OrdinaryITPostAd

ব্লগিং কি? ব্লগিং করে টাকা আয় করার ৫টি সেরা উপায়

আপনি হয়ত শুনে থাকবেন ব্লগিং এর মাধ্যমে অনেকেই অনেক উপার্জন করে। হয়ত আপনার আশেপাশেই কোন বন্ধু, আত্মীয় বা পরিচিত কেউ  ব্লগিং এর কাজ করে এবং অর্থ উপার্জন করে। কিন্তু কিভাবে ব্লগিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা যায়? এই প্রশ্ন হয়ত আপনার মনেও রয়েছে। চলুন জেনে নিই ব্লগিং এর মাধ্যমে কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়?


যারা অনলাইনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখালিখি বা ভিডিও তৈরি করে প্রকাশ করে থাকে তাদেরকেই মূলত ব্লগার বলে। ব্লগিং একটি নতুন বিস্ময় হলেও ব্লগিং করার জন্য কোন ডিগ্রী অর্জনের প্রয়োজন নেই। আমরা সাধারণ মানুষও ব্লগিং এর কাজ করে উপার্জনের পথ বেছে নিতে পারি। তবে ব্লগিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন কোন সহজ বিষয় নয় এবং এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর এজন্য আপনাকে ধৈর্য্য রাখতে হবে এবং লেগে থাকার ইচ্ছা থাকতে হবে।

শুরুতেই বলে নিচ্ছি ব্লগিং করার জন্য আপনার দুইটা অপশন থাকবে-
  • বিনামূল্যে ব্যবহৃত ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম: যারা ব্লগিং করে অর্থ উপার্জন করতে আগ্রহী নয় তারা এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে।
  • নিজস্ব ওয়েবসাইট: এটা আসলে ডেডিকেটেড ব্লগারদের জন্য যারা ব্লগিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে চান। আমরা আজকে এটা নিয়েই আলোচনা করবো।
ব্লগিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন এর জন্য নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকতে হবে। এখানে ডিজাইন এবং কাস্টমাইজেশন, বিজ্ঞাপন এবং লিঙ্ক সংযুক্ত করার দক্ষতা থাকতে হবে। এই ব্লগিং এর জন্য আপনাকে প্রথমে ডোমেইন নাম এর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। এখানে বলে নেওয়া প্রয়োজন, যদি আপনার টেকনোলজি বিষয়ক জ্ঞান না থাকে তাহলে নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরীর চিন্তা করাটা ভয়ংকর হবে। তবে এটা তৈরী করা সহজ এবং মাত্র ২০/৩০ মিনিটেই আপনি নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরী করতে পারবেন।

তবে নিজের ওয়েবসাইট না থাকলেও অন্যের ওয়েবসাইটটে ব্লগার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করতে পারেন। বিস্তারিত এই লিংকে দেখুন।

কিভাবে অর্থ উপার্জন করবেন?

  •     অ্যাডভারটাইজিং এবং কনটেন্ট স্পন্সর 
  •     এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং  
  •     ডিজিটাল প্রোডাক্টস  
  •     ফিজিক্যাল প্রোডাক্টস  
  •     সার্ভিসেস

অ্যাডভারটাইজিং এবং কনটেন্ট স্পন্সর

বিভিন্ন কোম্পানি চায় তাদের প্রোডাক্ট এবং সেবা  সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে। এই কাজটা তারা করতে পারে আপনার ব্লগের মাধ্যমে যদি আপনার ব্লগের পাঠকদের মধ্যে তাদের আদর্শ ক্রেতা থাকে। এখানে অ্যাডভারটাইজিং এর কিছু পদ্ধতি দেওয়া হলো-

ডিসপ্লে এ্যাডস: কিছু এ্যাড নেটওয়ার্ক আছে এবং এগুলো ব্লগে ব্যবহার করা সহজ ও লাভজনক।
  •     গুগল অ্যাডসেন্স (Google AdSence)
  •     মিডিয়া ডট নেট (Media.Net)
এরা আপনার ব্লগের আর্টিকেলের প্রসঙ্গ অনুযায়ী (যেমন - সাইডবার গ্রাফিক্স, হেডার, ফুটার অথবা কনটেন্ট এ ব্যবহৃত গ্রাফিক্স) এবং ব্যবহারকারীদের আগ্রহ অনুযায়ী এই কোম্পানিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাড প্রদর্শন করে। বেশিরভাগ নতুন ব্লগ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তাদের লাভজনক আয় করে।

এই অ্যাডগুলো হাই কোয়ালিটির হলেও এরা ব্লগ ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করে না।  যাইহোক আপনার টার্গেট থাকবে যত দ্রুত সম্ভব এ্যাডসেন্স ( AdSence) অথবা মিডিয়া ডট নেট (media.net)  এর  অন্তর্ভুক্ত হওয়া।

রিভিউ: কোম্পানিগুলো আপনাকে বিনামূল্যে তাদের প্রোডাক্ট সরবরাহ করবে এবং এর বিনিময়ে আপনাকে আপনার ব্লগে তাদের প্রোডাক্ট হাইলাইট করে দিতে হবে।

স্পন্সরড পোস্ট: আপনার পোস্টে কোম্পানির নাম অথবা তাদের প্রোডাক্ট এর নাম মেনশন করার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পে করবে কোম্পানি থেকে।

নিউজলেটার /ভিডিও/পোডকাস্ট স্পন্সর: ইমেইল অথবা ছোট কমার্সিয়াল ভিডিওতে অথবা পোডকাস্ট এপিসোডের মাধ্যমে অ্যাডভারটাইজমেন্ট করা যায়।

অ্যাডভারটাইজিং শুরু করা সহজ হলেও এটা সবসময় লাভজনক নয় কারণ এটা পাঠকদের কাছে সস্তা মনে হতে পারে এবং পাঠকরা হতাশ হয়ে যেতে পারে। তাই এ্যাডভারটাইজিংকে টপ মোস্ট রিকমেন্ড করা যায় না।

এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং 

বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক পদ্বতি এটা। মাত্র একটু চেষ্টার মাধ্যমে (সিঙ্গেল সেল) আপনি এখানে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এজন্য আপনাকে আপনার ব্লগ পোস্টে কোন প্রোডাক্ট এর লিঙ্ক ব্যবহার করতে হবে। যখন কেউ আপনার দেওয়া লিঙ্ক থেকে ওই প্রোডাক্ট সম্পর্কে ধারণা নিয়ে প্রোডাক্ট ক্রয় করতে বা সেবা গ্রহণ করতে আগ্রহী হবে তখন আপনি সেখান থেকে কমিশন পাবেন। এজন্য আপনাকে সরাসরি প্রোডাক্ট ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। বর্তমানে এ্যাফিলিয়েট পদ্বতিটায় ব্লগিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন এর সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। 

জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচলিত কিছু অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম হচ্ছে-
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর আরো একটি সুবিধা হচ্ছে এই টেকনিক আপনি যেকোন ব্লগিং প্ল্যাটফরমে ব্যবহার করতে পারবেন, যেমন- উইক্স (Wix), মেডিয়াম(Medium),  অথবা লিঙ্কেডিন(Linkedin)।

ডিজিটাল প্রোডাক্টস

অনেক ব্লগার তাদের নিজস্ব ডিজিটাল প্রোডাক্টস সেল করে এবং এজন্য তাদের কোন বর্নণামূলক তালিকা প্রকাশ করতে হয় না। আর খুব সহজেই ডিস্ট্রিবিউট করা যায়, ঝুঁকিও কম থাকে। কিছু ডিজিটাল প্রোডাক্ট এর নাম দেওয়া হলো যেগুলো ব্লগাররা সচরাচর ব্যবহার করেন-
  • ইবুকস (Ebooks)
  • অনলাইন ক্লাস এবং ওয়ার্কশপ (online classes and workshop)
  • ইকোর্স (Ecourse)
  • প্রিমিয়াম কন্টেন্ট (premium content)
  • মেম্বারশিপ সাইট (Membership Site)
  • ছবি (Photos)
  • অডিও /ভিডিও (Audio/Video)
  • এ্যাপস, প্লাগইন এবং থিম (Apps,Plugin and Theme)

ফিজিক্যাল প্রোডাক্টস

কিছু ব্লগার ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট সেল করেন। যেমন,
  • বুকস(Book)
  • হস্তশিল্প প্রোডাক্টস ( Handmade products)
  • শিল্পজাত দ্রব্যাদি (Manufactured Products)
  • কোন ব্যক্তির সম্মেলন, ক্লাস এবং বিশেষ কোন ইভেন্টস বিনিময়, যেখানে অভিজ্ঞতার আলোকে কোন কিছুর জন্য স্পষ্ট বিনিময় করা হয়।
গত কয়েকবছর থেকে ব্লগিং এর এই পদ্ধতি অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যবহৃত হলেও এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া। কারণ এখানে প্রোডাক্ট ডেলিভারি, রিটার্ন, নতুন নতুন উদ্ভাবনা এরকম জটিল বিষয়গুলো মেইনটেইন করতে হয়।

সার্ভিসেস

কিছু ব্লগার তাদের ব্লগের বিষয় সম্পর্কিত দক্ষতা ব্যবহার করে এবং যখন অন্যরা তাদের নিয়োগ দেয় তখন তাদের বেতন দেওয়া হয়। এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হতে পারে-
  • স্পিকিং গিগস (Speaking Gigs)
  • ভার্চুয়াল এসিসট্যান্স (Virtual Assistance) 
  • ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing)
  • অর্গানাইজিং, ডেকোরেটিং, কুকিং (Organizing, Decorating, Cooking)
  • বিভিন্ন আইটি সেবা
সহজে এবং দ্রুত অর্থ উপার্জনের জন্য এটা একটা জনপ্রিয় পদ্ধতি। আপনার যে কাজ করার দক্ষতা আছে সেটাকেই কাজে লাগিয়ে আপনি এখানে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তবে এর অসুবিধা হলো আপনাকে যে সময়টুকু বেধে দেওয়া হবে আপনি শুধু সেসময়ের মধ্যেই অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাবেন।

জীবন সম্পর্কে বলুন এবং অর্থ উপার্জন করুন

ভাবছেন এটা আবার কেমন? হ্যাঁ, ব্লগিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনেরর এটাও একটা জনপ্রিয় মাধ্যম। আপনি হয়তো ইতিমধ্যেই দেখেছেন ইউটিউবে বিভিন্ন ব্যক্তি নিজের জীবন সম্পর্কে, প্রতিদিনের অভ্যাস এবং এরকম কিছু জীবন সম্পর্কিত ঘটনা নিয়ে ভিডিও করেন। আপনি চায়লে নিজেও এমন কিছু ভিডিও তৈরী করতে পারেন এবং নিজের চ্যানেল তৈরী করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। ইউটিউবে যে টপিকগুলো আলোচনা করা যেতে পারে-
  • লাইফস্টাইল বা জীবনধারা
  • ফ্যাশন
  • ট্রাভেল বা ভ্রমণ 
  • মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণামূলক তথ্য
  • এন্টারটেইনমেন্ট বা বিনোদন
এই বিষয়গুলো নিয়ে আপনি ভিডিও তৈরী করতে পারেন তবে সেটা অবশ্যই আকর্ষণীয় এবং দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আপনার ভিডিও এর স্টাইল এবং সামঞ্জস্যপূর্ণতার উপর ভিত্তি করে আপনি অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে শুধু ভিডিও কেনো? আমি কি ভিডিও এবং টেক্সট দুটোই সংযুক্ত করতে পারি না?
হ্যাঁ, অবশ্যই পারেন। এটা একটা ভালো চিন্তা। ভিডিও কনটেন্ট তৈরী করা সময় এবং অর্থ সাপেক্ষ ব্যাপার, যেখানে টেক্সট কনটেন্ট তৈরী করা খুব অল্প সময়ের ব্যাপার। এই দুইটার মিশ্রণ টেকনিক আপনাকে দ্রুত উন্নতি এবং অর্থ উপার্জনে সাহায্য করবে।

আপনি কিভাবে ব্লগিং এর অর্থ পাবেন?

আপনার এডভারটাইজিং এর সুত্র ধরে সারাবিশ্ব ব্যাপী ৫ টা মাধ্যমের সাহায্যে আপনি আপনার ব্লগের টাকা রিসিভ করতে পারবেন-
  • পে পল (pay pal)
  • পাইওনিয়ার( pyoneer)
  • ট্রান্সফারওয়াইজ (Transferwise)
  • ওয়্যার ট্রান্সফার (Wire transfer) -নিজস্ব ব্যাংক
  • কয়েনবেজ( Coinbase)- ক্রিপ্টো পেমেন্ট।
ব্লগিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের জন্য আপনাকে এসব ব্যাংকে একাউন্ট থাকতে হবে। এগুলোতে জয়েন করা যায় বিনামূল্যে এবং এগুলো ব্যবহার পদ্ধতি ও সহজ।

ব্লগারদের জন্য এক্সট্রা কিছু টিপস 

  • আপনি যে উপার্জনের ধারাটা সঠিকভাবে মেইনটেইন করতে পারবেন, যতগুলো ধারা সঠিকভাবে বজায় রাখতে পারবেন, শুধু সেগুলোই ব্যবহার করবেন। বৈচিত্রতা এখানে মুখ্য বিষয়।
  • আকর্ষণীয় কনটেন্ট একটি ব্লগের  দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। এর বিকল্প কিছু হতে পারেনা।
  • প্রতিটি ব্লগার আয়ের স্ট্রিমের আলাদা সমন্বয় করে।  এর কোন সঠিক উপায় নেই এবং এটায় এর সৌন্দর্য।
  • কখনওই আরেকটি ব্লগের কপি করবেন না
  • সফল ব্লগার যারা তারা শুধু অর্থ উপার্জনের জন্যই ব্লগিং করেন না বরং তারা তাদের পছন্দের বিষয়টাকে উপভোগ করেন এবং অনিশ্চিতভাবেই লিখতে থাকেন।
সবশেষে বলা যায়, ব্লগিং বর্তমানে সারাবিশ্বের সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অদূর ভবিষ্যৎ এ হয়তো এটা একটা স্বীকৃত কর্মক্ষেত্রে পরিণত হবে। চাইলে আপনিও পারেন ব্লগিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের পথ বেছে নিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Bongo Tutor
    Bongo Tutor ২৭ আগস্ট

    ধন্যবাদ এমন তথ্যবহুল আর্টিকেল শেয়ার করার জন্য। অনেক উপকৃত হলাম।

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url