OrdinaryITPostAd

জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত এবং রোজা সমূহ ২০২২

মুসলিমদের কাছে জিলহজ্জ একটি অতি মহিমান্বিত মাস। এই মাসের সামান্য কিছু আমল করলে দেখা যায় অনেক সওয়াব। আর এই জন্যই আমরা জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত নিয়ে এতটা সতর্ক থাকি। আমরা সবসময় চেষ্টা করি কিভাবে জিলহজ মাসের আমল কে আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করা যায়। বা ভাবতে থাকি জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলত আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কিভাবে প্রদান করবেন?


বলা হয়ে থাকে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল সারা বছরের সমস্ত আমলের থেকে অনেক বেশি গুন সওয়াব সমৃদ্ধ এবং ফজিলতপূর্ণ। আর সে জন্যই আপনাদের অনেক প্রশ্ন এবং অনেক উত্তরের সমাধান দেওয়ার জন্যই আমাদের আজকের পোস্ট। এখান থেকে আপনি জানতে পারবেন,

১. জিলহজ্জ মাসের আমল সমূহ 
২. জিলহজ্জ মাসের ফজিলত এবং আমল সমূহের ফজিলত
৩. জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলত 
৪. জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল 
৫. জিলহজ্জ মাসের রোজা এবং রোজার ফজিলত
৬. জিলহজ্জ মাসের রোজা কয়টি এবং 
৭. জিলহজ্জ মাসের রোজার নিয়ত ইত্যাদি।

জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত | জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলত | জিলহজ্জ মাসের রোজা কয়টি | জিলহজ্ব মাসের প্রচলন ও গণনা

আমরা সবাই জানে আরবি হিসাবমতে মাস সংখ্যা মোট ১২ টি। আর জিলহজ মাস আরবি ক্যালেন্ডার এর সর্বশেষ বারোতম মাস হিসেবে পরিচিত। মুসলিম উম্মাহর কাছে এই মানুষটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস কেননা এই মাসেই পৃথিবীর সমস্ত সামর্থ্যবান মুসলিমগণ পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা ও মদিনার পথে রওনা হন। প্রাচীন আরব সমাজের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে এই মাসকে রক্তপাতহীন মাস বলা হত। কারণ এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ ছিল নিষিদ্ধ।

পবিত্র কুরআনে এই মাসের ফজিলত এবং হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ১৯৭ নম্বর আয়াতে বলেছেন,

"হজ সম্পাদন সুবিদিত মাসসমূহে। অতঃপর যে কেউ এই মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে, তার জন্য হজের সময়ে স্ত্রীসম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নহে। তোমরা উত্তম কাজে যা কিছু করো, আল্লাহ তা জানেন এবং তোমরা পাথেয়র ব্যবস্থা করবে, আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ, তোমরা আমাকে ভয় করো।"

অন্যদিকে আমাদের বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন, 

"রাসূলে পাক কারিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে তিনি বলতে শুনেছেন, " জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল আল্লাহ তাআলার নিকট জতটা প্রিয়, তা আর অন্য কোন সময়ের ইবাদতের নয়।" এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাহাবারা তাঁকে প্রশ্ন করলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করার থেকেও কি প্রিয়? নবীজী উত্তর দিলেন, হ্যা্‌ তবে কোন ব্যক্তি যদি টারজান মান নিয়ে ইতিমধ্যেই আল্লাহর পথে বের হয়ে যায় এবং এখন পর্যন্ত ফিরে আসে তবে সেই বিষয়ে ভিন্ন।"

অন্যদিকে ইসলাম এই মাসের গুরুত্ব অনেক। কেননা এই মাসে ঘটেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) -কে একদা মহান আল্লাহতালা স্বপ্নে দেখালেন যে, তিনি তাঁর প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) -কে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করছেন। এই বিষয়ে পরবর্তীতে তিনি তাঁর পুত্রকে জানালে হযরত ইসমাইল (আঃ) বললেন, " হে আমার পিতা, আপনাকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আপনি সেই নির্দেশ পালন করুন। নিশ্চয় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্গত পারবেন।" পুত্রের উত্তর পেয়ে ইব্রাহিম (আঃ) সন্তুষ্ট হলেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে কুরবানীর উদ্দেশ্যে গলায় ছুরি চালালেন।

কিন্তু অতি আশ্চর্যের বিষয় আল্লাহর কুদরতে সেখানে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) একটি দুম্বা কুরবানী করলেন। এবং ইসমাইল (আঃ) সম্পূর্ণ অক্ষত রয়ে গেলেন। আর এটি ছিল ঠিক জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখের ঘটনা। পরবর্তীতে এই স্মৃতি রক্ষার্থে আমরা আজও মুসলিম সমাজ, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিবছরের জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পশু কুরবানী করে থাকি।

অন্যদিকে যে সমস্ত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ হজ্ব পালনের জন্য বায়তুল্লাহর উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা ৮ এবং ৯ জিলহজ আমাদের রাসূলের দেখানো নিয়ম মোতাবেক ইহরাম বাঁধেন, কাবা শরীফ তাওয়াফ করেন, সাঈ করেন, মদিনায় অবস্থান করা সহ আরো বিভিন্ন কাজ পালনের মাধ্যমে নিজেদের এবং দুনিয়ার গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করেন।

এই ঘটনাকে আল্লাহ তা'আলা মহিমান্বিত এবং সম্মানিত করার জন্য এই মাসের প্রথম দশদিনের রোজা সহ বিভিন্ন যাবতীয় ইবাদত কে তিনি অতি পছন্দনীয় এবং অতি ফজিলতপূর্ণ বলে তার বান্দাদের উপর রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করেন।

জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলত | জিলহজ্জ মাসের রোজা | জিলহজ মাসের আমল | জিলহজ্জ মাসের রোজার ফজিলত | জিলহজ্জ মাসের রোজা কয়টি

জিলহজ মাসের রোজা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হিসেবে পরিচিত। সেই হিসেবে চলতি বছরের জুলাই মাসের ১১ তারিখ যদি জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যায় তবে ১২ জুলাই থেকে জিলহজ মাস শুরু হবে। এবং সেই হিসেব মতে ২১ তারিখ আমাদের পবিত্র ঈদুল আজহা ও কুরবানীর ঈদ উদযাপিত হবে। আর এই চাঁদ দেখা যাওয়ার পরের দিন থেকেই অর্থাৎ ১ জিলহজ থেকেই পবিত্র জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের রোজা শুরু হবে। মুসলিম রীতি সম্পূর্ণভাবে চাঁদের উপর নির্ভরশীল। চাঁদ দেখা যাওয়ায় ভিত্তিতে এই দিন কমবেশি হতে পারে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে জিলহজ মাসের রোজা কয়টি? দশটি নাকি নয়টি? চলুন এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। আরবি তারিখ অনুযায়ী ৮,৯ এবং ১০ জিলহাজ্জ আমরা মক্কা-মদিনায় হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে অবস্থান করে থাকি। এর মধ্যে ৮ এবং ৯ তারিখ হজের মূল কাজ এবং ১০ তারিখ পশু কুরবানি এবং মাথা মুণ্ডন ও ইহরাম ত্যাগের মধ্য দিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।

অন্যদিকে আমরা জানি বছরের বিশেষ কিছু দিনে রোজা রাখ আল্লাহ তাআলা হারাম করেছেন। তার মধ্যে ঈদুল আযহার দিন অন্যতম। তারমানে ১০ জিলহজ যেহেতু মুসলিম উম্মাহ পবিত্র কুরবানী হিসেবে উদযাপন করে আসে তাই এই দিনে রোজা রাখা হারাম। এখন বাকি থাকলো ৯ দিন। হ্যাঁ আপনি যদি সুস্থ সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে থাকেন তবে আপনার জন্য এই রোজা রাখা জায়েজ আছে। আর মহিমান্বিত প্রথম ১০ রাত্রি বিষয়ে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, "শপথ ভোরবেলার! শপথ ১০ রাতের।'' অর্থাৎ রোজা মোট নয়টি।

অর্থাৎ আপনি যদি জিলহজ মাসের রোজা রাখতে চান বা জিলহজ মাসের রোজা কয়টি- বিষয় নিয়ে কনফিউশনে থাকেন তবে আমাদের পোস্ট নির্দ্বিধায় করে সে অনুযায়ী আমল করতে পারেন। 

জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত | জিলহজ মাসের আমল | জিলহজ্জ মাসের ফজিলত | জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলত

জিলহজ মাসে বেশ কিছু নিয়ম আহকাম মেনে চলতে হয়। কেননা বছরে বারটি মাসের মধ্যে মোট চারটি মাসকে মহিমান্বিত বলে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন আর এই চারটি মাসের মধ্যে আবার জিলহজ মাস সবচেয়ে উত্তম। আর সেই চারটি মাস হল-

১. জিলকদ
২. জিলহজ
৩. মুহাররম
৪. রজব।
এমনকি এই চারটি মাসের সমস্ত প্রকারের যুদ্ধ-বিগ্রহ মারামারি রক্তপাত সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআন শরীফে সুরা আত তাওবাহঃ আয়াত নাম্বার ৩৬, বলেছেন, 

"প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি, যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।" এই জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত প্রসঙ্গে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 

"জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ইবাদত মহান আল্লাহ তাআলার নিকট অন্য সকল দিনের ইবাদত এর তুলনায় অতি বেশি প্রিয়। এই মাসের একটি রোজা এক বছরের রোজার মত ফজিলতপূর্ণ। এক রাতের ইবাদত, লাইলাতুল কদরের রাতের ইবাদত করার সমতুল্য।" (তিরমিজি প্রথম খন্ড)

অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে এই মাসের ইবাদত করার ফজিলত।


যেহেতু জিলহজ মাসের ফজিলত এবং জিলহজ্ব মাসের আমল অতি তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য এই মাসে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা এবং জিলহজ্ব মাসের আমল সেই নিয়ম মোতাবেক পালন করা ভালো। যেমন- 

জিলহজ মাসের আমলঃ

  • জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে নখ, চুল না কাটায় উত্তম

  • যদি সামর্থ্য থাকে তবে ১০ জিলহজ আল্লাহর নামে পশু কুরবানী করা। তবে সমস্যা থাকলে পরের দুই দিনও কুরবানী করা যায়। আর কুরবানী করার ফজিলত অবর্ণনীয়। রাসুল (সঃ) বলেছেন, " কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে কুরবানীদাতা কে একটি করে সওয়াব প্রদান করা হয়।" সুবহানাল্লাহ.....

  • সুস্থ ও সবল অবস্থায় থাকলে ১ জিলহজ থেকে ৯ জিলহজ পর্যন্ত রোজা রাখা। তবে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ রোজা হলো আরাফার দিনের রোজা রাখা অর্থাৎ ৯ই জিলহজ সিয়াম পালন করা অতি ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। তবে এখানে অনেকের মনে প্রশ্ন আসে জিলহজ্জ মাসের রোজার নিয়ত কিভাবে করতে হয়? বা জিলহজ্জ মাসের রোজার নিয়ত কি?

    উল্লেখ্য যে জিলহজ্জ মাসের রোজার ফজিলত পূর্ণ। তাই সঠিকভাবে জিলহজ্জ মাসের রোজার নিয়ত করা একান্ত কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে অনেকেই বলেন যে আরবি ভাষায় নিয়ত করতে হবে না হলে নিয়ত হবে না। কিন্তু বিষয়টা এরকম না নিয়ত বলতে বোঝানো হয় মনের উদ্দেশ্য।

    তাই আপনি যদি মাতৃভাষায় স্বাভাবিক ভাবে মনে মনে বলেন, আমি জিলহজ মাসের নফল রোজা করার উদ্দেশ্যে সেহরি খাচ্ছি। তাহলেও আপনার নিয়ত হয়ে যাবে। আবশ্যক নয় যে সেটি আপনার মুখে উচ্চারণ করে বলতে হবে। তবে যেদিন রোজা করবেন তার আগের দিন রাতের ভাগে নিয়ত করাটা ভালো। দ্বিপ্রহরের পরে নিয়ত করলে সে নিয়ত কার্যকর হবে না।

  • বেশি বেশি বিভিন্ন ধরনের নফল নামাজ (তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, সালাতুল তাসবীহ, আওয়াবীন ইত্যাদি) , বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত, তাজবি তাহলীল পাঠ, ইস্তেগফার, দরুদ, তাকবীর, তওবাহ, বিভিন্ন দোয়া বেশি বেশি করে পড়া, বিভিন্ন ধরনের আল্লাহর নামের জিকির যত বেশি পারা যায় বেশি করে পড়া। তবে সব সময়ের ইবাদত হিসেবে ইস্তিগফার এবং সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়া ভালো।

  • যত বেশি সম্ভব দান-খয়রাত ও সদকা করা অনেক ফজিলত পূর্ণ আমল। আর বর্তমানে যেহেতু করোনা মহামারী পর্যায় চলছে তাই এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে খোঁজ খবর নেওয়া, প্রয়োজনে আর্থিকভাবে তাদের সাহায্য করা মুসলিম হিসেবে আমাদের ঈমানী দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর এর ফজিলত এবং একমাত্র সুবহানাল্লাহ তাআলা দিবেন। কেননা দান এর মত বড় নফল ইবাদত আর কোনটাই হয় না।

  • সম্ভব হলে গোলাম আজাদ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদতের মধ্যে পড়ে।

  • এই পরেও যদি আপনার যথেষ্ট সামর্থ্য থেকে থাকে তবে জিলহজ মাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে আপনি মক্কা-মদিনায় অবস্থান করতে পারেন এবং যাবতীয় হজ্জের নিয়মাবলী পালনের মধ্য দিয়ে এবং ওমরাহ সম্পন্ন করতে পারেন।

জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত | জিলহজ মাসের আমল | জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলত | জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল | 

এতক্ষণ আমরা জানলাম জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে আমরা কি কি আমল সমূহ পালন করতে হবে। এবার আমরা জানবো জিলহজ্ব মাসের আমল এবং সে সমস্ত আমলের বিস্তারিত রুপ। কেননা সহিহ উচ্চারণ এবং সঠিকভাবে যদি আমলসমূহকে না করা হয় তবে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। বরং উচ্চারণ ভুলের কারণে আমরা গুনাগার হব। তাই ইবাদত করার পাশাপাশি সহি উচ্চারণ এবং সঠিক নিয়ম মত ইবাদত করা মুসলিম হিসেবে আমাদের একান্ত কর্তব্য।

বিভিন্ন তাকবীর, দোয়া, জিকির এবং ইস্তিগফার সমূহঃ

তাকবীর বলতে বোঝায় মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা। এ সময় গুলোতে পুরুষ মানুষের জন্য উচ্চস্বরে এবং মহিলাদের জন্য নিম্নস্বরে তাকবীর পাঠ করা অনেক ফজিলত পূর্ণ।

তাকবীরঃ

o اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لَاإِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الحَمْدُ
(আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ্‌)
অর্থঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য।

এছাড়া আমরা হজ পালন করতে যাওয়ার সময় যে তাকবীর পাঠ করি- 

لَبَّيْكَ ٱللَّٰهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ ٱلْحَمْدَ وَٱلنِّعْمَةَ لَكَ oوَٱلْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ
(লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাক) 
অর্থঃ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার)

উপরোক্ত এই তাকবীর টি ৯ জিলহজ সূর্যাস্তের পর থেকে ১৩ জিলহজ সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পরবর্তী সময়ে বারবার পড়া ফজিলত পূর্ণ আমল।


দোয়াঃ
এছাড়া আপনি বেশ কিছু দোয়া নিজের গুনাহ মাফ এবং মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন। যেমন-

o رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
(রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন)
অর্থঃ হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন। আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
(রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।)
অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।

o سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
(সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির)
অর্থঃ আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
(রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন)
অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।

رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ
(রাব্বিবনি লি ইংদাকা বাইতান ফিল জান্নাহ)
অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহনির্মাণ করুন, আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে জালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিন।


জিকিরঃ

o سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيمِ
(সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম)
অর্থঃ আমরা আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, মহান আল্লাহ্ অতি পবিত্র।

سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَ زِنَةَ عَرْشِهِ وَ مِدَادَ كَلِمَاتِه
(সুবহানাল্লাহি আদাদা খালক্বিহি ওয়া রিদা নাফসিহি ওয়া ঝিনাতা আরশিহি ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি)
অর্থঃ আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর অসংখ্য মাখলুকের পরিমাণ, তার সন্তুষ্টির সমান, তাঁর আরশের ওজন পরিমাণ এবং তাঁর কালিমাসমূহের সংখ্যার সমান।

o اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَ الْإِكْرَامِ
(আল্লা-হুম্মা আন্তাস্ সালা-মু ওয়া মিন্কাস্ সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরাম)
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক।

لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، لاَحَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إلاَّ بِاللهِ- اَللَّهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَى ذِكْرِكَ وَ شُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ، اَللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ O يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর; লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ (উঁচুস্বরে)।[176] আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুক্রিকা ওয়া হুসনে ‘ইবা-দাতিকা। আল্লা-হুম্মা লা মা-নে‘আ লেমা আ‘ত্বায়তা অলা মু‘ত্বিয়া লেমা মানা‘তা অলা ইয়ান্ফা‘উ যাল জাদ্দে মিন্কাল জাদ্দু)

অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, যিনি একক ও শরীকবিহীন। তাঁরই জন্য সকল রাজত্ব ও তাঁরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী। নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি, আল্লাহ ব্যতীত। হে আল্লাহ! আপনাকে স্মরণ করার জন্য, আপনার শুকরিয়া আদায় করার জন্য এবং আপনার সুন্দর ইবাদত করার জন্য আমাকে সাহায্য করুন।হে আল্লাহ! আপনি যা দিতে চান, তা রোধ করার কেউ নেই এবং আপনি যা রোধ করেন, তা দেওয়ার কেউ নেই। কোন সম্পদশালী ব্যক্তির সম্পদ কোন উপকার করতে পারে না আপনার রহমত ব্যতীত।

ইস্তিগফারঃ
এছাড়া আমাদের নিজেদের পাপমোচন সহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষমা প্রার্থনা মূলক হিসেবে আমরা যেগুলো পাঠ করি সেগুলো মূলত ইস্তিগফার হিসেবে পরিচিত। এরকম কয়েকটি ইস্তেগফার দেখে নিই-

اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ Oعَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ

(আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা)

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই।

এটি মূলত সাইয়েদুল ইস্তেগফার। এটিকে বলা হয় সকল ইস্তেগফার এর শ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার। কারণ এখানে সব ধরনের অনিষ্ট হতে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়।

أَستَغْفِرُ اللهَ
(আস্তাগফিরুল্লাহ)
অর্থঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

O أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
(আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি)
অর্থঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

O أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
(আস্‌তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি)
অর্থঃ আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই ফিরে আসি।

O رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
(রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম)
অর্থঃ হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।

اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ
(আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বিওঁ ওয়া আতুবু ইলাইহি; লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম) 
অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই আমার সব পাপের, আমি তাঁর কাছে ফিরে আসি। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া গুনাহ থেকে বাঁচার ও নেক কাজ করার কোনোই শক্তি নেই।

জিলহজ্জ মাস মুমিন ব্যক্তিদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস। এই নয় দিনের রোযা এবং দশমদিনের কুরবানীর মাধ্যমে তাদের আল্লাহর রাস্তায় পরিচয় বহন করে। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে অত্যন্ত পছন্দের একটি কাজ। তাই সৎ উদ্দেশ্য এবং সৎ নিয়ত নিয়ে আমরা কোরবানি করব এবং জিলহজ্ব মাসের যাবতীয় নিয়ম কানুন মেনে সমস্ত ইবাদত করুন। আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'য়ালা আমাদেরকে কবুল করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url