OrdinaryITPostAd

এসিআই কোম্পানি লিমিটেড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন

এসিআই কত বড় এটি খুব সাধারন একটি প্রশ্ন। এবং সবাই কম বেশি এই প্রশ্নটি করে থাকে। চলুন জেনে নেই এসিআই কত বড়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় Conglomerate গুলোর মধ্যে একটি হলো ACI. ACI Ltd বা  Advanced Chemical Industries Ltd। হেলথকেয়ার, কনজ্যুমার, গুডস ও ইলেকট্রনিক্স, কৃষি এবং রিটেইল এই চারটি খাতে মোট ৩৯ ধরনের পণ্য বিক্রি করে ACI।
ICI থেকে ACI এর সৃষ্টি। ১৯২৬ সালে ৪ টি ব্রিটিশ কেমিক্যাল কোম্পানির মার্জারের মাধ্যমে ICI প্রতিষ্ঠিত হয়। চলুন আর দেরি না করে এসিআই কত বড় তা জেনে নেই। এসিআই এর ইতিহাস বিভিন্ন বিজনেস ইউনিট এবং কোম্পানিটির রেভিনিউ জেনারেশন প্রফিতাবিলিটির অবস্থা নিয়ে আলোচনা করবো আজকের নিবন্ধটিতে।

পেজ সূচীপত্রঃ এসিআই কত বড় | How big is ACI

এসিআই কত বড় | How big is ACI

Advanced Chemical Industries Ltd বা ACI হল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় Conglomerate গুলোর মধ্যে একটি। হেলথকেয়ার, কনজ্যুমার, গুডস ও ইলেকট্রনিক্স, কৃষি এবং রিটেইল এই ৪টি খাতে মোট ৩৯ ধরনের পণ্য বিক্রি করে ACI।  ১৫ কোটি টাকা মার্কেট ভ্যালু এবং ৬৩ কোটি টাকা রেভিনিউ জেনারেটিং Conglometate টির ১৪ টি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি আছে, ৪টি জয়েন্ট ভেঞ্চার এবং অ্যাসোসিয়েট কোম্পানি আছে এবং ১২টি মানুফাকচারিং প্লান্ট আছে। এতগুলো ব্যবসা অন্তর্ভুক্ত থাকার পরেও আগের বছরগুলোতে এসিআই এর প্রফিট জেনারেশনের ধারাবাহিকতার অনেক অভাব ছিল। গত বছর অর্থাৎ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ACI প্রায় প্রায় ৯০ কোটি টাকা লোকসান করে।

ACI সৃষ্টির ইতিহাস | এসিআই কত বড়

এসিআই কত বড় তা জানতে আগে আমাদের ACI সৃষ্টির ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হতে হবে। ১৯২৬ সালে চারটি ব্রিটিশ কেমিক্যাল কোম্পানি মার্জারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় Imperial Chemical Industries বা ICI। কোম্পানিগুলো হলোঃ i. Brunner Mond, ii. Nobel Explosives, iii. The United Alkali Company and iv. British Dyestuffs Corporation। ইম্পেরিয়াল কেমিক্যাল এর প্রোডাক্ট এর মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল বিস্ফোরক কীটনাশক পেইন্ট এবং রেজিন বা রজন। আইসিআই প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি হিসেবে আরও কয়েকটি দেশ অপারেট করেছিল। 

তারই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশে কোম্পানির আইসিআই ইন্ডিয়া লিমিটেড নামের একটি সাবসিডিয়ারি মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত আলাদা হওয়ার পরে করাচি অফিসের নাম পরিবর্তন করে ICI(Pakistan) রাখা হয়। তারপর ১৯৬৮ সালে কোম্পানিটির স্থান পরিবর্তন করে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে আসে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর এই এসিআই (পাকিস্তান) কোম্পানিটি ১৯৭৩ সালের ICI Bangladesh Manufactures Ltd নামে বাংলাদেশে অপারেশন শুরু করে। ১৯৭৬ সালে কোম্পানিটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯২ সালের ৫ মে মূল কোম্পানি ICI Plc ৭০% লোকাল শেয়ারহোল্ডারদের কাছে বিক্রি করে দেয়।আর এই ডাইভেস্টমেন্টের পরেই ICI Bangladesh ACI আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে।

বিজনেস এক্সপেনশন | How big is ACI

ACI মোট চারটি Strategic Business Unit (SBU) এ ব্যবসা করছে। সেগুলো হলোঃ Health Care, Consumer Brands, Agribusiness and Retail Chain প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রধানত ফার্মাসিউটিক্যালস পেস্ট কন্ট্রোল পুণ্য ব্যবসাতে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে একের পর এক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রবেশ করে এসিআই।

এসিআই দেশীয় ফার্মাসিটিক্যাল মার্কেটে কয় বছর ধরে ব্যবসা করে?
এসিআই দেশীয় ফার্মাসিটিক্যাল মার্কেটে প্রায় 30 বছর ধরে ব্যবসা করছে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে এশিয়ার মার্কেটে শেয়ার মাত্র ৪%। এখন পর্যন্ত ১০০ টির ও বেশি Therapeutic Class, ২৫০ টিরও বেশি মলিকিউল বাজারে এনেছে এসিআই। 2018 -19 অর্থবছরে নতুন 33 টি নতুন মলিকিউল বাজারে আনে এই কোম্পানিটি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে চারটি মহাদেশের ৩০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে এসিআই। এছাড়াও আফ্রিকা ও মধ্য আমেরিকাতে ১৫টির ও বেশি দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য রেগুলেটরি কার্যক্রম চালু হয়েছে।

পেস্ট এবং নন পেস্ট কন্ট্রোল | এসিআই কত বড়

এসিআই পেস্ট এবং নন পেস্ট কন্ট্রোল এই ২ ধরনের প্রোডাক্ট এর মাধ্যমে হোম কেয়ার সেগমেন্টে উপস্থিত রয়েছে। এবং আমেরিকান কনজিউমার ব্রান্ড SC Johnson এর ম্যানুফ্যাকচারিং ও ডিসট্রিবিউশন পার্টনার হয়ে এসিআই বিভিন্ন ধরনের পণ্য বাজারজাতকরণ করছে। অ্যারোসল মার্কেটে ACI Aerosol কাস্টমারদের প্রথম পছন্দ। Neilson এর তথ্য মতে মার্কেটে ACI Aerosol এর মার্কেট শেয়ার ৯৪%। মসকুইটো কয়েল মার্কেটে ৮% এসিআই কয়েলের শেয়ার। এই মার্কেটে এসিআই এর মার্কেট শেয়ার কমেছে অন্যান্য নন-ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টের আধিক্যের কারণে। এসিআই নন পেস্ট কন্ট্রোল প্রোডাক্টের মধ্যে Angelic Air Freshner এবং Vanish ব্র্যান্ডের পণ্য বাজারজাত করেছে।

চার দশকের বেশি সময় ধরে স্যাভলন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আসছে বাংলাদেশে। মূল কোম্পানি ইম্পেরিয়াল ক্যামিকেল এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে 1992 সাল থেকে এসিআই এর অধীনে চলে আসে এই ব্রান্ড। প্রথমে এই পণ্যের তালিকায় শুধুমাত্র অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড থাকলেও ১৯৯৮ সালে হ্যান্ডওয়াশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে টয়লেট্রিজ বিজনেস এর মাধ্যমে স্যাভলন সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং ওয়াইপ্স সহ আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অ্যান্টিসেপটিক ইন্ডাস্ট্রিতে স্যাভলন এন্টিসেপটিক পণ্যের বাজার মার্কেট শেয়ার ৮৪% থেকে ও বেশি। করোনাভাইরাস এর প্রকল্পের কারণে এসিআই টয়লেট্রিজ বিজনেসে সাবান, হ্যান্ড ওয়াস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি পণ্য বিক্রি অনেকগুণ বেড়ে গেছে। 

সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা | How big is ACI

২০০০ সালে ব্রিটিশ কমিউনিকেশন লিমিটেড নামে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। সাবসিডিয়ারি কোম্পানি মাধ্যমে মিডিয়া ও কমিউনিটি এন্ড কমিউনিকেশন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করে ACI। মিডিয়া প্ল্যানিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সহ আরো বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করেছে ক্রিয়েটিভ কমিউনিকেশন লিমিটেড। 2018 19 অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় ছিল মাত্র 7.5 কোটি টাকা এবং প্রফিট ছিল মাত্র ১ কোটি টাকা।
2003 সালে এসিআই ও টাটা গ্লোবাল বেভারেজেস ওভারসিজ হোল্ডিংস লিমিটেড এর জয়েন্ট ভেঞ্চার কম্পানি টেটলি এসিআই বাংলাদেশ এর মাধ্যমে চা উৎপাদন প্যাকেজিং ও বিক্রি করে এসিআই। এই কোম্পানিটির দুটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড টাটা টি ও টেটলি।

এসিআই সল্ট লিমিটেড | এসিআই কত বড়

2004 সালে এসিআই সল্ট লিঃ এর মাধ্যমে এডিবল সল্ট মার্কেটে ব্যবসা শুরু করে। বিগত দশকে ৮ বার মার্কেটের শীর্ষ ব্রান্ডের জায়গা ধরে রেখেছে এই এসিআই সল্ট। BSTI অনুমোদনহীন, বাইরে থেকে আমদানি করা নিম্নমানের সব লবণ বিক্রেতাদের আধিক্যের কারণে এসিআই, কনফিডেন্স সহ বিভিন্ন দেশীয় কোম্পানিগুলোর বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যাপক প্রতিযোগিতার মধ্যে ব্যবসা করে আসছে। এই প্রতিযোগিতার মধ্যেও এসিআই সল্ট গুণগত মানের দিক থেকে এখনও সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় ছিল 190 কোটি টাকা এবং প্রফিট ছিল মাত্র 9 কোটি টাকা। 
একই বছরে এশিয়ায় ভারতের গোদরেজ এগ্রোভেট এর সাথে আরেকটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কম্পানি ACI Godrej Agrovet Pvt Ltd প্রতিষ্ঠা করে যার মাধ্যমে কোম্পানিটি সবধরনের অ্যানিমেল ফিড ও একদিনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের ও বিক্রয়ের সাথে সংযুক্ত হয়।

এসিআই সিড বিজনেস | How big is ACI

2006 সালে এসিআই ফিড বিজনেস শুরু করা হয়। Bangladesh Rural Development Academy, Bangladesh Agricultural University, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Agricultural University (BSMRAU) তে এসিআই এর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টেশন রয়েছে। এসিআই সিড USAID, IRRI, IFC, KATALYST সহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছে এসিআই।নতুন প্রজাতির বোরো চাল, হাইব্রিড, ভুট্টা ইত্যাদি বাজারে আনার মাধ্যমে সমগ্র সিড মার্কেটে ৭০% এর বেশি শেয়ার করতে সক্ষম হয়েছে এসিআই। 

এসিআই এর গুরুত্বপূর্ণ বছর

এসিআই এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর হল 2008 সাল। এবছর বেশকিছু নতুন ব্যবসার সাথে যুক্ত হয় এসিআই। এই বছর সারফেস ক্যাটাগরিতে প্রবেশ করে এসিআই যেখানে বর্তমান গ্লাস ফ্লোর ক্লিনার হিসেবে Shinex ব্র্যান্ডের পণ্য বাজারে আছে। এই বছর Female Hygiene ক্যাটাগরিতে স্যাভলন, ফ্রিডম স্যানিটারি ন্যাপকিন লঞ্চ করা হয়। স্যানিটারি ন্যাপকিন ইন্ডাস্ট্রিতে বর্তমানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মার্কেট শেয়ার। এছাড়াও গত 2018 19 এ Femaie Hygiene ও Baby Care সেগমেন্টে এসিআই ৯৫% প্রবৃদ্ধি অর্জন করে।

এসিআই 2008 সালে ফুড বিজনেস প্রবেশ করে। ACI Pure Flour Ltd (ACFL) নামের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পিওর ব্রান্ডের আটা, ময়দা, সুজি, ব্রাউন আটা মাল্টিগ্রেইন আটা ইত্যাদি বাজারজাতকরণ করে। এর মধ্যে 30 শতাংশ শেয়ার মার্কেটে শক্ত অবস্থান করে নিয়েছেন এসিআই পিওর ফ্লাওয়ার লিমিটেড। অপরদিকে এসিআই ফুডস লিমিটেড নামের আরেকটি সাবসিডিয়ারির মাধ্যমে পিওর এবং ফান ব্রান্ডের অধীনে বেসিক স্পাইস, মিক্সড স্পাইস, নুডলস, রাইস, কেক, চানাচুর, ক্যান্ডি, চাটনি ইত্যাদি মার্কেটে এনেছে এসিআই।

স্বপ্ন ২০০৮ সালের সুপারস্টার হিসেবে এসিআই লজিস্টিকস অধীনে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশে যেমনঃ ঢাকা, চট্টগ্রাম, ও সিলেটে ১৩০টি আউটলেট এর মাধ্যমে ব্যবসা করেছে যার মধ্যে ৬১টি তার নিজের এবং বাকিগুলো ফ্র্যাঞ্জাইজিস্টোর। স্বপ্ন রিটেল চেইন মার্কেটের প্রায় ৫০% শেয়ার করে শীর্ষে আছে। স্বপ্ন Shwapno.com এর মাধ্যমে 2017 সালে ই-কমার্স মার্কেটে প্রবেশ করেছে।

এছাড়া বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে সম্প্রসারণে এসিআই লজিস্টিক গ্লোবাল G.A.P এর সাথে কাজ করে চলেছে। সুপার স্টোর হিসেবে আগোরা, মিনাবাজারের পরে আসলেও স্বপ্ন খুব দ্রুত মার্কেট শেয়ার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে শুরুতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় স্বপ্নকে। অন্যান্য সুপার শপ গুলোর মত শুরুতে স্বপ্নেরও টার্গেট ছিল দেশের এফলুয়েন্ট ক্লাসের লোকজন। যার কারনে শুরু থেকেই আগোরা ও মিনা বাজার এর কাছে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হওয়ার স্বপ্ন। একইসাথে হাইজিন মেইনটেন্যান্স বিভিন্ন পণ্য সহজলভ্যতার ব্যাপারে ক্রেতাদের অভিযোগ ছিল। এই কারণেই সেই সময় স্বপ্নের রিটেইল আউটলেট এর সংখ্যাও দিন দিন কমতে থাকে। 

পরবর্তীকালে বেশকিছু সময়োপযোগী পদক্ষেপ এর মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ায় স্বপ্ন। প্রোডাক্ট পোর্টফোলিও বাড়ানো, পণ্যের দাম কমানো, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার টার্গেট নিয়ে এগোতে থাকে সুপার শপটি। এবং পরবর্তীতে Seed To Shelf কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে সরাসরি এগ্রোলিংক্স ও লজিস্টিক একসাথে কাজ শুরু করে। সুপার শপ মার্কেটের প্রায় অর্ধেক দখল করে রাখলেও প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে কোন বছরই লাভের মুখ দেখেনি স্বপ্ন। এজন্য কোম্পানির এড এবং মার্কেটিং বিভাগে বেশি খরচ করা বড় রকমের লোন নেয়ার কারণে লোন বা ইন্টারেস্ট এক্সপেন্স বেশি হওয়ারকে কারণ হিসেবে ধরা যেত পারে। ভবিষ্যতের লোনের মাধ্যমে ফাইন্যান্সিং এর ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ইকুইটি ফাইন্যান্সিং এর ওপর জোর দেয়ার কথা চিন্তা করেছে এই কোম্পানিটি।

এসিআই Surface Care, Hygiene Supermarket And Food ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশের বছরেই ইলেকট্রনিক্স মার্কেট ওপেনিং প্যাকেজিং বিজনেস এ প্রবেশ করে। এ বছরই এসিআই বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ড Panasonic টিভি, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশ সহ বিভিন্ন অফিসের ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে এই সেগমেন্ট নিজেদের ব্র্যান্ড Sparkle এয়ার কন্ডিশনার বাজারজাত করা হয়। এ বছরের শেষ দিকে Premiaflex Plastics Ltd নামের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসিআই ফ্লেক্সাইবেল প্যাকেজিং, কনজ্যুমার, প্লাস্টিক, সহ অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও বাজারজাত করা শুরু করে। 

এসিআই 2012 সালে এডিবল অয়েল মার্কেটে প্রবেশ করে। ওই বছরেই এসিআই নিউট্রিলাইট রাইস ব্যান্ড অয়েল বাজারে নিয়ে আসে। ২৫% এর বেশি মার্কেট শেয়ার অর্জন করে রাইস ব্র্যান অয়েল মার্কেটে ভালো অবস্থান নিয়েছে নিউট্রিলাইফ। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল রাইস ব্র্যান অয়েল এর ধানের বাইরের স্তর থেকে সংগৃহীত উচ্চ তাপমাত্রা রান্না এবং ডিপ ফ্রাই এর জন্য উপযোগী তেল যাতে ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিন ই রয়েছে। এসিআই ২০১৬ সালে নিজেদের আর একটি ব্র্যান্ড পিওর সয়াবিন তেল বাজারে আনে। আমদানিকৃত ব্র্যান্ড Le Blanc Premium Sunflower Oil এর মাধ্যমে ব্যবসা করছে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি। ACI Edible Oils Ltd. ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় ছিল মাত্র ৭৭ কোটি টাকা এবং প্রফিট ছিল ১ কোটি টাকা।

ACI 2013 সালে Neem Laboratories Pvt Ltd. এ্যাকুয়ার করার মাধ্যমে হারবাল পণ্য বিক্রি শুরু করে। সেইসাথে দেশীয় পেইন্ট মার্কেটে যাত্রা শুরু করে। এসিআই পেইন্ট বিজনেস শুরু করার পর ডেকোরেটিভ, প্রটেক্টিভ, মেরিন ও পাউডার কোটিং ইত্যাদি সেগমেন্ট বিশ্বখ্যাত পেইন্ট ও কোটিং কোম্পানি Akzonobel এর বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেমন International, Dulux, Interpon, Duwel এর পণ্য বাজারে এনেছে। এসিআই পেইন্টস এর মোট বিদেশি-দেশি আরও ৪৪টি প্লেয়ার মার্কেটে থাকার কারণে বাংলাদেশে পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে খুব কম মার্কেট শেয়ার।

এই বছরের শুরুর দিকে US সহ অন্যান্য রেগুলেটেড ফার্মাসিটিক্যাল মার্কেটে ব্যবসা করার জন্য অনলাইন হেলথ কেয়ার লিমিটেড নামের একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জে কোম্পানিতে একটি মেনুফেকচারিং প্ল্যান আছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটি  মাত্র 300 কোটি টাকা আয় করলে ও মাত্র 35 কোটি টাকা লসের মুখ দেখেছে। 

এসিআই ২০১৪ সালে Men's Grooming এবং ২০১৫ সালে IT এবং মোবাইল ফোন মার্কেট প্রবেশ করে।যদিও কোম্পানিটি এসব বিজনেসে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই।

এসিআই এর সাবসিডিয়ারি কোম্পানি এসিআই মটরস ২০১৬ সালে জাপানিজ ব্র্যান্ড Yamaha এর মোটরসাইকেলের ডিলারশিপ অর্জন করার মাধ্যমে বাইক বিজনেস শুরু করে। ১৫০ সিসি সেগমেন্টের বাইক বিক্রিতে এসিআইয়ের আয় সবচেয়ে বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই এই সেগমেন্টের বাইক বিক্রিতে ৩৩% প্রবৃদ্ধি এসেছে। এসিআই বাংলাদেশের সর্বপ্রথম এন্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম সম্বলিত বাইক বাজারে আনে। ২০১৯ সালের মে মাসে এসিআই মটরস লোয়ার সেগমেন্ট অর্থাৎ 125cc এবং তার নিচের সেগমেন্ট গুলোই Original Equipment Manufacturer (OEM) হিসেবে প্রকাশ করার ঘোষণা দেয়।এবং Completely Built Unit (CBU) বাইক বিক্রির পাশাপাশি Completely Knocked Down (CKD) বাইক বিক্রয় করতে শুরু করে। এই উদ্দেশ্যে ACI মোটরস, ইয়ামহা মোটর কোম্পানি, ইয়ামহা মটরস ইন্ডিয়া সেলস এর সাথে যুক্ত হয়ে প্রায় 100 কোটি টাকা ব্যয়ে বাইক ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট প্রতিষ্ঠা করেছে।

গত 8 বছরের বেশি সময় ধরে লোকাল বাইক ম্যানুফ্যাকচারার ভ্যাট, শুল্ক ও ট্যাক্স রেটের ক্ষেত্রে সুবিধা পেয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইয়ামাহার মত বিদেশি বাইক ম্যানুফাকচাররা বাংলাদেশে ফ্যাক্টরি নির্মাণের মাধ্যমে বাইক ম্যানুফাকচারিংয়ে উৎসাহিত হয়েছে। এসিআই মটরস বেশ কয়েক বছর ধরে বেশি দামের ফায়ার স্টেটমেন্টে ব্যবসা করলেও 125cc ও তার নীচের সেগমেন্টে প্রবেশ করছে। 125cc প্রেগন্যান্ট এসিআই মটরস বাজারে এনেছে Yamaha Saluto Disc Brake মূল্য ১২০০০০ টাকা। এত কম দামে ইয়ামাহার বাইক এর আগে বাংলাদেশে আসেনি। যেটি ইয়াং জেনারেশনের বাইকপ্রেমিদের জন্য একটি সুখবর।

ACI Motors এর উল্লেখযোগ্য ব্রান্ডের বাইক এর কথা বলতে গেলে বলতে হয় FAZER FI, YZF R15 and FZS FI এর কথা। এছাড়াও ACI ঢাকা বাইক কার্নিভাল বাইক ফিয়েস্টা ও সবচেয়ে বড় বাইক লোগো বানিয়ে গিনেজ বুকে নাম উঠানোসহ ইত্যাদি ইভেন্টের মাধ্যমে দেশীয় বাইক মার্কেটে বিশেষ করে 150cc এবং হাইয়ার সেগমেন্টে বড় মার্কেটে শেয়ার অর্জনে এগিয়ে আছে।

গত তিন বছরে 19 শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছেন এসিআই। এই কোম্পানির অধীনে আরেকটি Strategic Business Unit হচ্ছে - Farm Mechanization. এই সেগমেন্টের সোনালিকা ট্রাক্টর প্রধান পণ্য।এছাড়াও এই সেগমেন্ট এর প্রোডাক্ট পোর্টফোলিও তে ডিজেল, ইঞ্জি, রিপার , রাইস ট্রান্সপ্লান্টা, ওয়াটার পাম্প, মিনি কম্বাইন্ড হারভেস্ট ইত্যাদি রয়েছে।

Agri-Machineries ছাড়াও কৃষি ক্ষেত্রে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এসিআই। ACI  Agrolinks Ltd. নামের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে কৃষকদের জন্য ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ তৈরি করা, এবং এদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি মার্কেটে আনার মাধ্যমে ফরোয়ার্ড ফুড মার্কেট পয়েন্ট তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে এফিসিয়েন্ট ডিসট্রিবিউশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সেইফ ফুড সেক্টর এ প্রবেশ করায় আগ্রুলিংস এর লক্ষ্য। ইতিমধ্যেই মহম্মদপুরে '' Fisharbour'' নামে একটি ফরোয়ার্ড মার্কেট তৈরি হয়েছে যার মধ্যে হাইজেনিক মাছ বিক্রি হবে। এছাড়াও এগ্রোলিংকসের মাধ্যমে চীন, মালয়েশিয়্‌ তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন কৃষি পণ্য ও কৃষক ও প্রান্তিক ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করার সুযোগও তৈরি করা হচ্ছে। 

Animal Healte  সেগমেন্ট Poultry, cattle, Vaccine ও  Aqua ইত্যাদি পণ্যের ব্যবসা করছে এসিআই। পশুর স্বাস্থ্যের জন্য দরকারি ভ্যাকসিনের কাঁচামাল আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গত বছর স্টেটমেন্ট প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩৫ %। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে একুয়া সেগমেন্ট প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৪%।

ACI এর ক্রপ কেয়ার সেগমেন্ট  উপস্থিত রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সেগমেন্টে এসিআই ১০% এর অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই সেগমেন্টে আয় কমেছে ৭%। ফসলের কম দামের কারণে দেশিয় সার শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রভাব পড়েছে এসিআই এর ওপর। তবে এসিআই এই সেগমেন্টের রত্ন ব্রান্ডের সার বাজারজাত করে সারের মার্কেটের 20% শেয়ার করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বৈচিত্র আনতে এসিআই রেডি মিক্স সয়েল বাজারে এনেছে কোম্পানিটি।
এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেগমেন্টে বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ড কোলগেট এর পণ্য বিক্রিতে প্রায় প্রতিবছরই 11 শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি থাকে। শিকাগোভিত্তিক কোম্পানি Merisant এর Equal ও Candeerel ব্র্যান্ডের সুইটনারের বিক্রিও বেশ ভালো। বৈচিত্র আনতে এসিআই ২০১৮ সালে সম্পূর্ণ নতুন উপাদানসমৃদ্ধ Equal ব্র্যান্ডের আরেকটি সুইটনার Stevia বাজারে আনে। একই বছর প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট হিসেবে "ACI Sandal Soap" বাজারে আনে কোম্পানিটি। এসিআই ও ডাবল ইন্ডিয়ার জয়েন্ট ভেঞ্চার কম্পানি Asian Consumer Care এর মাধ্যমে ডাবরের বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশের বাজারজাত করেছে।এছাড়াও লেজার ব্র্যান্ড এর সেভেন ফোনের মাধ্যমে ম্যানস গ্রুমিং সেগমেন্ট উপস্থিতি ধরে রেখেছে কোম্পানিটি।

শেষ কথাঃ এসিআই কত বড়

এসিআই কত বড় প্রতিবছর নতুন কোন বিজনেস যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে এসিআই এর রেভিনিউ
বাড়লে ওইসব বিজনেসের রিস্ক এবং ভলাটিলিটি এফেক্ট পরেছে কম্পানির প্রফিটেবিলিটিকে। এর ফলে কোন বছর নীট প্রফিটে বড় গ্রোথ থাকলেও কোন বছরে লস এর সম্মুখীন হয়েছে কোম্পানিটি।
আশা করি, এসিআই কত বড় তার সম্পূর্ণ বর্ণনা দিয়ে আপনাদের সামনে নিবন্ধটি উপস্থিত করতে পেরেছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। যদি আপনাদের আমাদের এই পোস্ট সম্পর্কে কোন মন্তব্য থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট সেকশনে জানান। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url