OrdinaryITPostAd

কোরবানির পশুর সাথে আকিকা একসাথে করার বিধান

অনেকেই কোরবানির পশুর সাথে আকিকার অংশ যোগ করে দেন। এভাবে আকীকা করার বিধান কি? বা কোরবানি ও আকিকা একই সাথে করা যাবে কিনা সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। চলুন তাহলে দেখে নেই আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধান।

পেজ সূচিপত্রঃ কোরবানির পশুর সাথে আকিকা - আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধান

কোরবানির পশুর সাথে আকিকা - আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধানঃ ভূমিকা

সামর্থ্যবানদের উপরে কোরবানি করা ওয়াজিব। তাই যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদেরকে অবশ্যই কোরবানি করতে হবে এটাই ইসলামের বিধান। পক্ষান্তরে আকিকা হচ্ছে একটি নফল ইবাদত। শিশুর জন্মের পরে আকিকা করার কথা বলা হয়েছে। তাই সামর্থ্য থাকলে সন্তান জন্মের পর আকিকা করা পিতা মাতার কর্তব্য। 

এখন প্রশ্ন হলোঃ কোরবানির পশুর সাথে আকিকা করা যাবে কিনা বা আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধান কি? কোরবানির পশুর সাথে আকিকা করা যাবে কিনা সেই ব্যাপারে আলেমদের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকলেও। অধিকাংশ আলেমের মতেকোরবানির পশুর সাথে আকিকা করা বৈধ। নিচে কোরবানির পশুর সাথে আকিকা করা যাবে কিনা বা আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধান কি? সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।

কোরবানির পশুর সাথে আকিকা বা আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধান কি?

কুরবানি এবং আকিকার সময় যদি একত্রে হয়ে যায় অর্থাৎ কোরবানির সময় গুলোতে যদি সন্তানের আগেকার সময় হয় তাহলে কোরবানির পশু গুলোই কি আকিকার জন্য যথেষ্ট হবে? এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?

কোরবানির পশুর সাথে আকিকা করা যাবে কিনা বা আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধান নিয়ে আলেমদের মাঝে দুইটি মত রয়েছে। একদল আলেম মনে করেন যে কোরবানির পশুর সাথে আকিকা করা বৈধ নয়। এটি ইমাম মালেক, ইমাম শাফির অভিমত।
এই পক্ষের আলেমগণ দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন যে, আকীকা এবং কুরবানীর আলাদা আলাদা আমল।তাই এই দুইটি বিধান একত্রে পালন করা সমীচীন নয়। তাছাড়া যেহেতু দুইটি ভিন্ন আমল এবং দুই আমলের উদ্দেশ্য ভিন্ন তাই একটি অপরটির স্থলাভিষিক্ত কখনোই হতে পারবেনা।  

হাইতামি স্বীয় গ্রন্থ  'তুহফাতুল মুহতাজ শারহুল মিনহাজ' এ বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি তার একই পশুকে কোরবানি আকিকার নিয়তে জবাই করেন তাহলে সেটি বৈধ হবে না। কিন্তু সেটি যদি ভোজ হিসেবে খাইয়ে দেয় তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই।

অপর পক্ষের আলেমগণ মনে করেন যে, কোরবানির পশুর সাথে আকিকা কারণে কোন ক্ষতি হবে না।একই সাথে কোরবানি ও আকিকা করা সম্পূর্ণ বৈধ। এবং একই পশু কোরবানি আকিকার জন্য জবাই করা যেতে পারে। এটি হাসান বসরী মোহাম্মদ বিন শিরিন সহ অন্যান্য আলেমদের অভিমত।

এ মতাবলম্বীদের দলিল হচ্ছে­, কোরবানি ও আকিকা উভয় আমলেরই উদ্দেশ্য পশু কোরবানি করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা তাই কোরবানির পশুর সাথে আকিকা করাতে কোন বাধা নেই। এবং একটি অপরটির মাঝে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। যেমনিভাবে তাহিয়্যাতুল মসজিদ ফজর নামাজের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে। কোরবানির পশুর সাথে আকিকা করা যাবে কিনা? বা আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধান কি সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে।

ইবনে আবু শাইবা (রহঃ) "আল-মুসান্নাফ" গ্রন্থে উল্লেখ করেন হাসান থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি তার ছেলের পক্ষ থেকে কুরবানী করেন, তাহলে সেই কোরবানিটি তার আকিকার হিসেবেও যথেষ্ট হবে।

তবে কাতাদা থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেনঃ পশুকে যদি আকিকার পশু হিসেবে জবাই করা না হয় তাহলে সেটি আকিকার জন্য যথেষ্ট হবে না। 

আল-বুহুতি (রহঃ) "শারহু মুনতাহাল ইরাদাত" গ্রন্থে বলেনঃ "যদি আকিকা ও কোরবানির সময় একত্রে পড়ে যায় অর্থাৎ কোরবানির জন্য নির্ধারিত সেই দিনগুলো রয়েছে এই দিনগুলোতে যদি সন্তানের আকিকার সময় হয়ে যায়, তাহলে সেই দিনগুলোতে আকিকা হিসেবে যে পশু জবাই করা হবে সেটি কোরবানি হিসেবেও গণ্য হবে। ঠিক তেমনি ভাবে যদি এই দিনগুলোতে কোরবানি করা হয় তাহলে সেই কোরবানি আকিকা হিসেবেও গণ্য হবে।" 

উদাহরণ হিসেবে গ্রন্থকার বলেনঃ " যেমনি ভাবে যদি জুমার দিন এবং ঈদের দিন দিনে পরে, তাহলে যেকোনো একটির জন্য গোসল করলেই উভয়ের জন্য গোসল হিসেবে গণ্য হবে"। অথবা  তামাত্তু হজ্জকারী কিংবা ক্বিরান হজ্জকারী যদি কোরবানীর দিন একটি ভেড়া জবাই করে সেটা হজ্জের ফরয হাদি ও কোরবানী হিসেবে যথেষ্ট হবে।"

আল-বুহুতি (রহঃ) "কাশ্শাফুল ক্বিনা" গ্রন্থে বলেনঃ যদি কোরবানি ও আকিকা একই সময়ে পড়ে এবং একটি পশু জবাই করার মাধ্যমে উভয়টির নিয়ত করে। অর্থাৎ একটি পশু জবাই করার মাধ্যমেই যদি আকিকা ও কুরবানীর নিয়ত করে তাহলে উভয়টি গ্রহণযোগ্য হবে। অর্থাৎ আকিকা ও কোরবানি হয়ে যাবে। 

শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম (রহঃ)ও এই মত টি সমর্থন করেই। তিনি বলেনঃ যদি কোরবানি আকিকার সময় একত্রে হয়ে যায় এবং পরিবারের প্রধান কুরবানী করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকে, এবং তিনি যদি কোরবানির জন্য পশু জবাই করেন তাহলে এর মাধ্যমে আকিকাও সম্পন্ন হয়ে যাবে। 

তবে এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু ওলামায়ে কেরাম মনে করেন যে, আকীকা এবং কুরবানীর পশু একজনের পক্ষ থেকেই হতে হবে অর্থাৎ যদি সন্তানের আকিকার উদ্দেশ্য থাকে তাহলে তার নিয়তি কোরবানি ও আকিকা করতে হবে। 
কিন্তু আরেকদল আলেম তারা মনে করেন যে উভয় জবাই একই ব্যক্তির পক্ষ থেকে না হলেও কোন সমস্যা নাই। এক্ষেত্রে কোরবানি করলে সেটি বাবার নামে করতে পারবে আর আর আকিকা সেটি ছেলের নামে। 

কোরবানির পশুর সাথে আকিকা করা যাবে কিনা? বা আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধান কি সে ব্যাপারে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এখন কোরবানির পশুর সাথে আকিকা করা যাবে কিনা? বা আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধান কি সে ব্যাপারে আপনাদের প্রশ্নের জবাব ইতোমধ্যেই পেয়েছেন। 

আকিকা কখন করা উত্তম এবং আকিকার গোশত কে কে খেতে পারবেন?

নবজাতক শিশুর আকিকা করা মুস্তাহাব। আকিকা করার মাধ্যমে এ কথা স্বীকার করা হয় যে, আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ। যে তিনি আমাদেরকে একটি সন্তান দান করেছেন। যাইহোক আকিকা করার উত্তম সময় কবে সেই ব্যাপারে হাদিসে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। জন্মের সপ্তম দিনে পশু জবাই করার মাধ্যমে আকিকা করা সুন্নত।

এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্তানের আকিকা করার ইচ্ছা করে, সে যেন তা পালন করে। ছেলের জন্য সমমানের দুইটি ছাগল। আর মেয়ের জন্য একটি।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাকঃ ৭৯৬১)

অপর আরেকটি হাদিসে আগেকার ব্যাপারে বলা হয়েছে,  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সন্তানের সঙ্গে আকিকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর (অর্থাৎ পশু যবাই কর) এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও। (বুখারি, হাদিসঃ ৫৪৭২)

অর্থাৎ শিশুর জন্মের পর সপ্তম দিনে আকিকা করা সর্বোত্তম। তবে ক্ষেত্রবিশেষে, ১৪ তম দিনে বা ২১ তম দিনেও আকিকা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে হাদিসে অনেক বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়। যেমনঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) তার দৌহিত্রদ্বয় হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর আকিকা সপ্তম দিনে করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২৮৩৪)

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন, আকিকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে। এবং তাও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে। (মুসতাদরাকে হাকেমঃ ৭৬৬৯)

তবে কোন ব্যক্তি যদি সন্তানের আকিকা ১৪ তম দিনে বা ২১ তম দিনেও করতে না পারে তাহলে পরবর্তীতে আদায় করে নিতে পারবেন। কিন্তু যদি কখনোই না করে এরপরও আকিকা না করার কারণে কোন ব্যক্তি গুনাহগার হবে না। তবে যেহেতু এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম পালন করেছেন তাই এটি পালন করা মুসলমানদের কর্তব্য। 

এবার আসা যাক আকিকার গোশত কারা খেতে পারবে সেই প্রসঙ্গে। কোরবানির গোশত খেতে পারবে সে ব্যাপারে হাদীসে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। যেমন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আকিকার গোশত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে। (মুসতাদরাকে হাকেমঃ ৭৬৬৯ ) অর্থাৎ আকিকার গোস্ত সন্তানের পিতা মাতা, দাদা দাদি, নানা নানি সহ সকল আত্মীয় স্বজন খেতে পারবে। 
অপর একটি হাদীসে এসেছে, সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (রহ.) বলেন, আমি আতা (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, আকিকার গোশত তার পরিবার খেতে পারবে এবং হাদিয়াও দিতে পারবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি সদকা করে দিতে হবে? তিনি বললেন, না, তুমি চাইলে খেতে পারো এবং হাদিয়াও দিতে পারো।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক৭৯৬৯) 

কোরবানির পশুর সাথে আকিকা - আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধানঃ উপসংহার

উপরে কোরবানির পশুর সাথে আকিকা যাবে কিনা বা আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধান কি? সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আশা করি এই আলোচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। এবং উপরে উল্লেখিত এই আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন কোরবানির পশুর সাথে আকিকা যাবে কিনা বা আকিকা ও কুরবানি একসাথে করার বিধান কি?

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url