OrdinaryITPostAd

শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস - বাংলায় দুর্গা পূজার ইতিহাস

প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্টে আমরা শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করব। আমরা সকলে জানি যে শারদীয় দুর্গাপূজা হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং জাঁকজমকপূর্ণ ধর্মীয় প্রধান উৎসব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সারা বছর অপেক্ষা করে শারদীয় দূর্গা পূজার জন্য। কিন্তু অনেকেই আছে যে শারদীয় দুর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে কোন ধারণা নেই।

আপনি যদি শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে চলুন দেরি না করে শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেই।

পেজ সূচিপত্রঃ শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস

শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বহুকাল আগে থেকে শারদীয় দুর্গাপূজা পালন করে আসছে। তার ধারাবাহিকতায় এখনো প্রতিবছর শারদীয় দুর্গাপূজা পালন করা হয়। কিন্তু অনেকেই জানেনা শারদীয় দুর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে। আপনারা যারা শারদীয় দুর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের পোস্টটি ওপেন করেছেন তাদের জন্য আজকে শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করব।

দূর্গা পূজা কখন কবে কোথায় প্রথম করা হয়েছিল এ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায় না। ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতা মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। সিন্ধু সভ্যতায় দেবি মাতা, পশুপতি শিবের পূজার প্রচলন ছিল। যেহেতু দেবী দুর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী সে কারণে অথবা অন্য আরেকটি কারণ দেবি মাতা হিসেবে পূজা করা হতে পারে। মারকেন্দীয়া পুরাণ মতে, চেদি রাজ বংশের রাজা সুরাথা খ্রিস্টের জন্মের ৩০০ বছর আগে Duseehera নামে দুর্গা পূজার প্রচলন করেছিলেন। নেপালে এখনও এই নামে দুর্গা পূজা পালন করা হয়।

আরো পড়ুনঃ হিন্দু বিয়ের তারিখ

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের মধ্যে দুর্গাপূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ১৫১০ সালে কুচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ কুচবিহারে দূর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন। ধারণা করা হয় ১৬১০ সালে কলকাতার বারিসাল রায় চৌধুরী পরিবার প্রথম দূর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন। ১৮০৯ সালে পাটনাতে দুর্গাপূজার ওয়াটার কালার ছবির ডকুমেন্ট পাওয়া যায়। সম্রাট আকবরের আমলে ৪০০ বছর ধরে উড়িষ্যার রামেশ্বরপুরে একই স্থানে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে। ১৭৬১ সালে ১২ জন বন্ধু মিলে বারোয়ারী পূজা হুগলির গুপ্তিপাড়ায় আয়োজন করেন।

20 শতাব্দীর প্রথমার্ধে শারদীয় দুর্গাপূজা ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারি বা কমিউনিটি পূজা হিসেবে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দুর্গাপুজো শরৎকালের বার্ষিক মহাউৎসব হিসেবে ধরা হয়। ক্ষ্ম বৈবর্ত পুরান মতে দুর্গাপূজার প্রথম প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ। তারপরে দ্বিতীয়বার দুর্গাপূজা করেন স্বয়ং ব্রম্মা। আবার দ্বিতীয়বার দূর্গা পূজার আয়োজন করেন মহাদেব।

সাধারণত আশ্বিন মাসের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ পাঁচ দিন হল দুর্গা পূজার মূল আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। ইতিহাস অনুযায়ী দেবের পুজো ১৫০০ শতকের শেষের দিক থেকে প্রথম শুরু করা হয়।

শারদীয় দূর্গা পূজার ছুটি

এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে জাতীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত। ভারত এবং তার আশেপাশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাউৎসব ধরা হয় বলে একে শারদীয় দুর্গাপূজা হিসেবে অভিহিত করা হয়। শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবকে মহালয়া, ষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহা অষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পালন করা হয়। অসময়ে দেবীর আগমন বলে বসন্তকালে এই উৎসবকে অকাল বোধন ও বলা হয়। দুর্গাপূজা সাধারণত ভারত বর্ষের আসাম, বিহার, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, এবং বাংলাদেশ শারদীয় দূর্গা পূজা পালন করা হয়। দুর্গাপূজা দিনগুলোতে সরকারি ভাবে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আপনাদের সকলের শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে জানা উচিত।

আরো পড়ুনঃ হিন্দু ছেলেদের সুন্দর নামের তালিকা

সাধারণত যেগুলো হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ সেগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি দেওয়া হয়। বাংলাদেশের অনেক পরিমাণে হিন্দু বসবাস করে তাই বাংলাদেশেও শারদীয় দুর্গাপূজা ছুটি দীর্ঘদিন দেওয়া হয়। যাতে করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের আচার-অনুষ্ঠান এবং প্রার্থনা সঠিক ভাবে পালন করতে পারে।

বাংলায় দুর্গাপূজা ও ইতিহাস

লোকমুখে শোনা যায় বাংলাদেশের সাতক্ষীরার ১৮ শতকের মঠবাড়িয়ার নবরত মন্দিরে দুর্গাপূজা করা হতো। ইতিহাসবিদদের মতে ৫০০ বছর আগে রমনার কালী মন্দির নির্মিত হয়েছিল এবং সেখানে কালীপূজা সাথে দুর্গাপূজা ও করা হতো। কারো মুখে শোনা যায় রাজা কংস নারায়ন রাজশাহীর তাহেরপুরে প্রথম দুর্গাপূজা করেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অনেক ধুমধামের সাথে শারদীয় দুর্গাপূজার সকল ধরনের আচার অনুষ্ঠান নিয়ম অনুযায়ী পালন করা হয়। বাংলাদেশের ঢাকা রাজশাহী চট্টগ্রাম খুলনা সিলেট রংপুর বগুড়া এবং বাংলাদেশের বেশিরভাগ জেলাতেই ব্যাপকভাবে শারদীয় দূর্গা পূজার আয়োজন করা হয়। সারাবিশ্বে যে যে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে সবাই দুর্গাপূজা তাদের নিজেদের মতো করে পালন করে থাকে।

ব্রক্ষ্ম বৈবর্ত পুরান মতে দুর্গাপূজার প্রথম প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ। তারপরে দ্বিতীয়বার দুর্গাপূজা করেন স্বয়ং ব্রম্মা। আবার দ্বিতীয়বার দূর্গা পূজার আয়োজন করেন মহাদেব। প্রথমের দিকে বাংলাদেশের দুর্গাপূজা শুধু অর্থশালী এবং অভিজাত হিন্দু পরিবারের মধ্যে আয়োজন করা হতো। কিন্তু বর্তমানে দুর্গাপূজা তার সর্বজনীনতা পাই। দেশবিভাগের পর ১৯৪৭ সালে এককভাবে দুর্গাপূজা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ হয়ে ওঠে।

১৯১০ সালে কলকাতায় প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে বারোয়ারি পূজা শুরু হয়। জনসাধারনের সহযোগিতার কারণে সনাতন ধর্মতসাহিনি সভা একটি দুর্গোৎসব সূচনা করেন। তারপর থেকে পুরো বাংলায় দুর্গাপূজার প্রচার হয়ে যায়। বর্তমানে শারদীয় দূর্গা পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব হিসেবে পরিচিত হয়েছে।

শারদীয় দূর্গা পূজা পালন

আমাদের অনেকেরই জানা আছে যে দূর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় মহালয়ার মধ্য দিয়ে এবং দূর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় মহা দশমী অর্থাৎ বিজয়াদশমী দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দিয়ে। তারপর আবার দীর্ঘ এক বছরের অপেক্ষা। উপরে আমরা শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস শারদীয় দুর্গাপূজা পালন কোন পদ্ধতিতে হয় সেটা দেখে নেই।

মহালায়াঃ মহালয়া থেকে দেবী দুর্গার আগমনী সুর বেজে ওঠে। মহালয়াতে দুর্গার বন্দনা করা হয়ে থাকে। দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয়ে সকল অসুরদের বিনাশ করেন বলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাস করেন।

মহা পঞ্চমীঃ মহালায়া থেকে পাঁচ দিন পর হয় মহা পঞ্চমী। পঞ্চম দিনে দেবী দুর্গাকে আসনে বসিয়ে তার ঘর দিয়ে দেবী দুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকে। পঞ্চমী থেকে শুরু করে বিজয়া দশমী পর্যন্ত দেবী দুর্গা সবার মাঝে বিরাজমান থাকে।

আরো পড়ুনঃ হিন্দু মেয়েদের নামের তালিকা

মহাষষ্ঠীঃ মহাষষ্ঠী থেকে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয়ে যায়। মহা ষষ্ঠীর দিন ১০১ পদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গাকে পূজা করা হয়। সকলে মিলে দেবী দুর্গার অঞ্জলি দেওয়া সন্ধ্যার সময় সন্ধ্যা রতি করা হয়ে থাকে।

মহাসপ্তমীঃ এই দিনে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়ে থাকে। এবং সবাই একসাথে বিভিন্ন জায়গার পূজামণ্ডপ দেখতে যাওয়া।

মহা অষ্টমীঃ ষষ্ঠ এবং সপ্তম এর মতো এই দিনে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। সাথে সবচেয়ে জনপ্রিয় পূজা কুমারী পূজা মহিষ বলি কুমড়া বলি দেওয়া হয়ে থাকে। অষ্টমীর দিন সকল মায়েরা তাদের সন্তানদের মঙ্গল কামনা করে পূজা করে থাকেন।

মহানবমীঃ দেবী দুর্গার বিসর্জনের আগের দিন হল মহানবমী। আগের দিনগুলোর মতো এদিনও দেবী দুর্গার অনেক শ্রদ্ধার সাথে আরাধনা করা হয়। এই দিনে নানা রকমের খাবার মুড়ি মুড়কি সন্দেশ ইত্যাদি তৈরি করা হয়ে থাকে। নাচ-গান আনন্দ-উল্লাস এবং ঘুরাঘুরির মধ্যে দিয়ে কাটে এই দিনটি।

বিজয়া দশমীঃ এই দিন দেবী দুর্গার বিসর্জনের দিন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই দিনে দেবী দুর্গার পায়ে এবং মাথায় সিঁদুর এবং দেবী দুর্গাকে মিষ্টিমুখ করে বরণ করা হয়। এই দিনে স্ত্রীগণ তাদের স্বামীর দীর্ঘ আয়ু কামনা করেন। পরিশেষে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়া হয়। এবং দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষা করা শুরু হয়।

সূত্রঃ community.skynetjp.com/wikipedia

শেষ কথাঃ শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস

আপনারা যারা শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন তাদের জন্য উপরে এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী হন তাহলে অবশ্যই আপনার শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে জানা উচিত। আপনার জন্যই আমরা এই পোস্টটি সুন্দরভাবে সাজিয়েছি।

তাই শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এতক্ষন আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম পোস্ট আরও পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url