রাতকানা রোগ কেন হয় - রাতকানা রোগের প্রতিকার কি বিস্তারিত
রাতকানা রোগ কেন হয়রাতকানা রোগ কেন হয় তা কি আপনি জানতে চান? এই রোগে যারা ভোগছে, তারা অন্ধকারের মাঝে একেবারে চোখে দেখতেই পায় না। এটা শুধু ভয়ংকর না, অনেক সময় বিপজ্জনকও হতে পারে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ রাতকানা রোগ কেন হয় এ নিয়ে বিস্তারিত সবকিছু
- রাতকানা রোগ কেন হয়
- রাতকানা রোগ কি ভালো হয়
- রাতকানা রোগের প্রতিকার কি
- রাতকানা রোগের লক্ষণ
- রাতকানা কাদের বেশি হয়
- রাতকানা হয় কিসের অভাবে
- ভিটামিন-এ এর অভাব ও প্রভাব
- শিশুরা কেন রাতকানায় বেশি ভোগে
- খাদ্যাভ্যাসে ভুলের প্রভাব
- চিকিৎসা না করলে কী হতে পারে
- পরিশেষে আমার মতামত
রাতকানা রোগ কেন হয়
রাতকানা রোগ কেন হয় এই প্রশ্নের উত্তর জানাটা আমাদের চোখের সুস্থতার জন্য খুবই জরুরি। রাতকানা একটি চোখের সমস্যা, যেখানে একজন ব্যক্তি কম আলো বা অন্ধকারে স্পষ্ট দেখতে পারে না। এটি সাধারণত ভিটামিন এ এর ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে, তবে আরও কিছু কারণ রয়েছে। আমাদের এই পোস্টে এ নিয়ে জানব।
প্রথমত, ভিটামিন এ এর ঘাটতি হলে চোখের রেটিনায় প্রভাব পড়ে। এই ভিটামিনটি চোখের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা আলোকে সঠিকভাবে গ্রহণ করতে সাহায্য করে। যখন শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ থাকে না, তখন চোখ রাতের আলোতে ভালোভাবে কাজ করতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, অপুষ্টির কারণে এই রোগ বেশি দেখা যায়। অনেক শিশু ও নারী এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়, কারণ তারা নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার পায় না। এটি শুধু চোখের সমস্যা নয়, বরং একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় অন্যরকম একটা প্রভাব ফেলে।
তৃতীয়ত, জেনেটিক বা বংশগত কারণেও রাতে দেখতে অসুবিধা হতে পারে। যাদের পরিবারে আগে কেউ রাতকানা রোগে ভুগেছে, তাদের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি থাকে। এছাড়া কিছু লিভারের রোগ, ডায়াবেটিস ও দীর্ঘদিনের কিছু ওষুধ খেলেও চোখের উপর প্রভাব পড়ে।
রাতকানা রোগ কি ভালো হয়
রাতকানা রোগ একটি চোখের সমস্যা, যেখানে একজন আলো কমে গেলে অর্থাৎ অন্ধকারে কিছু দেখতে পায় না। সাধারণত ভিটামিন এ এর ঘাটতি থেকেই এই সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশুরা এবং গর্ভবতী নারীরা এতে বেশি ভোগে। তবে অনেক ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, লিভারের সমস্যা, কিংবা কিছু জেনেটিক কারণেও এই রোগ হতে পারে।
আমাদের মাঝে অনেকে মনে করেন এই রোগ শেষ যায় না। কিন্তু সত্যি হলো পর্যাপ্ত পুষ্টি, বিশেষ করে ভিটামিন এ গ্রহণ করলে এর প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে চোখের অবস্থা আবার ফেরানো যায়। তাই, রাতকানা রোগ কি ভালো হয় এই প্রশ্নের উত্তর হলো, হ্যাঁ, যদি তা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা শুরু করা হয়।
রাতকানা রোগের প্রতিকার কি
রাতকানা রোগ প্রতিকারে মূল ভুমিকা রাখে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও চিকিৎসা। মূলত ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এর প্রধান প্রতিকার। গাজর, মিষ্টি কুমড়ো, কলিজা, ডিমের কুসুম, পাকা আম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। শিশুদের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোও এ রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
চোখের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা উচিত। অনেক সময় জটিল রোগে চোখের ভিতরের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন অস্ত্রোপচার লাগতেও পারে। তাই প্রাথমিক লক্ষণ দেখলেই দেরি না করে চিকিৎসা নেওয়াটা জরুরি। তাই বলা যায় রাতকানা রোগের প্রতিকারের সহজ ও কার্যকর উপায় হলো, সচেতনতা, খাদ্য, ও চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া।
রাতকানা রোগের লক্ষণ
রাতকানা রোগের লক্ষণ সাধারণত হচ্ছে অন্ধকারে দেখার সমস্যা হয়। একজন ব্যক্তি দিনের আলোতে ঠিকঠাক দেখতে পেলেও সন্ধ্যার পর হঠাৎ করে ঝাপসা দেখা শুরু করে। এটি ধীরে ধীরে এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, যেখানে রাতের বেলা একদম কিছুই দেখা যায় না। চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে আসা, চোখে জ্বালাপোড়া এসবও রাতকানা রোগের লক্ষণ। শিশুদের ক্ষেত্রে খেলার সময় বস্তু চিনতে না পারা বা হোঁচট খাওয়া লক্ষণ হতে পারে। এই সব ঘটনাই ইঙ্গিত করে যে শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব রয়েছে।
রাতকানা কাদের বেশি হয়
রাতকানা কাদের বেশি হয় এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে আমাদের মাঝে কারা এই রোগের ঝুঁকিতে থাকে। সাধারণত যেসব মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভোগে, বিশেষ করে যাদের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন-এ এর অভাব রয়েছে, তাদের মাঝে রাতকানা রোগ দেখা যায়। শিশুরা, গর্ভবতী নারী ও বৃদ্ধরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।

রাতকানা হয় কিসের অভাবে
রাতকানা হয় কিসের অভাবে এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে, ভিটামিন-এ এর অভাব। এই ভিটামিন চোখের দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে। যখন খাদ্যতালিকায় ভিটামিন-এ এর পরিমাণ কম থাকে, তখন চোখে প্রয়োজনীয় পিগমেন্ট তৈরি হয় না, যা রাতের অন্ধকারে দেখার জন্য দরকার। এটি না থাকার কারণে এই রোগ হতে শুরু করে।
বিশেষ করে গাজর, পালং শাক, কুমড়া, মাছ, ডিম ইত্যাদি খাবারে ভিটামিন-এ থাকে, যা না খেলে চোখে ধীরে ধীরে সমস্যা দেখা দেয়। রাতকানা রোগ কেন হয় এটি বোঝা গেলে, আমরা আমাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে সহজেই এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারব এবং এই রোগ থেকে মুক্তি পেতা পারব।
ভিটামিন-এ এর অভাব ও প্রভাব
ভিটামিন-এ এর অভাব ও প্রভাব চোখের উপর সরাসরি পড়ে। চোখের রেটিনা স্বাভাবিকভাবে কাজ করার জন্য এই ভিটামিনের উপর নির্ভর করে। এর অভাবে চোখ শুষ্ক হয়ে যায় এবং রাতকানার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। এটি শুধু দৃষ্টিশক্তি নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। শিশুরা যদি নিয়মিতভাবে এই ভিটামিন না পায়, তবে তারা রাতের বেলা দেখায় সমস্যায় পড়ে এবং মারাত্মক অবস্থা তৈরি হয়। ভিটামিন-এ এর অভাব ও প্রভাব বোঝার মাধ্যমে আমরা খাদ্যাভ্যাসে গাজর, দুধ, ডিম, ও সবুজ শাকসবজি রাখলে চোখের সুস্থতা বজায় রাখতে পারি।
শিশুরা কেন রাতকানায় বেশি ভোগে
শিশুরা কেন রাতকানায় বেশি ভোগে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের প্রথমেই শিশুর পুষ্টির দিকে তাকাতে হবে। জন্মের পর থেকে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সঠিক পুষ্টি খুবই জরুরি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, অনেক শিশুই পুষ্টির ঘাটতির কারণে ভিটামিন-এ পাচ্ছে না। ফলে তারা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। অনেক শিশু দরিদ্র পরিবারে হবার কারণেও পুষ্টি পাচ্ছে না।
ভিটামিন-এ এর ঘাটতি হলে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায় কারণ তারা খাবার বেছে খেতে পছন্দ করে এবং অনেক সময় ফল ও সবজির প্রতি অনীহা দেখায়। এর ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন-এ কমে যেতে থাকে। যার ফলে এই ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। আশা করি এ থেকে বুঝতে পেরেছি যে রাতকানা রোগ কেন হয়।
পাশাপাশি, দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুরা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে রাতকানা রোগ কেন হয় এই প্রশ্নের বড় একটি উত্তর শিশুদের অপুষ্টি। শিশুরা পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেলে চোখের রেটিনা দুর্বল হয়ে পড়ে, এবং সন্ধ্যার পর ভালোভাবে দেখতে না পাওয়ার সমস্যা শুরু হয়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ, ডিম, গাজর, কুমড়া, ও শাকসবজি থাকলে রাতকানা প্রতিরোধ করা সম্ভব। শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা এই রোগ থেকে মুক্তির প্রধান উপায়।
খাদ্যাভ্যাসে ভুলের প্রভাব
খাদ্যাভ্যাসে ভুলের প্রভাব রাতকানা রোগের অন্যতম কারণ হয়ে উঠে। আমাদের প্রতিদিনের খাবারই ঠিক করে আমরা সুস্থ থাকব কি না। কিন্তু অনেক সময় আমরা খাদ্যের গুণগত মানের দিকে নজর না দিয়ে শুধু পেট ভরানোর দিকে মনোযোগ দেই। যার ফলে অনেক উল্টাপাল্টা খাবার খাই ভালো খাবার বাদ দিয়ে।
বিশেষ করে যারা সবজি ও ফলমূল খেতে চায় না, কিংবা যারা বাইরের তেলে ভাজা খাবার খেতে পছন্দ করে, তারা শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন-এ পায় না। এর ফলে চোখের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমে যায়। শিশুদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্করাও এই সমস্যায় পড়তে পারে।
এছাড়া ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন গাজর, কলিজা, ডিম, কুমড়া ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় না রাখলে ধীরে ধীরে রাতের আলোতে দেখার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এমন ভুল খাদ্যাভ্যাসেই দেখা দেয় রাতকানা। খাদ্যাভ্যাসে ভুলের প্রভাব প্রতিরোধে আমাদের সচেতন হতে হবে। প্রতিদিনের খাবারে পুষ্টিকর উপাদান রাখার পাশাপাশি শিশু ও বয়স্কদের পুষ্টি বিষয়ে সচেতন করা জরুরি।
চিকিৎসা না করলে কী হতে পারে
আমার যদি রাতকানা রোগের চিকিৎসা না করি তাহলে কী হতে পারে? এই প্রশ্নটির উত্তর জানলে আপনি রাতকানাকে কখনোই অবহেলা করবেন না। প্রাথমিক অবস্থায় এটি শুধু অন্ধকারে ভালো না দেখার সমস্যা হলেও, সময়মতো চিকিৎসা না হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।

পরিশেষে আমার মতামত
প্রিয় পাঠক, আমরা আমাদের এই পোস্টে রাতকানা রোগ কেন হয় এ সম্পর্কে জেনেছি। এবং এটি বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে ভিটামিন-এ কীভাবে আমাদের চোখের স্বাভাবিক কাজের সঙ্গে জড়িত। আমরা এ সম্পর্কেও এই পোস্টে জেনেছি। এই পুষ্টি উপাদানের অভাবে চোখের রেটিনা রাতের অন্ধকারে আলো সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারে না। ফলে রাতে স্পষ্ট দেখতে অসুবিধা হয়, এটিই হচ্ছে রাতকানা রোগের মূল লক্ষণ।
বিশেষ করে শিশুরা এই রোগে বেশি ভোগে। কারণ তাদের দেহে পুষ্টির চাহিদা বেশি এবং সচেতনতা কম। অনেকে সময় শিশুরা এমন খাবার পায় না, যেখানে পর্যাপ্ত ভিটামিন-এ থাকে। আবার অনেক বাবা-মাও জানে না কোন খাবারে কী পুষ্টি আছে। ফলে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে ঘাটতি থেকে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুরা সবজি বা ফল খেতে চায় না, অথচ এগুলোই তাদের চোখের জন্য উপকারী।
আমার মতে, সময়মতো চিকিৎসা, সঠিক পুষ্টি ও সচেতনতা অপরিহার্য। শিশুদের খাদ্যতালিকায় গাজর, কুমড়া, শাকসবজি, ডিমের কুসুম, কলিজা ইত্যাদি রাখা উচিত। পাশাপাশি সরকারি বা বেসরকারি ভিটামিন-এ ক্যাপসুল কার্যক্রমে অংশগ্রহণও রাতকানা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।
সবশেষে আমি বলব, রাতকানা রোগ সম্পর্কে জানার পর আমাদের উচিত এই রোগের প্রতিরোধে কাজ করা। আশা করি আমাদের কথা আপনি বুঝতে পেরেছেন এবং এই রোগ প্রতিরোধ করতে আপনি সক্ষম হবেন। এবং আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন যে রাতকানা রোগ সম্পর্কে। [250412]
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url