নামাজে ভুল হলে কি করতে হয় বিস্তারিত জানুন
নামাজে ভুল হলে কি করতে হয় এটি জানা প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব। কেননা নামাজের মধ্যে আমরা নিজেদের অজান্তে অনেক ভুল ও ত্রুটি করে ফেলি যার ফলে নামাজ শুদ্ধ হয়না। তাই নামাজের মধ্যে এই ভুল গুলো হয়ে গেলে কি করতে হয় সে সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত।
নামাজ হলো মুসলিমদের ফরজ ৫টি ইবাদতের মধ্যে অন্যতম একটি ইবাদত। নামাজকে বলা হয় বেহেস্তের চাবি। অর্থাৎ নামাজ ছাড়া জান্নাত পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের মধ্যে যদি ভুল হয়ে যায় তাহলে এটির সমাধান জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
নামাজে ভুল হলে কি করতে হয়
- নামাজে ভুল হলে কি করতে হয়
- নামাজে কি কি ধরনের ভুল হতে পারে
- সাহু সিজদা কখন করতে হয় ও করার নিয়ম
- ফরজ রুকন বাদ পড়লে নামাজ শুদ্ধ হয় কি না?
- নামাজে রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে করণীয়
- অতিরিক্ত রাকাত পড়ে ফেললে করণীয়
- সালাম ভুলে আগে দিয়ে ফেললে কি করতে হয়?
- তাশাহুদ পড়তে ভুলে গেলে কি করতে হয়?
- পোশাক বা শরীরে নাপাক কিছু থাকলে নামাজে করণীয় কি?
- শেষ কথাঃ নামাজে ভুল হলে কি করতে হয়
নামাজে ভুল হলে কি করতে হয়
নামাজে ভুল হলে কি করতে হয় এটি হচ্ছে প্রায় সকল মুসলিমদের কমন প্রশ্ন। নামাজে ভুল হলে আমাদের ইসলাম অনুযায়ী কিছু নিয়ম মানতে হয় যাকে বলা হয় সাহু সেজদা। সাহু সেজদা করলে নামাজ শুদ্ধ হয়ে যায়। সাহু সেজদাকে আবার অনেক নামে চেনা হয়ে থাকে। অনেক সাহু সেজদাকে সিজদা সাহু বা ভুলের সিজদাও বলে থাকেন। তবে যে যেই নামেই চিনুক না কেন সাহু সেজদা দেওয়ার নিয়ম কিন্তু একই।
নামাজে যদি নিজের অজান্তে কোন ভুল হয়ে যায় আর আপনি যদি এই বিষয়ে নামাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই অভিভূত হন এই বিষয়ে সেক্ষেত্রে আপনি সাহু সেজদা দিয়ে আপনার নামাজকে শুদ্ধ করে নিতে পারবেন। তবে এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে আপনার নামাজ শেষ হওয়ার পর বা সালাম ফেরানো হয়ে গেলে তখন সাহু সেজদা একটু ভিন্ন ভাবে দিতে হয়। নামাজ শেষে কিভাবে সাহু সেজদা দিতে হয় এখন এ বিষয়ে সংক্ষেপে জানবো।
সালাতের মধ্যে যদি কোন ওয়াজিব ভুল হয় এবং আপনি লক্ষ্য করেন নামাজের সালাম ফেরানোর পর সে ভুল সম্পর্কে অভিভূত হন। তাহলে আপনি সাহু সেজদা দিতে পারবেন। নামাজের সালাম ফেরানোর সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলে তাগবির দিয়ে নামাজে ফিরে গিয়ে বসে তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফেরানোর পর দুই সিজদা করে বা সিজদায়ে সাহু করে নামাজ পূর্ণ করতে হবে। এরপর আবার তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে। এখন আমরা নামাজে ভুল হলে কি করতে হয় এ বিষয়ে নিচে বিস্তারিত জানবো।
নামাজে কি কি ধরনের ভুল হতে পারে
নামাজ পড়ার সময় আমরা অনেক সময় অনেক ভুল করে থাকি। মানুষ জাতি ভুল করবে এটিই স্বাভাবিক। তাই আল্লাহ তায়ালা ইসলামকে আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ আমরা যদি নামাজ পড়তে গিয়ে কোন ভুল করি তাহলে সেই ভুল সংশোধন করার ব্যবস্থাও আল্লাহ তায়ালা দিয়ে রেখেছেন। নামাজ পড়ার সময় সাধারণত যে ভুল গুলো হয়ে থাকে তা হলোঃ
- ফরজ ভুল
- ওয়াজিব ভুল
- সুন্নত বা মুস্তাহাব ভুল
ফরজ ভুল বলতে বোঝায় নামাজের মধ্যে কোন ফরজ কাজ বাদ পড়ে যাওয়াকে বোঝায়। যেমনঃ নামাজের মধ্যে রুকু না করা, দুই সিজদার একটিকে বাদ দেওয়া, কেবল ইচ্ছায় বা হাসি ঠাট্টায় নামাজ ভেঙে ফেলা ইত্যাদি ভুল গুলো। আপনি যদি এই জাতীয় ভুল গুলো নামাজের মধ্যে করেন তাহলে নামাজ বাতিল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা কাজ করেনা। তাই নতুন করে পূনরায় নামাজ আদায় করতে হবে।
- আল কোরআন থেকে রেফারেন্সঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন - নামাজসমূহের প্রতি যত্নশীল হও এবং মধ্যবর্তী নামাজের প্রতি ও বিনীতভাবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াও। - (সূরা আল-বাকারাহ ২ঃ২৩৮)
- সহিহ হাদিস থেকে রেফারেন্সঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন - নামাজে রুকু ও সিজদা যথাযথভাবে পালন করো, নামাজ অসম্পূর্ণ রাখো না। - (সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৭৫৭)
- একদিন এক সাহাবি ভুল করে তাড়াহুড়া করে নামাজ পড়ছিলেন তাকে উদ্দেশ্য করে মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন - ফিরে যাও এবং নামাজ পড়ো, কারণ তুমি নামাজ করোনি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৯৭)
- ফিকহের কিতাব থেকে রেফারেন্সঃ যদি ফরজের কোনোটি ছুটে যায়, তবে সেই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে এবং পুনরায় পড়তে হবে। - (ফিকহে হানাফি ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮২ থেকে ৮৫)
উপরের কোরআন ও হাদিস থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি যে নামাজের ফরজ কাজ গুলো যদি কোন ভাবে আদায় না করতে পারেন তাহলে আপনাকে পুনরায় নতুন করে নামাজ আদায় করতে হবে। এরপর নামাজে যে ভুল গুলো হয় তা হলো ওয়াজিব ভুল। ওয়াজিব ভুল বলতে বোঝায় ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে কোনো সূরা না পড়া, ভুলে প্রথম বৈঠকে বা আততাহিয়্যাতের সময় উঠে যাওয়া, জামাতে ইমামের সাথে রুকু বা সিজদা মিস হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ভুল গুলোকে বোঝায়। এই ভুল গুলোর জন্য সাধারণত সাহু সিজদা দিলেই হয়।
- আল কোরআন থেকে রেফারেন্সঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন - অতএব তোমরা যা সহজে পড়তে পারো, তা পড়ো। - (সূরা মুজাম্মিল ৭৩ঃ২০)
- সহিহ হাদিস থেকে রেফারেন্সঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন - রাসুল (সাঃ) দুই রাকাতের পরে সালাম ফিরিয়ে চলে গিয়েছিলেন, পরে সাহাবিরা জানান দিলে তিনি আবার মসজিদে ফিরে এলেন, বাকি নামাজ পড়লেন এবং সাহু সিজদা করলেন। - (সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ১২২৪)
- সহিহ মুসলিম হাদিস থেকে রেফারেন্সঃ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন - যখন তোমাদের কেউ নামাজে সন্দেহে পড়ে যায়, তখন বেশি যা মনে হয় তাই অনুযায়ী কাজ করবে, তারপর সাহু সিজদা করবে। - (সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৭৪)
উপরের কোরআন ও হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে ওয়াজিব ভুল গুলো সাহু সিজদার মাধ্যমে সংশোধন করা যায়। এরপর যে ভুলটি নামাজ পড়ার সময় হয়ে থাকে সেটি হচ্ছে সুন্নত বা মুস্তাহাব ভুল। সুন্নত বা মুস্তাহাব ভুল গুলো বলতে বুঝায় তাকবীর ই তাহরিমার সময় হাত কান পর্যন্ত না তোলা, রুকু থেকে ওঠার সময় সঠিকভাবে “সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ” না বলা, বসার সময় হাতের আঙ্গুল না বাঁধা ইত্যাদি। এগুলো হলে সাহু সিজদা ও পুনরায় নামাজ পড়া জরুরি নয় তবে মনোযোগী হওয়া উচিত।
- আল কোরআন থেকে রেফারেন্সঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন - নিশ্চয়ই সফল হলো মু’মিনগণ, যারা তাদের নামাজে বিনয়ী ও মনোযোগী। - (সূরা মু’মিনূন ২৩ঃ ১-২)
- হাদিস থেকে রেফারেন্সঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন - নামাজে রুকু, সিজদা এবং সমস্ত অঙ্গভঙ্গি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করো। - (সুনান আবু দাউদ, হাদিসঃ ৮৬১)
- রেফারেন্সঃ সুন্নত বা মুস্তাহাব কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ছুটে গেলে নামাজ বাতিল হয় না, সাহু সিজদাও আবশ্যক নয়, তবে সওয়াব কমে যায়। - (ফাতাওয়া আলমগীরি খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৮৪-৮৬)
সাহু সিজদা কখন করতে হয় ও করার নিয়ম
সাধারণত নামাজে কোন ওয়াজিব ছুটে গেলে বা নামাজের মধ্যে কত রাকাত নামাজ পড়লাম, কয়টা সিজদা দিলাম, কোন এক দোয়া পড়ছি কিনা এই রকম যদি কোন সন্দেহ মনের মধ্যে তৈরি হয় তাহলে সাহু সিজদা করতে হয়। তবে কিছু দিক লক্ষ্য রাখতে হবে যে শুধু ওয়াজিব কাজের ক্ষেত্রে সাহু সিজদা করলে নামাজ শুদ্ধ হয় কিন্তু কোন কারণে যদি ফরজ কাজ ছুটে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে সাহু সিজদা করলে নামাজ শুদ্ধ হয়না। এখন আমরা জানবো সাহু সিজদা কখন করতে হয় ও করার নিয়ম সম্পর্কে।
- প্রথম বৈঠকে আততাহিয়্যাত না পড়ে উঠে যাওয়া।
- সূরা ফাতিহার পরে কোনো সূরা না পড়া।
- ঈদের নামাজে তাকবীর বাদ পড়া।
- বিতর নামাজে কুনুত দোয়া না পড়া।
- নামাজ এক রাকাত বেশি পড়ে ফেলা।
- দুই রাকাতের নামাজে তিন রাকাত পড়ে ফেলা।
- রুকু বা সিজদায় দুইবারের বদলে তিনবার পড়ে ফেলা।
- কয় রাকাত নামাজ পড়েছি তা নিয়ে সন্দেহ হলে।
- রুকু করেছি কি না তা নিয়ে সন্দেহ হলে ইত্যাদি।
হাদিস থেকে রেফারেন্সঃ রাসুল (সাঃ) নামাজে ভুল করলে সাহু সিজদা করতেন এবং সাহাবিদের তা করতে নির্দেশ দিতেন। - (সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ১২২৪ সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৭৪)
সাহু সিজদা নামাজের শেষ বৈঠকে বা আততাহিয়্যাত শেষে সাহু সিজদা করতে হয়। নামাজের সালাম ফেরানোর আগে সাহু সিজদা করতে হয়। এখন আমরা সংক্ষেপে সাহু সিজদা করার নিয়ম সম্পর্কে জানবো।
- নামাজের শেষ বৈঠকে আততাহিয়্যাত পড়তে হবে।
- এরপর দুইবার সাধারণ সিজদা করতে হবে।
- এরপর আবারো আততাহিয়্যাত, দরুদ, দোয়া পাঠ করতে হবে।
- সব শেষে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
সংক্ষেপে বিবরন
কারণ | সমাধান |
---|---|
ওয়াজিব ছুটে গেলে | সাহু সিজদা |
সন্দেহ হলে | সাহু সিজদা |
বাড়তি কিছু হয়ে গেলে | সাহু সিজদা |
সুন্নত/মুস্তাহাব ভুল | সাহু সিজদা জরুরি নয় |
ফরজ রুকন বাদ পড়লে নামাজ শুদ্ধ হয় কি না?
ফরজ রুকন বাদ পড়লে নামাজ শুদ্ধ হয় কি না এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদের একটি অতি সংক্ষিপ্ত জিনিস জানা দরকার সেটি হচ্ছে ফরজ মানে কি। ফরজ মানে হচ্ছে অবশ্যই পালনীয় বা যা পালন করতেই হবে। অর্থাৎ আপনি যদি নামাজের মধ্যে রুকন বাদ তাহলে আপনার সেই নামাজটি হবে না এবং সাহু সিজদা দিলেও সেই নামাজ হবে না। কারণ রুকন হচ্ছে ফরজ কাজ। সহজ ভাষায় বলতে গেলে আপনি যদি নামাজের মধ্যে সুন্নত অথবা ওয়াজিব পালন না করেন তাহলে সোওয়াব কম পেলেও নামাজ হয়ে যাবে কিন্তু ফরজ কাজ যদি না করেন তাহলে আপনার নামাজ হবে না।
সংক্ষিপ্ত উদাহরণ
ফরজ | অবস্থা |
---|---|
তাকবীরে তাহরিমা না বলা | নামাজ শুরু হবে না |
রুকু না করা | রাকাত সম্পূর্ণ হবে না |
সিজদা না করা | রাকাত বাতিল হয়ে যাবে |
শেষ বৈঠকে আততাহিয়্যাত না পড়া | নামাজ সম্পূর্ণ হবে না |
উপরের দেওয়া ভুল গুলো যদি নামাজের মধ্যে হয়ে যায় তাহলে এই ভুল গুলো সাহু সেজদার মাধ্যমে শুদ্ধ করা যায় না। বরং আপনাকে পুরো নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে। এ বিষয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেনঃ নামাজে রুকু ও সিজদা যথাযথভাবে পালন করো, নামাজ অসম্পূর্ণ রাখো না। - (সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৭৫৭) অর্থাৎ আমরা এই হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝতে পারি যে নামাজের যদি কোন ফরজ কাজ বাদ পড়ে যায় তাহলে নামাজ শুদ্ধ হয় না।
নামাজে রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে করণীয়
আমরা নামাজ পড়ার সময় বিভিন্ন কারণে আমারা কত রাকাত নামাজ পড়েছি এই কথাটি ভুলে যায়। ভুলে যাওয়ার কারণে অনেকে মনে করেন নামাজ হয়তো কবুল হবে না তাই পুনরায় নামাজ পড়েন। এই সমস্যাটি বেশি হয় যখন কেউ ব্যস্তমনে নামাজ পড়েন অথবা নতুন অবস্থায় যারা নামাজ পড়েন তাদের। ইসলাম বরাবরই সকল ইবাদত ও কাজকে সহজ করে দিয়েছে। তাই এই সমস্যারও সুন্দর সমাধান করে দিয়েছে ইসলাম। এখন আমরা নামাজে রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে কি করতে হবে এই বিষয় নিয়ে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরবো রেফারেন্স সহ।
- মনে মনে যত রাকাত সন্দেহ করবেন সেই অনুযায়ী নামাজ পড়ে যাবেন।
- যদি কোনোটাই পরিষ্কার মনে না হয়, তাহলে কম রাকাত ধরে নেবেন।
- নামাজ শেষ করে সাহু সিজদা করে নিতে হবে।
হাদিস থেকে রেফারেন্সঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন - যখন তোমাদের কারো নামাজে সন্দেহ হয় সে কত রাকাত পড়েছে তখন যা বেশি নিশ্চিত মনে হয় তা মেনে চলবে এবং তারপর সাহু সিজদা করবে। - (সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৭১) এছাড়াও আবু সাইদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত - রাসুল (সাঃ) বললেন, যদি কোনো ব্যক্তি নামাজে সন্দেহ করে সে তিন রাকাত পড়েছে না চার তাহলে সন্দেহ দূর করতে দুই সিজদা করবে (সাহু সিজদা)। - (সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৪০১)
অতিরিক্ত রাকাত পড়ে ফেললে করণীয়
নামাজে মনোযোগ ঠিক না থাকলে অনেক সময় ভুলক্রমে আমরা চার রাকাতের জায়গায় পাঁচ রাকাত পড়ে ফেলি। এ অবস্থায় অনেকে ভয় পান যে তাদের নামাজ হয়তো বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু ইসলামে এমন ভুলের জন্য করণীয় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এবং তা খুবই সহজ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের শিখিয়েছেন এমন পরিস্থিতিতে নামাজ শেষ করে সাহু সিজদা করলে নামাজ শুদ্ধ হয়ে যায়। তাই ভুল করে অতিরিক্ত রাকাত হয়ে গেলেও নামাজ পুনরায় পড়ার প্রয়োজন নেই।
সহিহ হাদিস অনুযায়ী একবার রাসুল (সাঃ) নিজেও পাঁচ রাকাত নামাজ পড়েছিলেন। সাহাবিরা বিষয়টি জানালে তিনি তা মেনে নিয়ে সাহু সিজদা করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৭২)। এটি প্রমাণ করে যে অতিরিক্ত রাকাত হয়ে গেলে ভয়ের কিছু নেই বরং শুধু দুইটি সাহু সিজদা করে নিলেই যথেষ্ট। ইসলামের শিক্ষা সবসময় সহজ ও দয়ালু পথ দেখিয়েছে। তাই ভুল হলে আতঙ্কিত না হয়ে হাদিস অনুযায়ী সমাধান নিতে হবে এবং এই বিষয় নিয়ে পরবর্তিতে সতর্ক থাকতে হবে।
- আল কোরআন থেকে রেফারেন্সঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন - হে ঈমানদারগণ! অনেক ধারণা থেকে দূরে থাকো, কারণ কিছু ধারণা গুনাহ। - (সুরা আল-হুজুরাত, আয়াতঃ ১২)
- হাদিস থেকে থেকে রেফারেন্সঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত - নবী (সাঃ) একবার নামাজে অতিরিক্ত রাকাত পড়ে ফেলেন। সাহাবীগণ তাঁকে জানালে তিনি সাহু সিজদা করেন এবং নামাজ সম্পূর্ণ করেন। - (সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৭২)
- হাদিস থেকে থেকে রেফারেন্সঃ আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত - রাসুল (সাঃ) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি নামাজে সন্দেহ করে সে তিন রাকাত পড়েছে না চার সে সন্দেহ দূর করতে দুই সিজদা বা সাহু সিজদা করবে। - (সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৪০১)
সালাম ভুলে আগে দিয়ে ফেললে কি করতে হয়?
নামাজে কখনো কখনো মনোযোগ ঠিক না থাকলে ভুল করে আমরা নির্দিষ্ট রাকাত পূর্ণ হওয়ার আগেই সালাম ফিরিয়ে ফেলি। এমন অবস্থায় অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান যে এখন কি নামাজ পুনরায় শুরু করতে হবে নাকি অন্য কিছু করতে হবে। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী যদি নামাজের কোনো ফরজ বা ওয়াজিব বাদ পড়ে না যায় তবে ভুলক্রমে আগে সালাম ফিরিয়ে ফেললেও সেটি শুধরানো যায়। করণীয় হলো সালামের পর ভুলটি মনে পড়লে আবার নামাজে ফিরে গিয়ে বাকি রাকাতগুলো আদায় করতে হবে। এরপর সাহু সিজদা দিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
এই বিষয়ে হাদিসে এসেছে - রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একবার জোহরের নামাজে শুধু দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দিলেন। সাহাবিরা বিষয়টি জানালে তিনি আবার দাঁড়িয়ে বাকি রাকাত আদায় করেন এবং শেষে সাহু সিজদা করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ১২২৯ সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৭৪) এই হাদিস প্রমাণ করে যে ভুলক্রমে আগে সালাম দিলেও নামাজ বাতিল হয় না বরং ঠিকভাবে সংশোধন করলেই নামাজ কবুল হওয়ার আশা থাকে। ইসলামে প্রতিটি ভুলের জন্য রয়েছে সহজ ও করুণাময় সমাধান। তাই আশা করা যায় যে সালাম ভুলে আগে দিয়ে ফেললে কি করতে হয় এই বিষয়ে আপনারা অবগত হয়েছেন।
তাশাহুদ পড়তে ভুলে গেলে কি করতে হয়?
নামাজে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু পড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিশেষ করে দ্বিতীয় ও শেষ রাকাতে। তবে কখনো মনোযোগ হারিয়ে গেলে কেউ কেউ ভুলে তাশাহুদ না পড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে নামাজ একবারে বাতিল হয়ে যায় না বরং এমন অবস্থাতেও নামাজ শুদ্ধ করার উপায় রয়েছে। যদি কেউ ভুলক্রমে তাশাহুদ না পড়ে পরবর্তী রুকনে চলে যান তাহলে নামাজ শেষে সাহু সিজদা করে সেই ভুল পূরণ করতে হবে। এতে নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে পুনরায় নামাজ পড়ার প্রয়োজন নেই।
এ প্রসঙ্গে সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে বুহাইনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে - রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একবার যোহরের নামাজে দুই রাকাত পড়ে উঠলেন অথচ বসে তাশাহুদ পড়েননি। তিনি নামাজ শেষে সাহু সিজদা করেন। - (সহিহ বুখারিঃ ৮২৯, সহিহ মুসলিমঃ ৫৭০) এই হাদিস থেকে বোঝা যায় তাশাহুদ ভুলে গেলে নামাজ বাতিল হয় না বরং সাহু সিজদা করলেই ভুল সংশোধন হয়ে যায়। তাই পরিশেষে বলা যায় যে নামাজের মধ্যে তাশাহুদ পড়তে ভুলে গেলে নামাজ একবারে বাতিল হয়ে যায় না বরং সাহু সেজদার মাধ্যমে নামাজকে শুদ্ধ করা সম্ভব।
পোশাক বা শরীরে নাপাক কিছু থাকলে নামাজে করণীয় কি?
নামাজের জন্য পবিত্রতা রাখা ইসলামের অন্যতম শর্ত। যদি নামাজের সময় বুঝে উঠতে না পারেন যে আপনার পোশাক বা শরীরে নাপাক কিছু লেগে আছে তবে সেই নামাজ মাফযোগ্য হতে পারে। তবে যদি নামাজের মাঝপথে বা শেষে বুঝতে পারেন যে কোনো নাপাকি ছিল তাহলে সেই নামাজ পুনরায় আদায় করা উত্তম। কারণ পবিত্রতা ছাড়া নামাজ গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই সচেতন থাকা জরুরি তবে ভুল হলে আতঙ্কিত না হয়ে করণীয় জেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিবরাইল (আঃ) জানালেন যে তাঁর জুতায় নাপাক কিছু রয়েছে। তখন তিনি তা খুলে নামাজ চালিয়ে যান। - (আবু দাউদ, হাদিসঃ ৬৫০) এই ঘটনা প্রমাণ করে অজান্তে নাপাক অবস্থায় নামাজ শুরু হলেও বুঝে যাওয়ার পর তা দূর করে নামাজ চালিয়ে যাওয়া বা পুনরায় আদায় করাই সঠিক পথ। ইসলাম কখনো কাউকে অকারণে কষ্টে ফেলে না বরং সহজ সহনশীল ও বিবেচনাপূর্ণ পথ দেখায়। তবে ইসলামে পবিত্রতাকে ইমানের অঙ্গ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে তাই নামাজ পড়ার আগে আপনি পবিত্র আছেন কিনা এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
শেষ কথাঃ নামাজে ভুল হলে কি করতে হয়
নামাজে ভুল হলে কি করতে হয় এই বিষয় নিয়ে আমরা উপরে কোরআন ও হাদিস থেকে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা আশা করি যে আপনি যদি উপরের দেওয়া তথ্য গুলো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আপনার মনের এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। অতি সংক্ষেপে যদি বলা যায় তাহলে সেটি হচ্ছে নামাজের ভুল গুলো যদি সুন্নত অথবা ওয়াজিব হয় তাহলে সেই নামাজ সাহু সেজদার মাধ্যমে শুদ্ধ করা যায় কিন্তু যদি নামাজের মধ্যে কোন ফরজ কাজ ছুটে যায় তাহলে সেই নামাজ পুনরায় শুদ্ধ করে পড়তে হয়। এই বিষয়ে আমরা উপরে কোরআন ও হাদিস থেকে রেফারেন্স সহ আলোচনা করেছি আপনি চাইলে বিস্তারিত পড়ে আসতে পারেন। 250311
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url