OrdinaryITPostAd

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন সেগুলো সম্পর্কে অবশ্যই আপনার জেনে থাকা উচিত। জিলহজ মাস হলো ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এটি পবিত্র মাস হিসেবে পরিচিত তাই জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন? সে সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। আজকের এই আর্টিকেলে জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন তা জানাবো।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন তা জেনে নিন। উক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের করণীয়

হিজরী বর্ষের সর্বশেষ মাস হল জিলহজ মাস। এই মাসের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। আমরা অনেকেই এই বিষয়টি জানি যে আল্লাহ তাআলার কাছে বারো মাসের মধ্যে চারটি মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ এর মধ্যে অন্যতম হলো জিলহজ্জ মাস। বিশেষ করে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনকে খুবই পবিত্র এবং মর্যাদা পূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন? এ বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে।

আরো পড়ুনঃ জিলহজ মাসের রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে জানুন

জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে নফল নামাজ পড়া এবং রোজা রাখা খুবই ফজিলতপূর্ণ। কারণ জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের একটি করে রোজা এক বছরের রোজা করার সমান। এবং রাতের বেলা ইবাদত পালন করা লাইলাতুল কদরের ইবাদত পালন করার মত। তাই আমরা জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের রোজা করবো এবং বেশি বেশি রাতে নফল ইবাদত পালন করব।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল সমূহ মধ্যে অন্যতম হলো তাকবীরে তাশরিক পাঠ করা। বিশেষ করে নয় জিলহজের ফজর থেকে জিলহাদ মাসের ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর এটি পাঠ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করো।'{সূরা বাকারাঃ ২০৩}

সামর্থ্য থাকলে আমাদের অবশ্যই কুরবানী করতে হবে। হযরত জায়েদ বিন আরকাম রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাঃ কে জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! কোরবানি ইহা কি? তিনি বললেন, 'তোমাদের পিতা ইব্রাহিম আঃ এর সুন্নত।'

জিলহজ্জ মাসের ১১, ১২, ১৩ তারিখের বেশি বেশি জিকির করা। বেশি বেশি কালেমা তাইয়্যবা আল্লাহু আকবার এবং আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "তিনি তাহাদেরকে চতুরপদ জন্তু হইতে যাহা রিযিক হিসেবে দান করিয়াছেন উহার ওপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করিতে পারে।"{সূরা হজ্জঃ ২৮}

জিলহজ মাসের ৯ তারিখ অর্থাৎ আরাফার দিনে রোজা রাখা। নবী সাঃ বলেছেন, "যে ব্যক্তি আরাফাত দিনে রোজা রাখবে তার পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরের এক বছরের গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেবেন।" যারা হজ পালনের জন্য আরাফার ময়দানে অবস্থান করবে তাদের জন্য এই আমলটি প্রযোজ্য হবে না।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের বর্জনীয়

যেহেতু জিলহজ মাস আল্লাহতালার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ একটি মাস তাই জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন সে সম্পর্কে না জানলে এই মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত গুলো সঠিকভাবে পালন হবে না। ওপরে আমরা জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের করনীয় সম্পর্কে জেনেছি। জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন? সে সম্পর্কে জানব।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন বিশেষ করে যারা আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার জন্য কোরবানি দিবে তাদের নখ ও চুল কাটা থেকে বিরত থাকার সুন্নত। এই ব্যাপারে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন,"তোমাদের কেউ যদি জিলহজের চাঁদ দেখে এবং কোরবানি করার ইচ্ছা করে তাহলে সে যেন কোরবানি পর্যন্ত নিজের চুল নখ ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকে।"{সহীহ মুসলিম}

আপনি যদি কোরবানি করার নিয়ত করে থাকেন তাহলে অবশ্যই জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা অর্থাৎ জিলহজ মাসের প্রথম দিন থেকে দশম দিন পর্যন্ত নিজের মাথার চুল শরীরের যে কোন পশম এবং নখ কাটা থেকে বিরত থাকুন। উম্মে সালমা রাঃ হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,"জিলহজ মাস শুরু হলে যে ব্যক্তি কুরবানী করতে চাই সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে।"

যারা কুরবানী করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন তারা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখে যাওয়ার পর থেকে হাত পায়ের নখ মাথার চুল ও অবাঞ্ছিত লোম কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি 40 দিন না হয়ে থাকে এগুলো না কাটার মেয়াদ। যদি ৪০ দিনের বেশি হয়ে থাকে তাহলে এসব কেটে ফেলা আবশ্যক। অথবা দশ দিন পর কোরবানির পর পরিষ্কার করতে হবে।

এছাড়া জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন অন্যায় অশ্লীলতা ও পাপাচার থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের গান বাজনা নগ্ন ছবি মাদকাসক্ত থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে সব সময়। কারণ এই সকল কাজ পূর্বের সকল আমলগুলোকে নষ্ট করে দিয়ে থাকে।

জিলহজ্জ মাসে যে সকল কাজ থেকে বিরত থাকবেন

আমরা জানি জিলহজ্জ মাস মানে মুসলিমদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্মীয় অনুষ্ঠান কোরবানির ঈদ এবং ইসলামের পাঁচটি স্তম্বের মধ্যে অন্যতম হলো হজ এর মৌসুম। জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন সেই বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে আপনি যদি কুরবানী দেওয়ার নিয়ত করে থাকেন তাহলে জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন তা জেনে নিন।

আরো পড়ুনঃ জিলহাদ মাসের ১০ দিনের ফজিলত আমল এবং রোজা

  • মাথার চুল কাটা এবং মাথা ন্যাড়া করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • হাত ও পায়ের নখ কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • শরীরের অবাঞ্চিত পশম কাঁটা এবং পশম বিলুপ্তকারী ওষুধ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

যদি কেউ কোরবানি করার নিয়ত করে তাহলে তার জন্য উপরের কাজগুলো করা নিষিদ্ধ। এর জন্য কোন ধরনের জরিমানা দিতে হবে না কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তাই যে ব্যাক্তি কোরবানি করবে সে ব্যক্তি যেনো জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন চুল, হাত পায়ের নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে। তবে অনেকেই এই কাজগুলোকে হারাম বলেছেন।

হযরত উম্মে সালমা রাঃ থেকে বর্ণিত নবীজি সাঃ বলেছেন, "যখন জিলহজ মাসের দশ দিন আসে এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করার নিয়ত করে, তখন সে যেন নিজের চুল ও চামড়া কোন অংশ না কাটে।"{মুসলিম} জিলহজ মাস শুরু হওয়ার আগেই উপরের উল্লেখিত কাজগুলো করে নেওয়া জরুরী। কারণ যিনি কোরবানি দিবেন তার জন্য জিলহজ মাসের শুরু থেকে কুরবানী দেওয়া পর্যন্ত উপরের কাজগুলো নিষিদ্ধ।

জিলহজ্জ মাসের গুরুত্ব

আমরা ইতিমধ্যে জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন? সে সম্পর্কে আপনাদের জানিয়েছি। জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের মর্যাদা হওয়ার কারণ আল্লাহ তা‌আলা এর কসম করেছেন, আল্লাহ তা‌আলা যখন কোনো কিছুর কসম করেন তা কেবল তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাই প্রমাণ করে। কারণ,মহান সত্তা শুধু মহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরই কসম করেন। আল্লাহ তা‌আলা বলেন, "কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের।" {সূরা আল-ফাজরঃ ১-২}

এসবই সেই দিন আল্লাহ যাতে তাঁর জিকিরের প্রবর্তন করেছেন, আল্লাহ তা‌‘আ বলেন, "যেন তারা নিজদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাযির হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।" {সূরা আল-হজঃ ২৮

রাসূলুল্লাহ দিনগুলোকে শ্রেষ্ঠ দিনবলে আখ্যায়িত করেছেন, জিলহজের এই দিনগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাঃ দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন জাবির রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, "পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিনগুলো হলো দশকের দিনসমূহ। অর্থাৎ যিলহজের (প্রথম) দশদিন।

জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর চেয়ে উত্তম দিন নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদেও এর চেয়ে উত্তম দিন নেই। হ্যা, কেবল সেই যে (জিহাদে) তার চেহারাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।" {মুসনাদ বাযযারঃ ১১২৮}

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন "জিলহজের প্রথম দশকের চেয়ে উত্তম এমন কোন দিন নেই, যে দিনগুলোর সৎ আমল আল্লাহ্‌র নিকট অধিক পছন্দনীয়।"

সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ্‌র পথে জিহাদও নয় হে রাসূলুল্লাহ সাঃ? তিনি বললেন, "আল্লাহ্‌র পথে জিহাদও নয়। অবশ্য সেই মুজাহিদের কথা ভিন্ন, যে জানমাল নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে পড়ে, কিন্তু আর কোন কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।" {বুখারী শরীফঃ৯৬৯}

জিলহজের দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাফার দিন আরাফার দিন হলো বড় হজের দিন। এটি ক্ষমা ও মাগফিরাতের দিন। জাহান্নাম থেকে মুক্তিও নাজাতের দিন। যিলহজের এই দশকে যদি ফযীলতের আর কিছু না থাকত তবে এ দিবসটিই তার মর্যাদার জন্য যথেষ্ট হত।

এ দিনের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, 'আরাফা দিবসই হজ।' {তিরমিযীঃ ৮৯৩ রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন, "আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো কুরবানীর দিন অতপর স্থিরতার দিন।" {নাসায়ীঃ ১০৫১২}

আমাদের শেষ কথাঃ জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন? জিলহজ মাসের গুরুত্ব সহ আরো অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী।

আরো পড়ুনঃ জিলহজ্জ মাসের ১২ টি ফজিলত - জিলহজ্জ মাসের গুরুত্ব

এরকম আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের তথ্যমূলক এছাড়া আরো বিভিন্ন প্রকারের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।২০৭৯১

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url