OrdinaryITPostAd

মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধ - নারীদের হজ করার নিয়ম

মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধ? সাধারণত এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চাই। হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের পাঁচটি স্তম্বের মধ্যে হজ অন্যতম একটি। নারীদের হজ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে তার মধ্যে মাহরাম অন্যতম। মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধ? এ বিষয়ে অনেকেই জানে না। এই আর্টিকেলে মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধ? সে বিষয়ে জানানো হবে।

আপনি যদি মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধ? জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধ? এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধ

মাহরাম বলতে কি বুঝায়?

আমরা অনেকেই মাহরাম শব্দের সাথে পরিচিত। যে সকল মহিলারা হজ করতে চাই সাধারণত তারা মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধ? এই বিষয়ে গুলোতে ধারণা নিতে চাই। কারণ নারীদের হজ করার সাথে মাহরাম শব্দটি অতপ্রতভাবে জড়িত। আরবি হারাম শব্দ থেকে মাহরাম শব্দটি এসেছে।

আরো পড়ুনঃ জিলহজ মাসে রোজা রাখার ফজিলত জেনে নিন

ইসলামী পরিভাষাই মাহরাম দ্বারা বুঝানো হয়েছে যাদেরকে বিবাহ করা হারাম বা অবৈধ। এবং তাদের সাথে দেখা করা বা দেখা দেওয়া জায়েজ এবং বৈধ। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্য মাহরাম ১৪ জন করে রয়েছেন। নারীরা সাধারণত হজ করতে গেলে মাহরাম সম্পর্কে এমন কাউকে নিয়ে যেতে হয়। চলুন নারীদের মাহরাম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

  • দাদা
  • বাবা
  • ভাই
  • শ্বশুর
  • স্বামী
  • ছেলে
  • নাতি
  • দুধ ছেলে
  • চাচা
  • ভাই বোনের ছেলে
  • নানা
  • মামা
  • মেয়ের জামাই

মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধ

হজ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হওয়া জন্য তম একটি। নারী এবং পুরুষ উভয়কেই হজ পালন করতে হয় কিন্তু পুরুষের চেয়ে একটি শর্ত বেশি সাপেক্ষে নারীর হজ ফরজ করা হয়েছে আর সেটি হল মাহরাম। মাহরাম ছাড়া নারীর জন্য হজ পালনের বাধ্যবাধকতা নেই। একজন নারী যদি হজ পালন করতে চায় তাহলে মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধ? এ বিষয়ে জেনে নিতে হবে।

নারীর জন্য প্রথম মাহরাম হলো তার স্বামী। এর পরে যাদের সঙ্গে ইসলামী বিধান মোতাবেক দেখা সাক্ষাৎ করা জায়েজ এবং যাদের সঙ্গে বিবাহ হারাম সাধারণত ইসলামিক পরিভাষায় নারীদের জন্য সে সকল পুরুষকে মাহরাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ সকল মানুষদের সঙ্গে সামর্থ্যবান নারীরা হজে গমন করতে পারবেন।

কোন নারীর ওপর যদি হজ ফরজ হয় এবং স্বামী ছাড়াও তাকে নিয়ে হজে যাওয়ার মত মাহরাম থাকে আর স্বামী যদি তাকে হজ করার অনুমতি না দেয় সেক্ষেত্রে নারীর করণীয়। এ বিষয় সম্পর্কে হাদিসে এসেছে হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, 'আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কোন মানুষের আনুগত্য চলবে না। অনুগত্য তো কেবল ভালো কাজের জন্য।'{বুখারী ও মুসলিম}

সুতরাং কোন নারীর উপর যদি হজ ফরজ হয়ে যায় এবং তার সামনে তাকে হজে যাওয়ার জন্য নিষেধ করে থাকে তাহলে যদি ওই নারীর মাহরাম থাকে তাহলে হজে যাওয়ার জন্য স্বামীর অনুমতির প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে আগে হজ আদায় করা আবশ্যক। স্বামীর অনুমতি ছাড়া নারী হজে যেতে পারবেন। যদি আপনার স্বামী ব্যতীত মাহরাম থাকে।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ এর মতে নারীর হজ্ব ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো মাহরাম থাকা।মাহরাম না থাকলে সম্পদ যতই থাকুক না কেন নারীর উপর হজ ফরজ হবে না। {বাদায়িউস সানা} হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, 'মাহরাম ছাড়া কোন নারী কোন পুরুষের সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না এবং কোন নারী মাহরাম ব্যতীত সফল করবে না।'

আরো পড়ুনঃ জিলহজ মাসের ৫ আমল - জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল

সবদিক বিবেচনা করে এবং নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বর্তমান সময়ে প্রতিটি নারীর জন্য এবং তাদের হজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য মাহরাম একান্ত আবশ্যক। মাহরাম ছাড়া কোন নারীর পক্ষে পর্দা মেনে হজ সম্পাদন কোনভাবে সম্ভব নয়। তাই মাহরাম ব্যতীত কোন নারীর জন্য হজে যাওয়া জায়েজ নয়। এতে সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে। যেহেতু হজের সফর দীর্ঘতম তাই মাহরাম একান্তই প্রয়োজন।

মাহরাম ছাড়া নারীরা হজ করতে পারবে, কি পারবে না

মাহরাম ছাড়া নারীরা হজ করতে পারবে, কি পারবে না? উপরের আলোচনা করে থাকলে আশা করি এ সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। ইসলামে প্রতিটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটি নিয়ম রয়েছে। যেহেতু হজ করার সকল সামর্থ্যবান নারী পুরুষের উপর ফরজ তাই হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে হজ পালনের একটু ব্যতিক্রমধর্মী নিয়ম রয়েছে। সেটি হল মাহরাম।

ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মালিক রাহঃ মতে, 'নারীর ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য মাহরাম শর্ত নয়। বরং নারীর হজ পালনে শর্ত হলো তার অর্থাৎ হজে গমনকারী নারীর দীর্ঘ সফরের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া। সফরের পথ যদি নিরাপদ হয় তবে মাহরামবিহীন একজন নারী একদল মাহরামওয়ালী নারীর সঙ্গে হজে যেতে পারবে।'

হজরত ইবনে আব্বাস রাঃ বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, 'মাহরাম ছাড়া কোনো নারী কোনো পুরুষের সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ছাড়া সফর করবে না।' এক সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার স্ত্রী হজ করতে যাচ্ছে আর আমি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজে যাও।' {বুখারি ও মুসলিম}

ইসলামি আইন বিষয়ের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হেদায়া’য় এসেছে, 'কোনো নারী যদি মাহরাম ছাড়া হজ করে তবে ওই নারীর হজ আদায় হয়ে যাবে কিন্তু মাহরাম ব্যতিত হজের দীর্ঘ সফর করার কারণে ওই নারী গোনাহগার হবেন।'

আবার কেউ কেউ বলেন, 'নারীর উচিত মাহরাম পাওয়ার জন্য জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা। যদি কোনো মাহরাম না পান তবে তিনি নিজে হজে না গিয়ে অন্যের মাধ্যমে বদলি হজের ব্যবস্থা করবেন। আর এটাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত।'

নারীদের হজ করার নিয়ম

নারীদের হজ করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে এরপরে হযরত গমন করা গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের হজ ও ওমরাহ করার নিয়ম মোটামুটি পুরুষের মতোই। পার্থক্য এতটুকু যে নারীরা সেলাইকৃত যেকোনো রঙের স্বাভাবিক কাপড় পরবে। তবে শাড়ি না পরে সালোয়ার, কামিজ পরা ভালো। মাথা ঢেকে রাখবে। চেহারা এমনভাবে ঢাকবে যেন তাতে কাপড় না লাগে।

হাতমোজা, পামোজা ও নিজের সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জুতা পরতে পারবে। তালবিয়া আস্তে আস্তে পড়বে, যেন পরপুরুষের কানে আওয়াজ না পৌঁছে। তাওয়াফের সময় রমল ও সাঈর সময় সবুজ দুই পিলারের মধ্যবর্তী স্থান দৌড়ে অতিক্রম করতে পারবে না। {ফাতাওয়া শামিঃ ২-৪৮৮, ৫২৮}

পর্দার জন্য বোরকার নেকাব এভাবে ঝুলিয়ে দেবে, যাতে করে চেহারায় কাপড় না লাগে। এ জন্য মাথায় ক্যাপ পরে তার ওপর নেকাব ঝুলিয়ে রাখা যায়। এতে নেকাব চেহারা থেকে পৃথক থাকে। আর মাঝেমধ্যে লাগলে অসুবিধা হবে না, বরং পর্দার স্বার্থে পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে নিতে হবে এবং পরপুরুষ সরে গেলে চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ জিলহজ মাসে রোজা রাখার কয়টি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত

এক ঘণ্টার বেশি কিন্তু ১২ ঘণ্টার কম সময় লাগাতার চেহারার সঙ্গে কাপড় লেগে থাকলে পৌনে দুই কেজি গম বা তার মূল্য সদকা দিতে হবে। ১২ ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় লেগে থাকলে একটি দম অর্থাৎ ছাগল বা দুম্বা জবাই করা ওয়াজিব হবে। {মুয়াল্লিমঃ ২৩৭} নারীদের হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাহরাম রয়েছে কিনা এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে মাহরাম বলতে কি বুঝায়? মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধ? মাহরাম ছাড়া নারীরা হজ করতে পারবে, কি পারবে না? নারীদের হজ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা অক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যেহেতু বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তাই আমাদের সকলের উচিত উক্ত বিষয়টি মেনে চলা।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরও পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটের নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।১৬৮৩০

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url