OrdinaryITPostAd

হোয়াটসঅ্যাপ বনাম ভাইবার ম্যাসেঞ্জার - কোনটি ব্যবহার করা উচিত?

সোস্যাল ম্যাসেজিং অ্যাপ (হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ম্যাসেঞ্জার) তো আমরা সবাই ব্যবহার করি। আমরা যখন এগুলো থেকে বাছাই করি তখন কিন্তু কখনোই চিন্তা করি না কোনটা ভালো বা কোনটা খারাপ?


এগুলোর মধ্য থেকে আমরা ভালোটা ব্যবহার করবো কি না সেটাও চিন্তা করি না। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রভাবিত হই বন্ধু-বান্ধবী, পরিবার ও আত্মীয়স্বজন এবং পাড়াপ্রতিবেশীর দ্বারা। তবে আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি আমরা যা ব্যবহার করছি তার চেয়ে ভালো অ্যাপ আছে কি না?

চলুন আজ দেখি বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত দুইটা অ্যাপ ভাইবার (Viber) এবং হোয়াটসঅ্যাপ (Whatsapp)। আমরা এই দুটি অ্যাপের মধ্যে তুলনা করে দেখবো কোন অ্যাপের ফিচার বেশি ও কোনটা আমাদের ব্যবহার করা উচিত। তবে এর সবটুকুই নির্ভর করে আপনার উপর যে, আপনি কোন অ্যাপটি ব্যবহার করবেন। কিন্তু আমরা শুধু তুলনা করে দেখবো কোনটার ফিচার বেশি।

চলুন এখন আমরা ভাইবার এবং হোয়াটসঅ্যাপের বৈশিষ্টের উপর ভিত্তি করে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করি।

১। ইউজার ইন্টারফেস এবং ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস

হোয়াটসঅ্যাপ (Whatsapp): হোয়াটসঅ্যাপে ইউজার ইন্টারফেস একদমই পরিষ্কার। যারা তেমন কিছু জানে না, তারাও Whatsapp ব্যবহার করতে পারবে। খুব বেশি ফিচার নেই এটাতে। কলিং, ম্যাসেজিং, ভিডিও কল এবং অডিও কলের দুটি অপশন আছে, অ্যাটাচমেন্টের (ফাইল আপলোডের) অপশন আছে, ক্যামেরার আইকন আছে। খুব সিম্পল এবং পরিষ্কার একটা ইন্টারফেস এবং এটাকে আমরা বলতে পারি অনেক ইউজার ফ্রেন্ডলি। 

ভাইবার (Viber): ভাইবারের ইন্টারফেস মোটেও পরিষ্কার না। এখানে নানান রকমের জিনিসপত্র আছে। এখানে ম্যাসেজে ঢুকলে স্টিকার সাজেস্ট করা হয়, হোম পেইজে নানান সময় অনেক কিছু সাজেস্ট করা হয়, অনেক প্রফাইল আপনাকে সাজেস্ট করবে, পাবলিক প্রফাইল সাজেস্ট করবে। সুতরাং, এখানে ফিচারগুলো বেশি থাকার কারণে ইউজার ইন্টারফেস সিম্পল না।

সুতরাং, ইউজার ইন্টারফেস এবং ইউজার ফ্রেন্ডলিনেসের দিকের কথা যদি বলি তাহলে এই জায়গাতে Whatsapp এগিয়ে Viber থেকে।

২। পপুলারিটি | হোয়াটসঅ্যাপ বনাম ভাইবার ম্যাসেঞ্জার

আমরা যদি রিজিওনাল (দেশ ভিত্তিক) চিন্তা করি তাহলে কিছু কিছু রিজিওন আছে পৃথিবীর যেখানে Viber বেশি ইউজ করা হয়। আবার কিছু কিছু রিজিওন আছে যেখানে হোয়াটসঅ্যাপ বেশি ইউজ করা হয়। আমরা যদি অভারঅল পপুলারিটির কথা চিন্তা করি তাহলে Whatsapp অনেক এগিয়ে আছে Viber থেকে।

সুতরাং, Whatsapp এখানে জিতে যাচ্ছে।

৩। সাপোর্টেড ডিভাইস | হোয়াটসঅ্যাপ বনাম ভাইবার ম্যাসেঞ্জার

হোয়াটসঅ্যাপ (Whatsapp): হোয়াটসঅ্যাপ অ্যান্ড্রয়েডে সাপোর্ট করে, IOS-এ সাপোর্ট করে এবং তাদের একটি ওয়েব ভার্সন আছে। যেটি আপনি যেকোনো ব্রাউজারে web.whatsapp.com এ গিয়ে আপনি অ্যাক্সেস করতে পারবেন। কিন্তু সেটিতে ফিচারগুলো লিমিটেড।

ভাইবার (Viber): ভাইবারও অ্যান্ড্রয়েডে সাপোর্ট করে, IOS-এ সাপোর্ট করে এবং তাদের উইন্ডোজেরও একটি সফটওয়্যার আছে ডেডিকেটেড। সেটা ব্যবহার করলে আপনি মোবাইলে যে যে ফিচারগুলো পান যেমন অডিও কল, ভিডিও কল সব ধরনের ফিচার আপনি ভাইবারে পাচ্ছেন। যা আপনি হোয়াটসঅ্যাপে পাচ্ছেন না। তা ছাড়া ভাইবারে লিনাক্সের অ্যাপ্লিকেশন আছে। সেটাতে আপনি লিনাক্স ও ব্যবহার করতে পারবেন।

সুতরাং, একদম পরিষ্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে Viber এখানে উইনার। কারণ ভাইবারের ডেক্সটপে যে অ্যাক্সেস গুলো আছে সেগুলো আপনি হোয়াটসঅ্যাপে পাচ্ছেন না।

৪। অডিও এবং ভিডিও কল | হোয়াটসঅ্যাপ বনাম ভাইবার ম্যাসেঞ্জার

দুটো অ্যাপের মধ্যেই অডিও এবং ভিডিও কল রয়েছে এবং অডিও এবং ভিডিও কলের কোয়ালিটি নির্ভর করে আপনার নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি এবং আপনার ডিভাইসের উপর। অডিও এবং ভিডিও কলের জন্য দুটো অ্যাপেরই কোয়ালিটি মোটামুটি কাছাকাছি। কিন্তু ভাইবারে একটা অতিরিক্ত ফিচার আছে। সেটা হচ্ছে ভাইবার আউট। তার মানে কেউ যদি Viber ব্যবহার নাও করে তাহলে আপনি ক্রেডিট দিয়ে চিপ একটা কলরেট আছে। যে কলরেট দিয়ে আপনি চাইলে ভাইবার আউটের মাধ্যমে যারা Viber ব্যবহার না করছে তাদেরকে কল করতে পারবেন। এ ফিচারটি হোয়াটসঅ্যাপে নেই।

সুতরাং, ভাইবারের এক্সটা ফিচারের জন্য এখানে Viber উইনার ।

৫। এন্ড টু এন্ড ইনক্রিপশন | হোয়াটসঅ্যাপ বনাম ভাইবার ম্যাসেঞ্জার

Whatsapp এবং Viber দুটো অ্যাপের মধ্যই এন্ড টু এন্ড ইনক্রিপশন আছে। তার মানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো দুটো অ্যাপেই নিরাপদ। আপনি যে কোনটাই ব্যবহার করেন না কেন!

৬। চ্যাট গ্রুপ | হোয়াটসঅ্যাপ বনাম ভাইবার ম্যাসেঞ্জার

Whatsapp এবং Viber দুটো অ্যাপেই চ্যাট গ্রুপ অপশন আছে। তার মানে আপনি বেশ কিছু বন্ধুদের নিয়ে একসাথে গ্রুপ তৈরি করে চ্যাট করতে পারবেন।

৭। পাবলিক প্রফাইল বা বিজনেস প্রফাইল | হোয়াটসঅ্যাপ বনাম ভাইবার ম্যাসেঞ্জার

এই ফিচারটি শুধুমাত্র ভাইবারে আছে হোয়াটসঅ্যাপে নেই। তার মানে হোয়াটসঅ্যাপ যদি আপনি ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য ব্যবহার করতে চান তাহলে করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি একজন সেলেব্রেটি হন কিংবা আপনার যদি একটা বিজনেস ব্র্যান্ড থাকে। তাহলে সেটিকে প্রমোট করা বা সেটির জন্য একটা একাউন্ট খোলার অপশনটি হোয়াটসঅ্যাপে নেই কিন্তু ভাইবারে আছে। ভাইবারে আপনি চাইলে পাবলিক প্রফাইল খুলতে পারেন এবং আপনি চাইলে পাবলিক প্রফাইলে যে পোস্টগুলো আছে সেগুলো দেখতে পারবেন, তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং আপনি চাইলে কাউকে ফলো করতে পারবেন, আনফলো করতে পারবেন।

সেটা কোন নিউজপেপার হতে পারে, সেটা কোন ব্র্যান্ড হতে পারে। পাবলিক প্রফাইল এবং চ্যাট অপশন আপনি দুইটি ভাবে তৈরি করতে পারবেন। আপনি চাইলে এরকম অপশন সচল রাখতে পারবেন যে আপনি যখনই কোন কিছু পোস্ট করবেন তখনই আপনার ফলোয়ার যারা আছে তারাও সেখানে রিপ্লাই দিতে পারবে অথবা আপনি চাইলে সেটিকে মোটামুটি ভাবে ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশন তৈরি করতে পারেন। তার মানে আপনি শুধুমাত্র পোস্ট করবেন, বাকিরা শুধুমাত্র দেখবে। সুতরাং, দুই ভাবেই করতে পারেন। 

কারণ যদি শুধুমাত্র চ্যাট অপশন সচল করে রাখেন, দুই পাশ থেকে যদি ম্যাসেজ দিতে থাকে। তাহলে অনেক সময় অনেক স্প্যাম করতে পারে। সে কারণে ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশন আছে। তার মানে শুধু বন্ধু এবং পরিবারের মধ্যে চ্যাটে সীমাবদ্ধ থাকছেন না। ইন্টারেস্ট পেজ, আরও যে পাবলিক কমিউনিটি বা পাবলিক প্রফাইল আছে। যেমনঃ সেটা সংগীত হতে পারে, বডিবিল্ডিং হতে পারে, অ্যাথলেটিক হতে পারে। নানান রকমের জিনিসগুলো এখানে আছে।
সুতরাং, এ ফিচারের জন্য ভাইবার উইনার।

৮। হিডেন চ্যাট বা সিক্রেট চ্যাট | হোয়াটসঅ্যাপ বনাম ভাইবার ম্যাসেঞ্জার

হিডেন চ্যাট বা সিক্রেট চ্যাটের কোন অপশন হোয়াটসঅ্যাপে নেই। কিন্তু ভাইবারে এই অপশনটি আছে। তার মানে আপনি যদি কোন প্রাইভেট চ্যাট করেন, তাহলে একটা টাইমার সেট করে দিতে পারবেন। যে টাইমের পর অটোমেটিক ম্যাসেজটা ডিলেট হয়ে যাবে।

সুতরাং, এটাতে Viber এগিয়ে থাকবে Whatsapp থেকে।

৯। ফাইল শেয়ারিং | হোয়াটসঅ্যাপ বনাম ভাইবার ম্যাসেঞ্জার

Whatsapp এবং Viber দুটো অ্যাপ দিয়েই আপনি ফাইল শেয়ার করতে পারবেন। কিন্তু সাইজের একটা লিমিট আছে। Whatsapp এ আপনি সর্বোচ্চ ১০০ মেগাবাইট ফাইল শেয়ার করতে পারবেন। আর Viber এ আপনি ফাইল শেয়ার করতে পারবেন ২০০ মেগাবাইট।

সুতরাং, এখানেও দেখা যাচ্ছে Viber এগিয়ে।

১০। এক্সট্রা ফিচার এবং অ্যাড অনস | হোয়াটসঅ্যাপ বনাম ভাইবার ম্যাসেঞ্জার

এই জায়গাতেও Whatsapp থেকে Viber কিছুটা এগিয়ে থাকবে। যেমন, ভাইবারে কিছুটা এক্সট্রা ফিচার থাকে। যেমনঃ ভাইবারে স্টিকার Whatsapp থেকে বেশি, ভাইবারে বন্ধুদের সাথে গেম খেলতে পারবেন যা হোয়াটসঅ্যাপে নেই। ভাইবারে চ্যাট এক্সটেনশন নামে একটি ফিচার আছে যার মাধ্যমে ভাইবারে আপনি চ্যাট করার সময় আপনি ইউটিউবে ভিডিও দেখতে পারবেন, গান শুনতে পারবেন। এই ফিচারগুলো হোয়াটসঅ্যাপে নেই।
সুতরাং, এক্সট্রা ফিচার এবং অ্যাডনসের কথাও যদি বলি, তাহলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি Viber উইনার।

ফলাফল | হোয়াটসঅ্যাপ বনাম ভাইবার ম্যাসেঞ্জার

১০টা বৈশিষ্টের মধ্য Whatsapp জিতেছে ২টি, Viber জিতেছে ৬টি, আর বাকি ২টি হচ্ছে সমান সমান। আমরা যদি এখন নরমাল অংক করি তাহলে Viber উইনার। কিন্তু পপুলারিটির দিক থেকে যেহেতু Whatsapp এগিয়ে, তাই আপনার বন্ধু এবং পরিবারের বেশির ভাগ মানুষ হয়ত Whatsapp ব্যবহার করে এবং আপনি ও হয়ত Whatsapp ব্যবহার করেন।

সুতরাং, আমি এটা বলবো না যে আপনি Whatsapp বাদ দিয়ে Viber ব্যবহার করেন, কারণ এতে ফিচার বেশি আছে। আপনি যেটা করতে পারেন Whatsapp এর পাশাপাশি Viber ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনি একসাথে সবগুলো ফিচার পেয়ে যাচ্ছেন।

সুতরাং, আপনিই নিশ্চিত করুন আপনি কোনটি ব্যবহার করবেন। আমি শুধুমাত্র কোন অ্যাপটির ফিচার বেশি এটাই জানিয়ে দিলাম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url