OrdinaryITPostAd

নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটি - নামাজে ভূল হলে করণীয়

ফরজ ইবাদত হলেও নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটিসমূহ মুসলিমদের মাঝে অনেকাংশেই পরিলক্ষিত হয়। তাই সকল মুসলিমদের উচিত নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটিগুলো পরিহার করে সহীহ্ শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করা। আপনার নামাজে ভুল হলে করণীয়গুলো কি এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
যেকোনো নামাজেই ভুল হতে পারে হোক সেটি ফরজ, সুন্নাত, ওয়াজিব অথবা নফল। মনোযোগ ও একনিষ্ঠতার অভাবে নামাজীরা সেই ভুলগুলো করে বসে। আজ আমরা হাদীসের আলোকে এই পোস্টটি থেকে বিস্তারিত জেনে নিবো নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটিগুলোর সমাধান, নামাজে ভূল হলে করণীয় ও নামাজ সংক্রান্ত যেকোনো ভুল হলে করণীয় কি কি।

পোস্ট সূচিপত্র - নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটি - নামাজে ভূল হলে করণীয়গুলো কি জেনে নিন

ভূমিকা - নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটি | নামাজে প্রচলিত ভূল

নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ তথা অপরিহার্য ইবাদত। নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটি তাই এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। মসজিদে ইমাম সাহেব নামাজ পড়াতে কোনো ভুল করলে মুক্তাদীরা তা সংশোধন করে দিবে। এছাড়া আমরা একাকী নামাজ আদায় করতে ভুল হলে তা সংশোধন করে নিব। মনে রাখতে হবে দায়সারা নামাজ আদায় করা নামাজের উদ্দেশ্য নয়। বরং সহীহ শুদ্ধ ভাবে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে একাগ্রতার সহিত নামাজ আদায় করাই নামাজের মূল লক্ষ্য।
নামাজের মাধ্যমে সবচেয়ে সহজে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। নামাজে ভূল সংক্রান্ত রাসূল (সাঃ) এর একটি হাদীস রয়েছে, তিনি বলেন - "নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ, তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমন ভুলে যাই। সুতরাং, আমি যদি ভুলে যাই তোমরা আমাকে তা স্মরণ করিয়ে দেবে।" (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) তাই শয়তানের প্ররোচনায় কখনও নামাজে ভুল হলে করণীয় হিসাবে আমরা সাহু সেজদার মাধ্যমে সেই ভুলগুলো শুধরে নিতে পারি। সাহু সেজদা কিভাবে করবেন তা পোস্টটির পরবর্তী অংশে জানতে পারবেন।

নামাজে ভুল হলে সাহু সেজদাহ দেবেন যেভাবে | নামাজে প্রচলিত ভূল-ত্রুটি 

নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়ার সবচেয়ে পরিচিত উপায় হলো সাহু সেজদাহ। কিন্তু এই সেজদাহ আপনি নির্দিষ্ট কিছু ভুলের ক্ষেত্রেই কেবল দিতে পারবেন। নামাজের ভেতরে যদি আপনি অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ভুল করে থাকেন তবে নামাজ শুদ্ধ করার জন্য অতিরিক্ত যে সেজদাহ দেওয়া হয় তাই মূলত সাহু সেজদাহ। ইচ্ছাকৃত কোনো বড় ভুলের জন্য সাহু সেজদাহ প্রযোজ্য হবে না। সেক্ষেত্রে পুনরায় আপনাকে নামাজটি আদায় করতে হবে।

সাহু সেজদাহ দেওয়ার নিয়ম: নামাজ পড়ার সময় যদি বুঝতে পারেন নামাজে কোনো ভুল হয়ে গেছে তবে সেই নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ (আত্মাহিয়্যাতু) পড়ে শুধুমাত্র ডান দিকে সালাম ফেরাতে হবে। অতঃপর বাম দিকে সালাম না ফিরিয়ে স্বাভাবিক সালাতের মতো ২ টি সিজদাহ্ করে পুনরায় বৈঠক করতে হবে। বৈঠকে তাশাহহুদ, দরূদ শরীফ ও দোয়া মাসূরা পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে নামাজের কার্যক্রম শেষ করতে হবে। মনে রাখবেন সাহু সেজদার আলাদা কোনো দোয়া নেই। 
নামাজে ভুল হলে করণীয় হিসাবে ৩ টি প্রধান কারণে আপনাকে সাহু সেজদাহ্ দিতে হবে। সেগুলো সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।
  1. নামাজ বৃদ্ধি হলে: যদি আপনি নামাজের ভেতর রুকু, সিজদাহ, বৈঠক অতিরিক্ত করে ফেলেন অথবা রাকায়াত নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশি পড়ে ফেলেন তাহলে আপনাকে সাহু সেজদাহ্ দিতে হবে। এই অতিরিক্ত কাজগুলো নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটির মধ্যে অন্যতম।
  2. কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে: নামাজের ভেতরে কোনো ওয়াজিব কাজ যেমন বৈঠক করতে ভুলে গেলে আপনাকে সাহু সেজদাহ্ দিতে হবে। সূরা ফাতিহার পরে অন্যকোনো সুরা পাঠ করা ওয়াজিব৷ ভুলক্রমে অন্য সুরা পাঠ না করলে আপনাকে নামাজ শুদ্ধ করার জন্য অবশ্যই সাহু সেজদাহ দিতে হবে। 
  3. সন্দেহ লাগলে: কেউ যদি নামাজরত অবস্থায় সন্দেহ করে এটা কততম রাকায়াত সে পড়ছে, এমতাবস্থায় সে যেটা মনে করবে সেই অনুযায়ীই নামাজ পড়বে। অতঃপর শেষ রাকাআতে নামাজ শুদ্ধ করার জন্য সাহু সেজদাহ দিয়ে নিবে।

সুন্নাত নামাজে ভূল হলে করণীয় কি । সুন্নত নামাজে ভুল হলে কি করবেন

সুন্নত নামাজ আদায়কালে যদি সূরা ফাতিহার পর অন্যকোনো সূরা পাঠ না করা হয় তবে সাহু সেজদাহ দিতে হবে। এছাড়া সেজদাহ্ সাহু হওয়ার কোনো একটি কারণ সুন্নত নামাজে পাওয়া গেলে অবশ্যই সাহু সেজদাহ্ দিয়ে সুন্নত নামাজ শেষ করতে হবে। হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি,  রাসুল (সাঃ) বলেন, "কেউ যদি প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের চেয়ে অতিরিক্ত কিছু পড়ে তবে তার সাহু সেজদাহ্ দিতে হবে।" [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস নং - ৩০৩৯]

জানাজার নামাজে ভুল হলে করণীয় | নামাজে প্রচলিত ভূল-ত্রুটি

জানাজার নামাজে কোনো রুকু ও সেজদাহ্ নাই। তবে ৪ তাকবীরের সহিত জানাজার নামাজ আদায় করতে হবে। ইমাম যদি ৪ তাকবীরের কম পড়ে তাহলে নামাজ হবে না। কিন্তু বেশি তাকবীর দিলে নামাজ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কোনো ওয়াজিব লঙ্ঘন হবে না। জানাজার নামাজে ভুলে ৫ম তাকবীর দিয়ে দিলে মুসল্লীগণ চুপ থাকবে। এতে নামাজ নষ্ট হয়না। [কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মদ ১/২৫৪; ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/২১৪]

ঈদের নামাজে ভুল হলে করণীয় কি জানুন | নামাজে প্রচলিত ভূল-ত্রুটি

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ। নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটিগুলোর মধ্যে ঈদের নামাজে ইমাম সাহেব অনেকসময় তাকবীর জনিত বিভিন্ন ভুল করে থাকে। তবে ঈদের নামাজে ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সেজাদাহ্ করা জরুরি নয়।
এর কারণ হিসাবে অধিকাংশ আলেম যে মতটি দিয়েছেন তা হলো, সাধারণত ঈদের নামাজ ও জুমআর নামাজ বড় জামাতে অনুষ্ঠিত হয়। এখন সাহু সেজদাহ্ দিলে এই জামাতে বিভ্রান্তির আশংকা থাকে। সেক্ষেত্রে সাহু সেজদাহ না দিলেও নামাজ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু নামাজে যদি প্রকাশ্যে ভুল হয় সেক্ষেত্রে সাহু সেজদাহ্ করাই শ্রেয়।

নামাজে ইমামের ভুল হলে মুক্তাদীর করণীয় কি | নামাজে প্রচলিত ভূল-ত্রুটি

মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। ইমাম সাহেবও সে ভুলের উর্ধ্বে নন। নামাজরত অবস্থায় ইমাম ভুল করলে পেছনের মুসল্লীদের লোকমা দিয়ে তা ধরিয়ে দেওয়া সুন্নাত। এখন কি বলে লোকমা দিলে ভাল হয় জানেন কি? সহীহ হাদীস অনুযায়ী "সুবহানাল্লাহ" বলে লোকমা দেওয়াই উত্তম। (নাসায়ি ১/১৩২:) এ এসেছে - "একদা রাসূল (সাঃ) চার রাকাআতবিশিষ্ট নামাজে ২য় রাকাআতে বৈঠক না করেই দাঁড়িয়ে যান। তখন সাহাবায়ে কেরাম 'সুবহানাল্লাহ' বলে লোকমা দিয়েছেন।" এছাড়াও নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটি শুধরানোর ক্ষেত্রে 'আল্লাহু আকবার' বলে মুসল্লীরা লোকমা দিতে পারে।

নামাজে কিরাত ভুল হলে করণীয় কি জানুন | নামাজে প্রচলিত ভূল-ত্রুটি

নামাজে কিরাআত পড়া ফরজ। নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটিগুলোর মধ্যে কিরাআতে ভুল অন্যতম। হরহামেশাই আমরা এ ভুল করে থাকি। নামাজে ভুল হলে করণীয় হিসাবে আমরা সাহু সেজদাহ দেওয়া শিখেছি। কিন্তু কিরআতে ভুল হলে নামাজ ভেঙে যেতে পারে। কারণ কিরআত সহীহ্ শুদ্ধ না হলে অর্থ বিকৃত হতে পারে। তাই আমাদের সঠিক উচ্চারণের সহিত সুরা-কিরআত পাঠ করতে হবে।

শেষ কথা | নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটির সমাধান - নামাজে ভূল হলে করণীয় 

নামাজ আল্লাহকে খুশি করার সর্বোত্তম ইবাদত। তাই নামাজে আমাদের পরিপূর্ণ মনোযোগ থাকা জরুরি। নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটিগুলো সম্পর্কে অবগত হয়ে আমরা চেষ্টা করব সেগুলো থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে। নামাজে অন্যান্য বড় ভূল হলে করণীয় হিসাবে আমরা পুনরায় নামাজটি পড়ে নিবো অন্যথায় সাহু সেহদাহ্ এর মাধ্যমে নামাজ সংশোধন করে নিব। আশা করি পোস্টটি পর্যায়ক্রমে পড়ে আপনি নামাজে প্রচলিত ভুল-ত্রুটি ও নামাজে ভূল হলে করণীয় সম্পর্কে বিশদভাবে জেনে গেছেন। এ ধরনের আরও ইসলামিক পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url