OrdinaryITPostAd

হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত - মৃত ব্যক্তির জন্য হজ্জ

হজ্জ ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত আছে তাছাড়া সবাই হজ্জ করতে পারেনা। আপনি কি হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত সম্পর্কে সব কিছু জানতে চান? যদি আপনি হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত সম্পর্কে সব জানতে চান তাহলে পোস্টটি ভালোভাবে পড়ুন।

হজ হল ইসলামের স্তম্ভগুলির মধ্যে একটি স্তম্ভ। হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত আছে। এই শর্ত গুলো না মানলে হজ্জ করা ফরজ নয়। হজ্জ এর মাধ্যমে অনেক পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাহলে চলুন যেনে নেওয়া যাক হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত এছাড়াও হজ ফরজ হওয়ার পর করণীয় সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত

হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত

আল্লাহ প্রত্যেক সামর্থবান মানুষের ওপর হজ্জ ফরজ করে দিয়েছেন। হজ বিশ্বজুড়ে বসবাসকারী প্রতিটি মুসলমানের জন্য একটি বাধ্যতামূলক কাজ। একজন মুসলমানকে তার জীবনে অন্তত একবার হলেও হজ্ব করতে হবে যদি সে আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম হয়। এখানে দেখুন হজ্ব কাদের উপর ফরজ এবং হজ ফরজ হওয়ার পর করণীয়।

আর্থিক সামর্থ্যঃ পরিবারের সবার এমনকি আপনার চাকর বা দাসীদের ভালো ভাবে সারা বছর ভরনপোষণ করে আপনার কাছে যদি হজ্জে যাওয়া আসার এবং রাস্তার সকল ধরনের খরচ করার মত টাকা থাকে তাহলে আপনার উপর হজ্জ ফরজ হবে। হজ্জ করলে মানুষের ইহকাল ও পরকাল জীবনে অনেক সৌভাগ্য আসে মহান আল্লাহর ইচ্ছাতে।

বাসস্থানঃ বাড়ির জন্য দরকারি সামগ্রী, পোশাক-আশাক, চলাফেরা করার জন্য গাড়ী,পরিবারের সবাই এবং চাকর সব রকম খরচ করার জন্য কৃষি জমি এবং আপনার ব্যবসা এছাড়াও চাকরী থেকে পাওয়া টাকার অতিরিক্ত থাকে তা থেকে যদি হজ্জ করার মত টাকা অবশিষ্ট থাকে তাহলে আপনার ওপর হজ্জ ফরজ হয়ে যাবে। এখান থেকে আপনারা হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত জানতে পারেন। আর আপনার হজ ফরজ হওয়ার পর করণীয় হল তাৎক্ষণিক ভাবে হজ্জ করে ফেলা। কারণ হজ্জ ফরজ হওয়ার পর যদি হজ্জ না করেন তাহলে পাপ হবে।

হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি

নবম বছর হিজরিতে মুসলমানদের জন্য হজ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল এবং এই সময়ে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) প্রথম পরিচিত কিছু মুসলমানদের একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং হজ্জ করেছিলেন। এবং হজ্ব কাদের উপর ফরজ সেটাও জানিয়েছেন। 

এটা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তাদের জীবনে একবার ফরজ যদি তারা শারীরিকভাবে সুস্থ এবং আর্থিকভাবে সক্ষম হয়। হজ্ব ফরজ হওয়ার কিছু শর্ত আছে। এসব শর্ত মেনে হজ ফরজ হওয়ার পর করণীয় হল তাৎক্ষণিক ভাবে হজ্জ করা। নিচে হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি বা হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত বিস্তারিত দেখে নিন।

প্রথম শর্তঃ ইসলাম মানে হজ্জ করতে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে

অবিশ্বাসী ও মুশরিকের হজ করার কোনো অধিকার নাই তাদের হজ্জ কবুল হয় না। তার মসজিদুল হারামে বা মক্কায় প্রবেশের অনুমতি নেই। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ হে ঈমানদারগণ, মুশরিকরা অপবিত্র সুতরাং তারা যেন বছরের পর আল-মসজিদ আল হারাম বা মক্কার কাছে না আসে।

আরো পড়ুনঃ জিলহজ মাসের ৫ আমল - জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল

বুখারীর একটা হাদীস থেকে জানা যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শেষ হজ্জের আগের বছর যখন আল্লাহর রসূল আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে হাজীদের নেতা বানিয়েছিলেন, তখন বলেছিলেন লোকদেরকে ডেকে ঘোষণা কর এ বছরের পর কোনো মূর্তিপূজারী মুশরিকরা হজ করবে না এবং কেউ উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করবে না।

দ্বিতীয় শর্তঃ বিচক্ষণতা হজ্জ করতে বিচক্ষণ হতে হবে

উন্মাদের হজ্জ বা উমরা করার অনুমতি দেওয়া হয় না এবং তারপরেও যদি সে হজ্জ করে তবে তার হজ্জ গণনা করা হবে না এইটা হয়তো সে জানেও না। আপনি যদি প্রশ্ন করেন হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত কি তাহলে এটা একটি শর্ত যে আপনাকে অবশ্যই বিনয়ী বা বিচক্ষণ হতে হবে। আবু দাউদ, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে আল্লাহর রসূল বলেছেনঃ

তিনটি ব্যক্তি যাদের পরিবর্তন দরকার একজন ঘুমন্ত যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, শিশু যতক্ষণ না সে প্রাপ্তবয়স্ক হয় এবং উন্মাদ যতক্ষণ না সে বুঝতে পারে বা বুদ্ধি ফিরে পায়। তাই হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি যদি জানতে চান তাহলে এটি একটি শর্ত।

তৃতীয় শর্তঃ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া

পূর্ববর্তী হাদীস দ্বারা প্রমাণিত একজন শিশু প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার উপর হজ্জ ফরজ হয় না। তবে শিশু যদি হজ করে তবে তার হজ সঠিক হবে কিন্তু সে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত ইসলামে তার হজ পূরণ করেনি। ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর আরেকটি হাদীছে আছে যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

যে শিশু হজ করে তারপর যখন সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন তার ওপর আরেকটি হজ ফরজ হয়ে যায়। জ্ঞানীগণ একমত যে যদি কোন শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই হজ করে, তবে তার উপর আরেকটি হজ ফরজ হয়ে যায়। শিশু কালে কেউ হজ্জ করলে যদি সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায় তাহলে ইসলামের স্তম্ভের হজ পূরণের জন্য সেই হজ যথেষ্ট নয়। 

চতুর্থ শর্তঃ দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়া

বান্দার উপর হজ ওয়াজিব নয় তবে যদি সে হজ করে তবে তা সঠিক হতে হবে। তবে হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত আছে তার মধ্যে একটি হল আপনি যদি কারো ক্রীতদাস হন তাহলে যতক্ষণ আপনি মুক্ত না হচ্ছেন আপনার হজ্জ কবুল হবে না।

আরো পড়ুনঃ লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর শব্দের অর্থ কি

একটা হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে যদি কোনো ক্রীতদাস হজ করে তারপর সে যদি মুক্তি পায় তাহলে তার ওপর আরেকটি হজ ফরজ হয়ে যায়। আর হজ ফরজ হওয়ার পর করণীয় হল খুব শীঘ্রই হজ্জ করা। তাহলে ক্রীতদাস-যদি হজ করে তারপর সে যদি মুক্ত হয় এবং যদি সে হজ্জ করার উপায় খুঁজে পায় তবে তাকে আরেকটি হজ করতে হবে। ক্রীতদাস অবস্থায় তার হজ যথেষ্ট নয়। এটাই হাদিসে আছে তাই আমাদের সবাইকে মানতে হবে।

পঞ্চম শর্তঃ সক্ষমতা শারীরিক ও আর্থিক দিক থেকে

কুরআন ও সুন্নাহর দলীল দ্বারা হজ্ব কাদের উপর ফরজ হয় যে ব্যক্তি তা পালনের উপায় খুঁজে পায়। এখানে সমর্থ দ্বারা যা বলা হয়েছে তা হল সেই ব্যক্তি যার শারীরিক এবং আর্থিক উভয় ক্ষমতাই রয়েছে তার ওপর হজ্জ ফরজ। আমরা উপরে আলোচনা করেছি হজ্ব কাদের উপর ফরজ। পরিবারের সবার এমনকি আপনার চাকর বা দাসীদের ভালো ভাবে সারা বছর ভরনপোষণ করে আপনার কাছে যদি হজ্জে যাওয়া আসার এবং রাস্তার সকল ধরনের খরচ করার মত টাকা থাকে তাহলে আপনার উপর হজ্জ ফরজ হবে।

ষষ্ঠ শর্তঃ মহিলার জন্য তার মাহরাম থাকতে হবে

মহিলার জন্য অবশ্যই তার সাথে মাহরাম বা তার স্বামী থাকতে হবে যার সাথে সে হজ্জ করার জন্য সফর করে। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ একজন মহিলাকে মাহরাম ছাড়া ভ্রমণ করার অনুমতি নেই। আর তার সাথে কোন মাহরাম না থাকলে তার সামনে কোন পুরুষ প্রবেশ করতে পারবে না। 

তখন এক ব্যক্তি বলল হে আল্লাহর রাসূল, আমি কিছুদিনের জন্য বাহিরে যেতে চাই কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জ করতে চায়? এর উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তুমি তার সাথে হজ্জে যাও। একজন মাহরাম হল মেয়েদের একজন পুরুষ আত্মীয় যাকে বিয়ে করা হারাম বা তার স্বামী ও হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছেঃ পিতা, পুত্র, ভাই, মামা, মামা, মামা, দাদা, নাতি, একজনের ভাই ও বোনের ছেলে অথবা সেই মহিলার বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে ভাই, শ্বশুর, জামাই হতে পারে।

শারীরিক বা আর্থিক অক্ষমতা এবং অন্যকে দিয়ে হজ্জ করানো

যে ব্যক্তি শারীরিকভাবে খুব খুব বয়সের কারণে হজ ও ওমরাহ করতে অক্ষম বা এমন অসুস্থতা যা থেকে সুস্থ হওয়ার আশা করা যায় না  অথবা যে ব্যক্তি শারীরিকভাবে সক্ষম কিন্তু আর্থিকভাবে অক্ষম এবং হজ করার জন্য ভ্রমণ করার মতো সম্পদ তার কাছে নাই। তাহলে এমন ব্যক্তির উপর হজ্জ ওয়াজিব নয়। তবে কেউ যদি আর্থিকভাবে সক্ষম কিন্তু শারীরিকভাবে অক্ষম হয়, তাহলে তাকে তার পক্ষ থেকে হজ ও ওমরাহ করার জন্য কাউকে পাঠানো যাবে।

আরো পড়ুনঃ জিলহজ মাসে চুল নক কাটা যাবে কিনা জেনে নিন

কাউকে হজ ও ওমরাহ পালনের জন্য নিযুক্ত করা আইনে আছে। আবু রাযীন আল-উকাইলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল, আমার পিতা একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি এবং তিনি হজ্জ বা উমরা করতে সক্ষম নন এবং তিনি ভ্রমণ করতে পারেন না। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ কর এবং উমরাহ কর। তবে হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি তাকে জানতে হবে।

মৃত ব্যক্তির জন্য হজ্জ

যে ব্যক্তি হজ পালন না করে মারা যায় এবং তার কাছে সম্পদ থাকে, তবে সে যে সম্পদ রেখে গেছে তা থেকে পর্যাপ্ত অর্থ বের করা হয় যাতে অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারে। হাদিসে আছে এক মহিলার মা মারা গেলেন তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন আমার মা কখনো হজ করেনি, আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন তার পক্ষ থেকে হজ্জ কর। এখান থেকে আমরা হজ্ব কাদের উপর ফরজ এবং হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি তা ভালো ভাবে জানতে পারি।

হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত - শেষ কথা

আমরা জানি হজ্জ ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে একটি। তাহলে ইসলাম যে ৫টি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে হজ্জ ও আছে তাই হজ্জ প্রত্যেক মানুষের জন্য অনেক সৌভাগ্যের একটা কাজ। একবার হজ্জ করলে মানুষের আগের সব পাপ আল্লাহ মাপ করে দিয়ে একদন নিষ্পাপ করে দেন। কিন্তু হজ্জ কার উপর ফরজ এবং ফরজ হওয়ার শর্ত আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে। কারণ হজ্জ সব মুসলমানদের একবার করতে বলা হলেও এর কিছু শর্ত আছে। আমরা আজ হজ্ব কাদের উপর ফরজ ও হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি তা আলোচনা করেছি। [জব আইডি=২২৪৯৮]

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url