য নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা।
- পূজা সময় জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- দরিদ্র ও অসহায়দের জন্য প্রসাদ, খাবার ও মিষ্টি বিতরণ করা।
- শিশুদের পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করানো।
পরিবেশবান্ধব পূজা প্রকৃতি রক্ষার সাথে এটি সামাজিক ঐক্য ও সম্প্রদায়ের
সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণের শিক্ষাও দিয়ে থাকে। এইভাবে ভক্তরা আধ্যাত্মিক ও
সামাজিক দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করতে পারে।দুর্গাপূজা ও মহালয়া ভক্তি,
আনন্দ, ঐতিহ্য এবং সামাজিক বন্ধনের এক অনন্য মিশ্রণ।
লেখকের মন্তব্যঃ২০২৫ সালের বাংলাদেশে দুর্গা পূজার ও মহালয়ার সময়
২০২৫ সালের বাংলাদেশে দুর্গা পূজার ও মহালয়ার সময় বাঙালির আধ্যাত্মিক ও
সাংস্কৃতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মহালয়া ২১ সেপ্টেম্বর রবিবার
পালিত হবে যা দেবীপক্ষের শুভ সূচনা হিসেবে গণ্য হয়। এর সঙ্গে সন্ধিপূজা ও
পূজার অন্যান্য দিনগুলো যেমন মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী এবং
বিজয়া দশমী ধারাবাহিকভাবে পালিত হয়ে থাকে।
পূজা মণ্ডপে ভক্তরা মন্ত্রোচ্চারণ, অর্ঘ্য প্রদান, প্রসাদ গ্রহণ এবং
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও পরিবেশবান্ধব পূজা এবং সামাজিক
দায়িত্ব পালন করে আমরা ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ এবং সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে
পারি। দুর্গা পূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব না বরং হিন্দু বাঙালির সাংস্কৃতিক
পরিচয় ও সামাজিক ঐক্যের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ। এই সময়ে প্রত্যেক ভক্তের
অংশগ্রহণই পূজাকে পূর্ণতা দেয়। ভালো থাকুন । ধন্যবাদ। 250737
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url