OrdinaryITPostAd

শাবান মাসের রোজা কয়টি - শাবান মাসের রোজা রাখার নিয়ম

আসুন আমরা শাবান মাসের রোজা কয়টি এবং শাবান মাসের রোজা রাখার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেই। শাবান মাসের রোজা কত তারিখে এবং শাবান মাসের রোজার নিয়ত সম্পরকেও আমরা জানব।
শাবান মাসের রোজা নফল রোজার জন্য শ্রেষ্ঠ এবং গুরুত্বপূর্ণ মাস । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। শাবান মাসের আমল মুমিন মুসলমানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমাদের শাবান মাসের রোজা কয়টি এবং শাবান মাসের রোজা রাখার নিয়ম  সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে।

পেজ সুচিপত্রঃ শাবান মাসের রোজা কয়টি

শাবান মাসের রোজা রাখার নিয়ম সম্পর্কে হাদিসঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান ছাড়া এতবেশি নফল রোজা শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে রাখেননি। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘আমি রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কখনো রমজান ছাড়া পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি; আর শাবান মাসের মতো অন্য কোনো মাসে অধিক (নফল) রোজা রাখতেও দেখিনি।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

শাবান মাসের রোজা কয়টি তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসিত প্রশ্নঃ

প্রশ্ন : শাবান মাসের রোজা কয়টি? শবে বরাতের রোজা কয়টি??? শবে বরাত যুগ যুগ ধরে পালন করে আসাটা কী ভুল ছিল???
(শাবান মাসের সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন)
প্রশ্নেরর উত্তর :
হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ১৫ শাবান রাতে তোমরা জেগে থেকে ইবাদত কর এবং পরদিন রোজা রাখ। এ হাদিস দিয়ে শবেবরাতের একটি নফল রোজা প্রমাণিত হয়। তবে বিভিন্ন হাদিসে হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ তিনদিন তিনটি নফল রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছেন। সে হিসেবে শাবান মাসের রোজা কয়টি এ প্রশ্নের এক কথায় উত্তর তিনটি রোজা রাখা যেতে পারে। আবার হজরত উম্মে সালমা ও হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, শাবান মাসে হজরত মুহাম্মাদ (সা.) অধিকহারে রোজা রাখতেন। যেন তিনি গোটা শাবান মাসই রোজা রাখতেন। সে হিসেবে শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা অবশ্যই সওয়াবের কাজ। [তিরমিযি ১/১৫৫, ১৫৬, ১৫৯]।
এতদিন পর্যন্ত শবে বরাতকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। তারা এ রাতটি উপলক্ষে নানা অনুচিত কাজকর্ম এবং রসম-রেওয়াজের অনুগামী হচ্ছিল। উলামায়ে কেরাম সবসময়ই এই সবের প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন। ইদানিং আবার এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাদেরকে আরো উদ্দেশ্য করে আমরা রচনাটি সাজিয়েছি। শাবান মাসের রোজা কিভাবে করা উচিত বা শাবান মাসের রোজা কয়টি তা আমরা আরও জানতে পারব পুরো রচনাটি পড়ে। 

শাবান মাসের রোজা কয়টিঃ

শাবান মাসের রোজা কয়টি এটাই আজ আমাদের প্রথম প্রশ্ন। এর সহজ উত্তর হল ৩ টি। কিন্তু অবশ্যই ৩ টির বেশি রোজা করতে পারবেন। যত বেশি নফল এবাদাত করবেন তত বেশি সওয়াব পাবেন। এছাড়াও  শাবান মাসের রোজা রাখার নিয়ম ,  শাবান মাসের রোজার নিয়ত, শাবান মাসে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে জানব।

শাবান মাসের রোজা রাখার নিয়মঃ

শাবান মাসের রোজা রাখার নিয়ম এর মধ্যে পড়ে শাবান মাসের রোজা কয়টি। মুমিন মুসলমানের উচিত, শাবান মাসজুড়ে সপ্তাহিক ও মাসিক সুন্নাতি আমল রোজা পালনের মাধ্যমে একসঙ্গে একাধিক সুন্নাতের ওপর আমল করা। রমজান পেতে বেশি বেশি দোয়া করা। যদি সুন্নাতি আমল হিসেবেও এ মাসে রোজা রাখতে চায় তবে তা হতে পারে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতের বাস্তবায়নের উপায়। সে হিসেবে ১০-১১ দিন রোজা রাখার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। তাহলো-
>> সাপ্তাহিক রোজা : ৭ দিন
মার্চ : ১৭ (বৃহস্পতিবার), ২১ (সোমবার), ২৪ (বৃস্পতিবার)।
শাবান মাসের রোজা রাখার নিয়ম এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল শবে বরাতের মধ্যে রোজা রাখা। এছাড়াও শাবান মাসের প্রত্যেক বৃহস্পতি বা সোমবার আমরা রোজা রাখতে পারি।

শাবান মাসের রোজা কত তারিখেঃ

আসলে শাবান মাসের রোজা কয়টি সেটা জানা থাকলে শাবান মাসের রোজা কত তারিখে তা সঠিকভাবে হিসাব করা যায়। যদিও প্রত্যেক চন্দ্র মাসে ৫,১৫,২০ তারিখে রোজা রাখা সুন্নৎ। ঠিক তেমন যদি জিজ্ঞাসা করা হয় শাবান মাসের কত তারিখে রোজা রাখা উচিত তাহলে বলা যায় যে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “যখন শাবান মাসের অর্ধেক গত হবে তখন তোমরা আর রোযা রাখবে না।”[সুনানে আবু দাউদ (৩২৩৭), সুনানে তিরমিযি (৭৩৮), সুনানে ইবনে মাজাহ (১৬৫১) এবং আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে (৫৯০) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

এ হাদিসটি প্রমাণ করছে যে, শাবান মাসের অর্ধেক গত হওয়ার পর রোযা রাখা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ ১৬ তারিখ থেকে।
কিন্তু অন্য কিছু হাদিসে এ দিনগুলোতেও রোযা রাখা জায়েয হওয়ার কথা এসেছে। যেমন:
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা রমযানের একদিন বা দুইদিন আগে রোযা রাখবে না। তবে কারো যদি রোযা থাকার অভ্যাস থেকে থাকে সে ব্যক্তি রোযা রাখতে পারে।”।[সহিহ বুখারী (১৯১৪) ও সহিহ মুসলিম (১০৮২)]
এ হাদিস প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তির রোযা থাকার অভ্যাস রয়েছে সে ব্যক্তির জন্য অর্ধেক শাবানের পরেও রোযা রাখা জায়েয। যেমন যে ব্যক্তি প্রতি সোমবার ও বৃহষ্পতিবার রোযা থাকে। কিংবা যে ব্যক্তি নিয়মিত একদিন রোযা রাখে, একদিন রাখে না এ ধরণের।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোটা শাবান মাস রোযা রাখতেন। গোটা শাবান মাসের কিয়দংশ ছাড়া গোটা মাস রোযা রাখতেন।[সহিহ বুখারী (১৯৭০) ও সহিহ মুসলিম (১১৫৬), ভাষ্য মুসলিমের]
আসলে বোঝা যাচ্ছে যে শাবান মাসের রোজা কত তারিখে তা নিয়ে বাকবিতণ্ডা আছে। আমরা আল্লাহ তা আলাকে খুশী করার জন্য  শুধু শাবান মাস না যেকোন সময় রোজা রাখতে পারি।
তাহলে শাবান মাসের রোজা কয়টি বা শাবান মাসের রোজা রাখার নিয়ম সম্পরকে পরিষ্কার ধারণা পেলাম।

শাবান মাসের রোজার নিয়তঃ

'আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।' অর্থ : 'হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।' আমরা ভোরে সেহরি খেয়ে শাবান মাসের রোজার নিয়ত অবশ্যই করব। আমরা উপরের শাবান মাসের রোজার নিয়ত টি অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে পড়ব এবং মনে রাখব। রোজা রাখলে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে ঠিক তেমন রোজা রাখা বা নিয়ত করার পূর্বে শাবান মাসের রোজা কয়টি সেটা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকতে হবে। শাবান মাসের রোজা কয়টি বা শাবান মাসের রোজা রাখার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের ধারনা ধিরে ধিরে পরিষ্কার হবে এ রচনা পড়ার মাধ্যমে।

শাবান মাসে রোজা রাখার ফজিলতঃ

শাবান মাসে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি।এখন আমরা আরো আলোচনা করবঃ
আল্লাহ তাআলার ইবাদাতসমূহের মধ্যে রোজা একমাত্র স্বতন্ত্র ইবাদাত। যার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। রমজানে রোজা রাখার পাশাপাশি রাসূল (সা.) সারাবছরই নফল রোজা রাখতেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা পালন করতেন শাবান মাসে। শাবান মাসের রোজা কয়টি তা তো আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি।আবার শাবান মাসের রোজা রাখার নিয়ম ও আমরা জেনেছি।এখন জানব
শাবান মাসে রোজা রাখার ফজিলত-
আমাদের এ ব্যস্ততম জীবনে যতটুকু ইবাদত-বন্দেগি করি তার বেশিরভাগই অন্যের দোষ বর্ণনা করে, অপরের জীবন কঠিন করার পেছনে, নানা ধরনের অনর্থক কাজে নষ্ট করে ফেলি না জেনেই। মানুষের এ সহজাত প্রবৃত্তির পুণরাবৃত্তির কারণে দয়াময় আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমার উদ্দেশ্যে আমাদের কিছু অতিরিক্ত ইবাদত-বন্দেগি করা উচিত। যাকে আমরা নফল ইবাদত বলি।
নফল ইবাদতের মধ্যে রোজা অন্যতম। আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জনের জন্য, ফরজ-ওয়াজিব নয়- এমন রোজা পালনকেই নফল রোজা বলা হয়। নফল রোজার অনেক বড় ফজিলত ও সওয়াব রয়েছে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে কুদসিতে এসেছে, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমলের সওয়াব দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়। পুণ্যকর্মের সওয়াব দশগুণ থেকে সাতশ’ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, তবে রোজা ব্যতীত। কারণ রোজা আমার আর আমিই এর প্রতিদান দিই। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

শাবান মাসে কয়টি রোজা রাখতে হয় তা আমরা বিভিন্নভাবে জেনেছি। এছাড়াও শাবান মাসের রোজা রাখার নিয়ম নিয়ে একটি স্পষ্ট ধারনা পেলাম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url