OrdinaryITPostAd

রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম - তারাবির নামাজের নিয়ত ও দোয়া

আমরা অনেকেই রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানিনা। রমজান মাস হল খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ইবাদতের মাস তাই বেশি বেশি ইবাদত করার জন্য আমাদেরকে রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলে রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আপনি যদি রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই রমজান শুরু হওয়ার আগেই বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নিন। তাহলে চলুন দেরি না করে রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম - তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের

রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম

বাংলাদেশের আকাশে যেদিন রমজান মাসের চাঁদ দেখা যাবে সাধারণত সেই দিন প্রথম তারাবি অনুষ্ঠিত হবে। রমজান মাসে তারাবি খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। যদিও তারাবি না পড়লে কোন ধরনের গুনাহ হবে না কিন্তু তারাবি পড়লে অনেক সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। তাই আমাদেরকে রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে।

তারাবি একটি আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে আরাম, প্রশান্তি অর্জন, বিরতি দেওয়া, বিশ্রাম নেওয়া ইত্যাদি। যদি ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা হয় তাহলে প্রতি চার রাকাত অন্তর চার রাকাত নামাজের সমপরিমাণ সময় বিরতি দিয়ে আরামের সঙ্গে আদায় করা হয়। সেই জন্য এই নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ৮টি ইবাদাত - রমজানের ইবাদতের ফজিলত

আমাদের বাংলাদেশে দুই ধরনের তারাবি প্রচলিত আছে। একটি হল সুরা তারাবি এবং অন্যটি হলো খতম তারাবি। সুরা তারাবি হল পবিত্র কোরআনে যে কোন সূরা দিয়ে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা এবং খতম তারাবি হল রমজান মাসের সম্পূর্ণ কোরআন সহকারে তারাবি নামাজ আদায় করা। তবে খতম তারাবি পড়লে এর সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।

রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে সঠিকভাবে আমাদের জানতে হবে। এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ এবং দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে দশ সালামে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয় এই নামাজকেই তারাবির নামাজ বলা হয়।

ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্যান্য নামাজ গুলো একাকী আদায় করা উত্তম কিন্তু তারাবির নামাজ এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা শরীয়ত সম্মত। তারাবি একাকী আদায় করার চেয়ে জামাতে আদায় করা সব থেকে উত্তম। কারণ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জামাতের সাথে তারাবির নামাজ আদায় করতেন।

তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের

রমজান মাস হলো রহমত মাগফিরাত এবং নাজাতের মাস। রমজান মাসে আমরা যত বেশি ইবাদত করতে পারব আমাদের জন্য তত বেশি ভালো। তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের জানতে হবে। যদিও আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেভাবে আদায় করি তারাবির নামাজ সেভাবে আদায় করতে হয় কিন্তু যেহেতু এই নামাজ শুধু রমজান মাসে আদায় করতে হয় তাই প্রথমে তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের জেনে নেওয়া উচিত।

মহিলাদের জন্য তারাবির নামাজ ও অন্যান্য সব নামাজ ঘরে একাকী আদায় করা শরীয়তের বিধান। এর বিপরীত করা জায়েজ নয়। {আল বাহরুর রায়েকঃ১/৬২৭} বিশুদ্ধ হাদিসের বর্ণিত হয়েছে, হযরত মুহাম্মদ সাঃ যখন মহিলাদেরকে মসজিদের না এসে ঘরে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিলেন তখন একজন মহিলা সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাঃ এর খেদমতে এসে বললেন,

"ইয়া রাসুলুল্লাহ সাঃ আমার মন চায় আপনার পেছনে নামাজ পড়তে আমাকে অনুমতি দিন।" হযরত মুহাম্মদ সাঃ তার উত্তরে যা বললেন, "আমি তোমার আগ্রহের মূল্যায়ন করি, তা সত্ত্বেও মসজিদে নববীতে এসে ৫০ হাজার রাকাত সব পাওয়া এবং আমার পেছনে নামাজ পড়ে থেকে তোমার ঘরে একা নামাজ পড়ায় উত্তম।"

তারাবির নামাজের দোয়া - তারাবির নামাজের নিয়ত ও দোয়া

যেহেতু রমজান মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস তাই প্রতিটি মুসলমান চাই এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত করতে। তারাবির নামাজের দোয়া কিভাবে করব? এ ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে। তারাবি নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে আমাদেরকে তারাবির নামাজের নিয়ত ও দোয়া সম্পর্কে জানতে হবে। যেহেতু এটাই বাস্তবতার মাস তাই তারাবির নামাজের দোয়া জানাটা জরুরী।

তারাবির নামাজের নিয়ত ও দোয়াঃ

আরবিঃ نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر.

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উসালি­য়া ল্লিলাহি তাআ’লা, রাকাআ’তাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুল্লিলাহি তাআ’লা। মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।

তারাবি নামাজের প্রতি চার রাকাত পর পর যে দোয়া পড়া হয় সেটি হলঃ

আরবিঃ سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.

উচ্চারণঃ সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুব্হানাযিল ইয্যাতি, ওয়াল আয্মাতি, ওয়াল হাইবাতি, ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়াই, ওয়াল যাবারুত। সুব্হানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা-ইয়াানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।

তারাবির নামাজের মোনাজাত

দীর্ঘ এক বছর পর আমাদের কাছে রমজান ফিরে আসছে। যেহেতু তারাবির নামাজ শুধুমাত্র রমজান মাসে পড়তে হয় তাই রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম এবং তারাবির নামাজের মোনাজাত সম্পর্কে আমাদের ধারণা রাখতে হবে। আমরা তারাবির নামাজের মোনাজাত কিভাবে আল্লাহতালার কাছে করবো সে সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে।

আরো পড়ুনঃ রমজান মাসের সেরা ২০ টি আমল - রমজানের রোজার ফজিলত

তারাবির নামাজের মোনাজাতঃ

আরবিঃ اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ - اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

তারাবির নামাজের ইতিহাস

আমরা মুসলিম হিসেবে সকলেই তারাবি নামাজের সাথে পরিচিত। তারাবি নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক সওয়াবের নামাজ। আমরা যদি সময় মত নিয়ম অনুযায়ী তারাবির নামাজ আদায় করতে পারি তাহলে অনেক সওয়াবের অধিকারী হব। আপনি কি তারাবির নামাজের ইতিহাস সম্পর্কে জানেন? তারাবির নামাজের ইতিহাস জেনে নিন।

আল্লাহর প্রিয় বান্দারা দিনে রোজা রেখে ও রাতে এশার সালাতের পর দীর্ঘ তারাবির নামাজের কষ্ট আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেন। সারা দিনের ক্লান্তি উপেক্ষা করে দীর্ঘ সময়ের এই সালাতে নিমগ্ন থাকা আল্লাহ তায়ালার প্রতি একান্ত আত্মনিবেদন ও তাঁর পাক কালামের প্রতি তাদের উৎসাহ ও অনুরাগের প্রমাণ।

এছাড়া প্রতিদিন এশার নামাজের পর মসজিদে যখন আল্লাহর পবিত্র বাণীর তেলাওয়াত চলতে থাকে, তখন পুরো দেশজুড়ে বিরাজ করে অনুপম আবহ। কোরআন মাজিদের তেলাওয়াতে বেহেশতি সুর মূর্ছনায় মুগ্ধ হন মুসল্লিরা। জামাতের সঙ্গে সালাতুত তারাবির বর্তমান নিয়মটি চালু হয়েছে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক রাঃএর সময় থেকে।

রাসূলুল্লাহ সাঃ ও হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ এর সময়ে এমনকি হজরত ওমর ফারুক রাঃ এর খেলাফতকালের প্রথম ভাগেও মুসলমানরা রমজানের রাতগুলোয় এশার নামাজের পর অতিরিক্ত যে সালাত আদায় করতেন, তা একাকী করতেন। এ জন্য জামাত বা সম্মিলিত কিছুর আয়োজন ছিল না।

তবে নবী করিম সাঃ রমজানে কিয়ামুল লাইল বা রাত জেগে ইবাদত-বন্দিগির বিশেষ উৎসাহ দিয়েছেন এবং এ জন্য অশেষ পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরাইরা রাঃ বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেন, রাসুল সাঃ রমজানের রাতগুলোয় ইবাদত করার জন্য আমাদের উৎসাহ দিতেন।

তারাবির নামাজ কত রাকাত

রোজা আসলেই একটি প্রশ্ন জাগা দিয়ে উঠে সেটি হল তারাবির নামাজ কত রাকাত? অনেকে মনে করে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়তে হয় আবার অনেকে মনে করে তারাবির নামাজ ৮ রাকাত পড়তে হয়। আজকের এই আর্টিকেল থেকে তারাবির নামাজ কত রাকাত জেনে নেওয়া যাক।

রমজান মাসের রাতে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। রোজাদার সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে যান। তারপর রাতে এশা ও তারাবি নামাজ দীর্ঘ সময় ধরে পড়তে হয়।

রমজান মাসের নির্দিষ্ট নামাজ হচ্ছে সালাতুত তারাবিহ। তারাবির নামাজ হলো রোজার গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। রাসুলুল্লাহ সাঃ নিজে তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকেও পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা বেশি সওয়াবের কাজ।

তারাবির নামাজে কোরআন শরিফ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ। তবে সূরা-কিরাআতের মাধ্যমে আদায় করলেও তারাবির সওয়াব পাওয়া যায়। তারাবির নামাজে প্রতিদিন ২০ রাকাতে ২০ রুকু করে পড়লে ২৭ রমজান লাইলাতুল কদরে পবিত্র কোরআনের সম্পূর্ণটুকু যাতে তিলাওয়াত করা সমাপ্ত হয়। রাসুলুল্লাহ সাঃ তারাবি নামাজের জন্য রাতের কোনো বিশেষ সময়কে নির্দিষ্ট করে দেননি।

রাসুলুল্লাহ সাঃ বিশেষ কারণবশত নিয়মিত জামাতে ২০ রাকাত তারাবি পড়তেন না। কেননা নবী করিম সাঃ কোনো কাজ নিয়মিত করলে তা উম্মতের জন্য ওয়াজিব তথা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়। যার দরুন সালাতুত তারাবিহ সুন্নত, ওয়াজিব নয় তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা জরুরি সুন্নত।

আরো পড়ুনঃ রমজান মাসে ওমরা করার ফজিলত - রোজার মাসে ওমরার ফজিলত কি

২০ রাকাত তারাবি নামাজ হওয়ার সপক্ষে হজরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ রমজান মাসে বিনা জামাতে (একাকী) ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতেন, অতঃপর বিতর নামাজ পড়তেন। {বায়হাকি}

রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম - তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদেরঃ শেষ কথা

রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম, তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের, তারাবির নামাজ কত রাকাত? তারাবির নামাজের ইতিহাস, তারাবির নামাজের মোনাজাত, তারাবির নামাজের দোয়া, তারাবির নামাজের নিয়ত ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

প্রতিটি মুসলিমের জন্য উক্ত বিষয়টি জানা খুবই জরুরী। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন।১৬৮৩০

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url