OrdinaryITPostAd

কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা যা সবার জানা উচিত

কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা জানা থাকলে আমরা খুব সহজেই কুরবানী করতে পারি। যেহেতু কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত তাই কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা সম্পর্কে জেনে নেওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। আপনাদের ইবাদতের সুবিধার্থে কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা হলো।

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা

কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা

আমরা সকলে অবগত রয়েছে যে কুরবানী আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। কুরবানী একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিময় আমল। যা আল্লাহর নবী এবং আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আঃ করেছিলেন আল্লাহতালার হুকুমে। এই কুরবানী নিয়ে অনেকগুলো মাসআলা রয়েছে আমাদেরকে অবশ্যই এগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ কোরবানি কার উপর ফরজ - কোরবানি কাদের উপর ফরজ

আপনাদের জানার সুবিধার্থে কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা, কুরবানী কার ওপর ওয়াজিব হয়? কি পরিমান টাকা থাকলে কুরবানী দিতে হয়? কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত ভাবে জানানো হবে। একজন প্রকৃত মুসলিম এবং কুরবানী দেওয়ার আগে অবশ্যই এই মাসআলা গুলো জেনে নিবেন।

কুরবানী কার ওপর ওয়াজিব হয়

কুরবানীর সবথেকে বড় মাসআলা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কুরবানী কার ওপর ওয়াজিব হয়? কুরবানী কার উপর ওয়াজিব হবে এটি আল্লাহতালা নির্দেশ করে দিয়েছেন। যদি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হয় এবং তার কাছে হিসাব পরিমান সম্পদ থাকে অথবা তার থেকে বেশি সম্পদ থাকে তাহলে অবশ্যই তার ওপর কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। তবুও কুরবানী কার ওপর ওয়াজিব হয় চলুন জেনে নেওয়া যাক।

প্রাপ্তবয়ষ্ক, স্বাভাবিক সুস্থ প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী মুকীম ব্যক্তি, যে ১০ জিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। নেসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ।

স্বর্ণ বা রুপার কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হয় তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সাথে প্রয়োজন অতিরিক্ত অন্য বস্তুর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও কুরবানী ওয়াজিব হবে। স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার, নগদ অর্থ, যে জমি বাৎসরিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র সবই কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।{বাদায়েউস সানায়ে ৪-১৯৬, আলমুহীতুল বুরহানী ৮-৪৫৫, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭-৪০৫}

কি পরিমান টাকা থাকলে কুরবানী দিতে হয়

কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা মধ্যে অন্যতম একটি মাসআলা। কুরবানীর দিনগুলোতে ১০ জিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ জিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হলে কুরবানী ওয়াজিব হয়। এর চেয়ে কম সম্পদের মালিক হলে কুরবানী ওয়াজিব হয় না। {আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩-১২৮, আলমুহীতুল বুরহানী ৮-৪৫৫}

টাকা-পয়সা, সোনা-রুপার অলংকার, ব্যবসায়িক পণ্য, প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি, সারা বছরেও ব্যবহার হয় না এমন অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এসব কিছুর মূল্য কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। সুতরাং আপনার নিকট জমা টাকা এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার বর্তমান মূল্য পরিমাণ থাকলে আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব। না হলে ওয়াজিব নয়।

হাদীসে কুরবানীর অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে আছে, কুরবানীর দিন পশু কুরবানীর চেয়ে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রিয় কোনো আমল নেই। {জামে তিরমিযী, হাদীস ১-১৮০} হযরত আলী রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ ফাতেমা রাঃ কে তার কুরবানীর নিকট উপস্থিত থাকতে বললেন এবং ইরশাদ করলেন, এই কুরবানীর প্রথম রক্ত বিন্দু প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ তাআলা তোমার গুনাহসমুহ মাফ করে দিবেন।

তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি শুধু আহলে বাইতের জন্য? না সকল মুসলমানের জন্য? তিনি বললেন, এই ফযীলত সকল মুসলমানের জন্য।{আলমুততাজিরুর রাবেহ ৩১৬, মাজমাউয যাওয়াইদ ৪-১৭, আততারগীব ওয়াততারহীব ১-১৭৫}

কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা

ইসলামে প্রতিটি কাজের একটি নির্দিষ্ট মাসআলা বলা হয়েছে। একজন মুসলিমের ক্ষেত্রে অবশ্যই সেই মাসআলা জেনে তারপরে কাজ করতে হবে। কুরবানী যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ এবাদত তাই কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা সম্পর্কে জেনে নেওয়া আমাদের এবাদতের জন্য খুবই ভালো একটি মাধ্যম।

মাসায়ালা - ১ঃ যে ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব তিনি নিজের পক্ষ থেকে কুরবানী করবেন অতঃপর সম্ভব হলে জিবীত বা মৃত পিতা-মাতা বা অন্যান্যদের পক্ষ থেকে কুরবানী করতে পারেন। এক্ষেত্রে নিজের ওয়াজিব কুরবানী না করে অন্যান্য দের পক্ষ থেকে যেমন মৃত পিতা মাতা বা ছোট সন্তান তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি তাদের পক্ষ হয়ে কুরবানী করে। এটা সঠিক তরিকা নয় ।কারন এতে ঐ ব্যক্তির ওয়াজিব কুরবানী আদায় করা হয় না। {ফাতায়ায় মাহমুদিয়া ১৭-৩১২}

মাসায়ালা - ২ঃ কোন গরীব ব্যক্তি কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করার পর তা মারা যায়, বা হারিয়ে যায়, বা চুরি হয়ে যায় তাহলে তার কুরবানী মাফ হয়ে যায়। এবং তার জন্য পূণরায় কুরবানীর ব্যবস্থা করা আবশ্যক নয়। {বাদায়েউস সানায়ে ৫-৬৬}

মাসায়ালা - ৩ঃ কোন ব্যক্তি যদি অন্য কারো অনুমতি নিয়ে তার পক্ষ হয়ে কোরবানি করে দেয় তাহলে ওই ব্যক্তির (তার জন্য কুরবানী করে দিচ্ছে) কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। {বাদায়েউস সানায়ে ৫-৬৭}

মাসায়ালা - ৪ঃ যে ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তি যদি কুরবানীর তিনদিনে কুরবানী না করে পশু বা তার মূল্য সদকা করে দেয় তাহলে কুরবানী আদায় হবে না। {বাদায়েউস সানায়ে ৫-৬৬ ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৭-৩০৯}

মাসায়ালা - ৫ঃ কোন ধনী ব্যক্তি যদি কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করে অতঃপর তা কুরবানী করার পূর্বেই তা হারিয়ে যায়, বা মারা যায় বা চুরি হয়ে যায় তাহলে তার জন্য আবশ্যক হলো অন্য একটি কুরবানী করা। {বাদায়েউস সানায়ে ৫-৬৬, কাযীখান ৩-৩৪৪, আদ্দুররুল মুহতার ৬-৩১৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫-২৯৫}

মাসায়ালা - ৬ঃ কোন ধনী ব্যক্তি কোরবানির পশু হারিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় কোরবানি উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করে অতঃপর পূর্বের হারিয়ে যাওয়া পশু ও পেয়ে যায় তাহলে তার জন্য উত্তম হলো উভয়টি কোরবানি করে দেওয়া। তবে সে চাইলে যে কোন একটি কোরবানি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে উভয় পশুর দামের মাঝে যদি তারতম্য থাকে তাহলে অতিরিক্ত অংশ সদকা করে দিবে। {বাদায়েউস সানায়ে ৫-৬৭ ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৭-৩১৭}

মাসায়ালা - ৭ঃ কোন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার পর কুরবানী আদায় না করে অতঃপর ঐ তিনদিন পর সে গরীব হয়ে যায় তাহলে ও তার উপর কুরবানী যোগ্য ছাগল সদকা করা আবশ্যক। দরিদ্র হওয়ার কারণে কুরবানী মাফ হবে না। সুতরাং সে আদায় করে যেতে না পারলে তা আদায় করে দেওয়ার জন্য ওসিয়ত করে যেতে হবে। {বাদায়েউস সানায়ে ৫-৬৫ আল ইখতিয়ার ৫-২০}

মাসায়ালা - ৮ঃ কোন গরীব ব্যক্তি কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পর পূনরায় কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করে অতঃপর পূর্বের হারিয়ে যাওয়া পশু পেয়ে যায় তাহলে তার জন্য উভয়টি কুরবানি করতে হবে, একটি পশু কুরবানি করা যথেষ্ট হবে না।

যদি গরিব ব্যক্তি দ্বিতীয় পশু ক্রয় করার সময় প্রথম পশুর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ক্রয় করে তাহলে এক্ষেত্রে একটি পশু কোরবানি করার যথেষ্ট হবে। {বাদায়েউস সানায়ে ৫-৬৭ আযীযুল ফাতাওয়া ৬৭৯}

মাসায়ালা - ৯ঃ পাঁচ জনে মিলে কুরবানী দেওয়ার নিয়তে পশু ক্রয়ের পর নতুন করে শরিক নেওয়া অনুত্তম হয়েছে। এক্ষেত্রে ঐ শরিক থেকে প্রাপ্য টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। {বাদায়েউস সানায়ে ৪-২১০, আদ্দুররুল মুখতার ৬-৪১৭, মাবসূত, সারাখসী ১২-১৫}

মাসায়ালা - ১০ঃ আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া।

মাসায়ালা - ১১ঃ আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

মাসায়ালা - ১২ঃ গরিব মিসকিন ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

মাসায়ালা - ১৩ঃ কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া  না হয় তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে।{বাদায়েউস সানায়ে ৪-২০৪, কাযীখান ৩-৩৪৫}

মাসায়ালা - ১৪ঃ যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় চলে যাবার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করা জায়েয। {বাদায়েউস সানায়ে ২-৮৩২}

মাসায়ালা - ১৫ঃ ১০, ১১ ও ১২ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েজ। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো কেননা রাতে কুরবানী করলে আলোস্বল্পতায় জবেহ ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে।{কাযীখান ৪-২২}

মাসায়ালা - ১৬ঃ কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবেহ করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবেহ করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে কুরবানী দাতা খেতে পারবে না। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য কমলো তা-ও সদকা করতে হবে। {বাদায়েউস সানায়ে ৬-৩২০-৩২১}

মাসায়ালা - ১৭ঃ উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া , দুম্বা তথা মেষ  জাতীয় চতুস্পদ হালাল গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বনগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। {বাদায়েউস সানায়ে ৩-৩৪৮}

মাসায়ালা - ১৮ঃ উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছর হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে  এক বছরের মতো মনে হয়, তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে। উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না।{বাদায়েউস সানায়ে ৩-৩৪৮}

মাসায়ালা - ১৯ঃ একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। {বাদায়েউস সানায়ে ১৩১৮, কাযীখান ১-৩১৯}

মাসায়ালা - ২০ঃ সাতজন মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয।

মাসায়ালা - ২১ঃ যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। {কাযীখান ৪-২০৮}

মাসায়ালা - ২২ঃ কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।

মাসায়ালা - ২৩ঃ যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট এককভাবে কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম।

আরো পড়ুনঃ কোন কোন পশু কোরবানি দেওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত

আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে। {বাদায়েউস সানায়ে ৩-৩৫০-৩৫১}

মাসায়ালা - ২৪ঃ কুরবানীর পশু মোটা তাজা হওয়া উত্তম।

মাসায়ালা - ২৫ঃ যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়।

মাসায়ালা - ২৬ঃ এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। {বাদায়েউস সানায়ে ১-২৭৫}

মাসায়ালা - ২৭ঃ যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে, তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। {কাযীখান ১-২৭৫,  বাদায়েউস সানায়ে ১-৬১০}

মাসায়ালা - ২৮ঃ কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে অর্থাৎ যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম। {কাযীখান ৫-২৪৪}

মাসায়ালা - ২৯ঃ গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবেহের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবেহ করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। {কাযীখান ৩-৩৫০}

মাসায়ালা - ৩০ঃ কুরবানীর পশু নিজে জবেহ করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবেহ করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবেহের স্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। {বাদায়েউস সানায়ে ২২-৬৫৭}

মাসায়ালা - ৩১ঃ অনেক সময় জবেহকারীর জবেহ সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবেহ সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবেহের আগে "বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার" পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। {বাদায়েউস সানায়ে ৬-৩৩৪}

মাসায়ালা - ৩২ঃ কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। {কাযীখান ৪-৩১৯}

মাসায়ালা - ৩৩ঃ যদি পশু বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে।

মাসায়ালা - ৩৪ঃ বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। {বাদায়েউস সানায়ে ৬-৩২৫}

মাসায়ালা - ৩৫ঃ কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই।

মাসায়ালা - ৩৬ঃ বর্তমানে কিছু লোক এসব বিক্রি করে থাকে। কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। তবে কোন গরীব লোক উহা দান হিসাবে পাওয়ার পর তা বিক্রি করলে যায়েজ হবে। {বাদায়েউস সানায়ে ১৭-২৫৯}

মাসায়ালা - ৩৭ঃ কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি। সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে। {বাদায়েউস সানায়ে ২-১৪৬}

মাসায়ালা - ৩৮ঃ কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে।

মাসায়ালা - ৩৯ঃ কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবেহের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। {কাযীখান ৪/২০৯, বাদায়েউস সানায়ে ৬-৩২৬}

মাসায়ালা - ৪০ঃ কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব  হলে যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।

মাসায়ালা - ৪১ঃ কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয আছে। {কাযীখান ৪/২২৪, বাদায়েউস সানায়ে ১-৩১৮}

মাসায়ালা - ৪২ঃ শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।-{বাদায়েউস সানায়ে ৬-৩১৭}

মাসায়ালা - ৪৩ঃ কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবেহ না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবেহ করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে। {কাযীখান ৩-৩৪৯}

মাসায়ালা - ৪৪ঃ মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে।

মাসায়ালা - ৪৫ঃ জবেহকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।

মাসায়ালা - ৪৬ঃ ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম ভোতা অস্ত্র দ্বারা মাকরূহ। {কাযীখান ৪-২২৩}

মাসায়ালা - ৪৭ঃ কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।

মাসায়ালা - ৪৮ঃ পাগল পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। {বাদায়েউস সানায়ে ১-২৩০}

মাসায়ালা - ৪৯ঃ কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব।

মাসায়ালা - ৫০ঃ জবাইয়ের পর পশু নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ।

মাসায়ালা - ৫১ঃ এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবেহ করবে না। জবেহের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট দেওয়া ঠিক না।

মাসায়ালা - ৫২ঃ অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা উত্তম।

মাসায়ালা - ৫৩ঃ কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও ঋণের টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।

মাসায়ালা - ৫৪ঃ তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। {কাযীখান ৬-৩১৬}

মাসায়ালা - ৫৫ঃ খাসিকৃত ছাগল ও বলদ দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ। {বাদায়েউস সানায়ে ৮-৪৯৮}

মাসায়ালা - ৫৬ঃ যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য নফল কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে।

মাসায়ালা - ৫৭ঃ বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।

মাসায়ালা - ৫৮ঃ কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়, বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবেহ করা যাবে। {বাদায়েউস সানায়ে ৬-৩১৮}

মাসায়ালা - ৫৯ঃ কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে গুনাহগার হবে না। {কাযীখান ৪-১৯৬, বাদায়েউস সানায়ে ৬-৩১৯}

মাসায়ালা - ৬০ঃ কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। {কাযীখান ৪-২২৫}

মাসায়ালা - ৬১ঃ এক কুরবানীর পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে। {কাযীখান ৪-২০৯, বাদায়েউস সানায়ে ৬-৩২৬}

মাসায়ালা - ৬২ঃ ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। {বাদায়েউস সানায়ে ২-১৭৬}

মাসায়ালা - ৬৩ঃ কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। {বাদায়েউস সানায়ে ৫-৩০১}

মাসায়ালা - ৬৪ঃ কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। {কাযীখান ৫-৩০১, বাদায়েউস সানায়ে ৩-৩৫৪}

মাসায়ালা - ৬৫ঃ কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি না জায়েয। কুরবানীর দিনে মোরগ জবেহ করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না।

মাসায়ালা - ৬৬ঃ কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে।

মাসায়ালা - ৬৭ঃ কুরবানী পশু জবেহ করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। {বাদায়েউস সানায়ে ৮-২৬৫}

মাসায়ালা - ৬৮ঃ অবশ্য বৃষ্টি বাদল বা অন্য কোনো ওজর যদি প্রথম দিনে ঈদের নামাজ না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় শেষ হওয়ার পর অর্থাৎ ঝাওয়ালের পর বা সূর্য মধ্য আকাশে থেকে বলে পড়ার পর প্রথম দিনে কোরবানি করা জায়েজ। {কাযীখান ৩-৩৪৪, আদ্দুররুল মুহতার ৬-৩১৫}

মাসয়ালা - ৬৯ঃ ১০ ও ১১ তারিখ দিবগত রাতেও কুরবানী করা জায়েজ। তবে দিনে কুরবানী করা ভালো।{মাজমাউয যাওয়াইদ ৪-২২, কাযীখান ৪-২২, বাদায়েউস সানায়ে ৪-২২৩}

মাসয়ালা - ৭০ঃ কোন গরীব ব্যক্তি কুরবানি করার পর কুরবানির তিনদিনের মধ্যে সাহিবে নিসাব হলে পূর্ণরায় কুরবানী ওয়াজিব হবে না। {ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫-৩৫৩}

সংগ্রহীতঃ sunni-encyclopedia, alkawsar

আমাদের শেষ কথাঃ কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত তাই আমাদের কোরবানি সম্পর্কে যত মাসআলা রয়েছে সেগুলো জেনে নেওয়া উচিত। কারণ ইসলাম ধর্মের প্রতিটি কাজের একটি সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ কোরবানি ওয়াজিব না ফরজ - কোরবানি ওয়াজিব নাকি সুন্নত

আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি কুরবানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মাসআলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি না পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন ধন্যবাদ। ২০৭৯১

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url