OrdinaryITPostAd

রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে করণীয় কী জেনে নিন

প্রত্যেকটি মেয়েরই প্রতি মাসে মাসিক হয়। এটি আল্লাহ্‌ প্রদত্ত একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। রমজান মাসও তার ব্যতক্রম নয়। রমজান মাসে রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে আপনি কি কি করতে পারবেন আর রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে কি কি করতে পারবেন না আজ আমরা সেটাই জানব।
চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে কি কি করা জায়েজ আছে।

পেজ সূচিপত্রঃ রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে

রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে কি রোজা রাখতে পারবে?

না! কোন মেয়ের রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে সে রোজা রাখতে পারবে না। সেই দিন থেকে যতদিন পর্যন্ত হায়েজ বা মাসিক চলবে ততদিন পর্যন্ত সে রোজা, নামাজ, কোরআন পড়তে পারবে না।
মাসিক শুরু হওয়া থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত খাবার খাওয়া জায়েজ কিন্তুসেটা অন্যদের সামনে খাওয়া যাবে না। তবে পরে সেগুলোর কাজা আদায় করতে হবে।

মাসিক চলাকালীন সময় মেয়েদের রোজার নিয়ম

মাসিক চলাকালীন সময় মেয়েদের রোজা রাখা জায়েজ নয়। প্রত্যেক নারীরই প্রতি মাসে পিরিয়ড বা মাসিক হয়। এটি ৬,৭ দিন স্থায়ী হয়। অনেক সময় আবার ৯,১০ অথবা ১১ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সেক্ষেত্রে পাক-পবিত্র না হওয়া অব্দি নামাজ, রোজা আদায় করা যাবে না।

মহিলাদের রোজা সম্পর্কে কিছু মাসয়ালা | রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে

মাসয়ালা- ১ঃ মহিলাদের রোজার সময় রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক/পিরিয়ড হলে রোজা রাখা যাবে না। এই সময় খাওয়া-দাওয়া করা যাবে। কিন্তু অন্য রোজাদার ব্যাক্তির সামনে খাওয়া যাবে না। যদি দিনের বেলায় পিরিয়ড বন্ধ হয় তাহলে বাকি দিন রোজাদারদের মত সকল প্রকার খাওয়া-দাওয়া ও সঙ্গম করা যাবে না এটা ওয়াজিব।

মাসয়ালা- ২ঃ বাচ্চা প্রসবের পরে মাসিক বা স্রাব হলে সেই সময় রোজা রাখা যাবে না। কিন্তু পরে সেই রোজার কাযা আদায় করতে হবে।

মাসয়ালা- ৩ঃ যদি আপনি পবিত্র অবস্থায় রোজা রাখেন আর সেই রোজার মধ্যে পিরিয়ড হয় বা বাচ্চা প্রসব করেন তাহলে সেই রোজা হবে না। পরে সেই রোজার কাযা আদায় করতে হবে। সেটা নফল রোজা হোক আর ফরজ।

মাসয়ালা- ৪ঃ যদি রমজান মাসে সূর্যদয়ের পর মাসিক বন্ধ হয়, এবং সেই সময় আপনি কিছু না খেয়ে রোজা রাখার জন্য নিয়ত করলে সেই রোজা হবে না। কারণ সেই দিনের প্রথমে আপনি পবিত্র ছিলেন না। তাই সেই রোজা কাযা আদায় করতে হবে।
মাসয়ালা- ৫ঃ যদি আপনি ১০ দিন ১০ রাত পর শেষ রাতে পবিত্র হন কিন্তু তখন হাতে একটুও সময় নাই যে আপনি একবার আল্লাহু আকবর বলবেন। তারপর ও তার পরের দিনের রোজা আপনার জন্য ওয়াজিব। আর যদি আপনার ১০ দিনের কম সময়ে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, এবং এতটুকু রাত অবশিষ্ট আছে যে আপনি গোসল করতে পারবেন কিন্তু একবার আল্লাহ্‌ আকবর বলতে পারলেন না, তাহলে ও আপনার জন্য পরের দিনের রোজা ওয়াজিব। এই অবস্থায় গোসল না করে ও রোজার নিয়ত করতে পারবেন কিন্তু যদি এর থেকে কম সময় থাকে তাহলে রোজা হবে না। কিন্তু সেদিন সারাদিন তাকে রোজাদারদের মত থাকতে হবে। আর পরে কাযা রোজা করতে হবে।

মাসয়ালা- ৬ঃ পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা, মুখস্ত করা জায়েজ না।

মাসয়ালা- ৭ঃ যে মেয়ে কোরআন হাফেজ হচ্ছে সে হাফেজ হওয়ার সময় যদি পিরিয়ড হয় কিন্তু তার কোরআন তেলাওয়াত করা প্রয়োজন সেক্ষেত্রে সেই মেয়ে মনে মনে কোরআন তেলাওয়াত করবে জোরে উচ্চারন করা যাবেনা।

মাসয়ালা- ৮ঃ কেউ মাসিক চলাকালীন অবস্থায় সিজদার আয়াতে কোরআন তেলাওয়াত শুনলে তার উপর সিজদা করা ওয়াজিব না।

মাসয়ালা- ৯ঃ বাচ্চাদের কোরআন শিক্ষা দানকারী মহিলা মাসিক চলাকালীন সময়ে বাচ্চাদের বানান করে শিক্ষা দিতে পারবে। কিন্তু যদি উচ্চারণ করে শিক্ষা দেয় তাহলে একবারে ১ আয়াত উচ্চারণ করা যাবে না। শ্বাস ভেঙ্গে ভেঙ্গে উচ্চারন করে পড়তে হবে।

মাসয়ালা- ১০ঃ পিরিয়ড স্থায়ী কালীন সময় বা রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে কোরআন শরীফ স্পর্শ করা যাবেনা। এমনকি কোথাও আরবি অক্ষর লিখা থকলেও সেটা স্পর্শ করা যাবে না। কিন্তু যদি অন্য কোন কিতাবে কোরআনের আয়াত অপেক্ষা অন্য লিখা বেশী থাকে তাহলে সেটা ধরা যাবে কিন্তু আরবি হরফের উপর হাত দেওয়া যাবেনা।

মাসয়ালা- ১১ঃ যদি কোন কাগজের উপর বা অন্য কোন কিছুর উপর কোরআনের আয়াত লিখা থাকে তাহলে সেটা হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না কিন্তু কোন কাপড় দিয়ে ধরা যাবে।

মাসয়ালা- ১২ঃ কোরআন শরীফের গিলাফ যদি খোলা থাকে তাহলে সেই গিলাফ দিয়ে অথবা শরীর থেকে আলাদা কোন কাপড় দিয়ে কোরআন শরীফ ধরা যাবে। কিন্তু কোরআন শরীফের সাথে যুক্ত বা নিজের শরীরের সাথে যুক্ত কোন কাপড় দিয়ে কোরআন শরীফ ধরা যাবে না।

মাসয়ালা- ১৩ঃ হায়েজ অবস্থায় দোয়া-দূরুদ পাঠ করা, তাসবিস-তাহলিল পাঠ করা যাবে শুধু মাত্র কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে না।

মাসয়ালা- ১৪ঃ খাবার শুরু করার আগে বিসমিল্লহির রাহমানির রাহিম ও শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা যাবে।

মাসয়ালা- ১৫ঃ গর্ভবতী মহিলা বা স্তন্যদানকারিনী মহিলা যদি রোজা রাখার ফলে যদি বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে রোজা ভঙ্গে গেলা যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে কাযা রোজা রাখতে হবে।

মাসয়ালা- ১৬ঃ যদি কোন মহিলা ঔষুধ খেয়ে মাসিক বন্ধ রেখে রোজা থাকে তাহলে সেই রোজা হবে কিন্তু এমন করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এমন না করা ভালো।

মাসয়ালা- ১৭ঃ ইস্তিহাযা হল অসুস্থতাজনিত কারণে দেখা দেয়া স্রাব, নিয়মিত পিরিয়ডকালীন সময়ের বেশি সময় ধরে হয়। এই অবস্থায় ইতিকাফে বসা, রোজা রাখা, কোরআন শরীফ তেলাওয়াত ও স্পর্শ করা যাবে।

মাসয়ালা- ১৮ঃ রোজা ও অজু থাকা অবস্থায় বাচ্চাদের দুধ খাওয়ালে অজু বা রোজা ভাঙ্গে না।

মাসয়ালা- ১৯ঃ বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর প্রসূতি মায়েরা রোজা রাখতে পারেনা। সেক্ষেত্রে তাদের ফিদইয়া দেওয়া যথেষ্ট না। তাই তাদের সুস্থ হওয়ার পর কাযা রোজা রাখতে হবে।

শেষ কথাঃ রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে

বন্ধুরা, আজ আমরা রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে করনীয় কি তা জানলাম। কি কি করলে বা কি কি কারণে রোজা রাখা যাবে বা যাবেনা সেই সব তথ্য আমাদের এই রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে করনীয় পোস্টটিতে বিতারিত আলোচনা করেছি।
আশাকরি, আমাদের এই রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে করণীয় পোস্টটি থেকে আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url