OrdinaryITPostAd

৬টি সেরা ভিডিও ফাইল ফরম্যাট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

কখনো খেয়াল করেছেন কি, অডিও বা ভিডিও ফাইলের নামের শেষে এক্সটেনশন  (ফরম্যাট) হিসেবে mp3, mp4, MOV, MKV ইত্যাদি? আসলে এগুলো দিয়ে কি বুঝায়? আমাদের প্রায় সকলের মনেই কখনো না কখনো এ নিয়ে প্রশ্ন উঁকি মেরে থাকবে। তাহলে আসুন আজকে আমাদের এই কোটি টাকার প্রশ্নের সমাধান বের করি!


আসলে এ সকল এক্সটেনশন এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি এরা কি ধরনের কন্টেন্ট। এক্সটেনশন দেখেই বুঝে ফেলা সম্ভব এটি অডিও নাকি ভিডিও, এটি মুভি নাকি সিডির জন্য তৈরী? শুধু কি কন্টেন্টই বুঝতে পারি আমরা? এক্সটেনশন দেখে আমরা আরো জানতে পারি কোন ধরনের codecs ব্যবহৃত হয়েছে এ সকল কন্টেন্টে!

Codecs জিনিসটা কি?

কোডেক্স হলো এক ধরনের সংক্ষেপনকারী প্রক্রিয়া যা আপনার অডিও বা ভিডিও কন্টেন্ট এর আকার(সাইজ) হ্রাস করে। নয়ত সামান্য একটি অডিও বা ভিডিও বিক্ষিপ্তভাবে সম্পূর্ণ হার্ডডিস্ক এর জায়গা খেয়ে ফেলতে সক্ষম! এই কোডগুলো সাইজ হ্রাসে অত্যন্ত কার্যকরী।অনেকটা এরকম বলা যায়, অগুছালো একই ধরনের জিনিসপত্রকে একটি বান্ডেল করে সাজিয়ে রাখলে যেমন কম জায়গা নেয়,এক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটে!

Codecs h.264

অনেক ধরনের কোডেক্স বিদ্যমান। এর মধ্যে বর্তমানে যে codecs টি বেশি পরিচিত তা হলো h.264। এটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ছবির মান (কোয়ালিটি) অক্ষুণ্ণ রেখে ভিডিও এর সাইজ কম্প্রেস ও ডিপ্রেস করে থাকে!

আমরা স্ক্রিনে যে সকল ভিডিও দেখি তার প্রতিটি ফ্রেম অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিক্সেল দিয়ে গঠিত। h.264 প্রতিটি ফ্রেম এর অসংখ্য পিক্সেলকে ২৫৬ টি ব্লকে আলাদা করে সংরক্ষণ করে। এই ব্লকগুলো প্রতিটি তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ফ্রেমের দৃশ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে। যদি একাধিক ফ্রেমে একটি নির্দিষ্ট অংশ একই থাকে, তবে কেবল মাত্র একটি ফ্রেম থেকেই ওই কমন পিক্সেল সংরক্ষিত হয় এবং বাকি ফ্রেমগুলো থেকে বিশেষ এলগরিদম এর মাধ্যমে ওই কমন পিক্সেলগুলো বাদ যায়। একে বলা হয় Residual। এই সংরক্ষিত অংশগুলো ১৬টি করে চেকারবোর্ড প্যাটার্ন হিসেবে ০ ও ১ অর্থাৎ বাইনারী ডিজিটে পরিবর্তীত হয়। ফলে ভিডিও এর সাইজ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।

ভিডিও এর মান নির্ভর করে এই Residual এর মানের উপর। Residual এর মান কম বা বেশি হওয়ার সাথে সাথে ভিডিও ও অডিও কোয়ালিটি চেঞ্জ হয়।

বিষয়টা বুঝতে অসুবিধা হলে অন্যভাবে ভেবে দেখুন। একই ছবি যদি JPEG ফর্মেটে আপনি রাখেন তবে আপনি ইচ্ছামত এর সাইজ কমাতে পারেন তবে খেয়াল রাখবেন সাইজ কমার অর্থ হলো পিক্সেল কমা,ফলে ছবির মানও ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে!

উপরের উদাহরণ যদি আপনি বুঝে থাকেন তবে এখন নিশ্চয় বুঝে গেছেন কেন 3gp ফর্মেটে ভিডিওর মান খারাপ দেখায় (সাইজ কিন্তু ছোট), অন্যদিকে mp4 ফর্মেটে ভিডিও এর সাইজ বাড়ার সাথে সাথে কোয়ালিটিও বাড়ে।

Codecs h.265

আরেকটি নতুন codecs হলো h.265 যা আগেরকার h.264 এর চেয়েও অধিক উন্নত। একে h-e-b-c ও বলা হচ্ছে। এটি একত্র ৪০৯৬ পিক্সেল নিয়ে এক একটি ব্লক তৈরি করে। ফলে ভিডিও ও অডিও কোয়ালিটি হয় আরো পরিষ্কার। এই codecs এর বিশেষ এলগরিদম এর ফলে ভিডিও এর মান যেমন একদিকে উন্নত হয়েছে,অপরদিকে সাইজও কমছে। ফলে বর্তমানে 8k কোয়ালিটির ভিডিও অনলাইনে ডাইরেক্ট স্ট্রিমিং করা সম্ভব হচ্ছে!

উল্লেখ্য, h.264h.265 codecs ব্যবহারের জন্য কোম্পানিগুলোকে রয়্যালটি বাবদ সম্মানি দিতে হয়। এ কথা মাথায় রেখে গুগলের পক্ষ থেকে মুক্ত গবেষণার জন্য VP8VP9 নামের দুইটি রয়্যালটি ফ্রি codecs ও বের হয়েছে।এগুলোর মধ্যে কোনটি সর্বত্তম তা নিয়ে মতভেদ আছে।
উল্লেখ্য, নেটফ্লিক্স কিন্তু মুক্ত codecs ই ব্যবহার করে!

এবার অতি পরিচিত কিছু ফরমেট নিয়ে সংক্ষেপে বলি-
  • ইউটিউবে আপনি যদি ৭২০ পিক্সেল বা ১০৮০ পিক্সেল এর ভিডিও আপলোড করেন / লাইভ স্ট্রিমিং করেন তবে তা কোয়ালিটিপূর্ন দেখায়। কারণ এতে mp4 ফরমেট অধিক ব্যবহৃত হয়।
  • সিডি ডিস্কের ক্ষেত্রে ব্ল-রে( Blue ray) ফর্মেট ব্যবহৃত হয়।
  • ব্লডকাস্ট টিভি ও ডিভিডি ভিডিও এর জন্য mpeg-2 ও blue-ray ফর্মেট ব্যবহৃত হয়।

MP4

MP4 ফরম্যাট হলো mpeg ভিডিও এর সাথে  mp3 / AAC অডিও  ও h.264 codes এর সমন্নয়ে গঠিত অত্যন্ত জনপ্রিয় ফরমেট। ইউটিউবারদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ফরমেট এটি

M4V

 M4V হলো MP4 ফরমেটের আপগ্রেট ভার্সন। mp4 এর সাথে DRM প্রযুক্তি যুক্ত হয়ে M4V ফরমেট এর সৃষ্টি। যদিও এর পরিচিতি এখনও mp4 এর চেয়ে কম।

MKV

এর পূর্নরূপ Matroska। এই বর্তমানে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে। কারণ এটি নানা ফরমেটের অডিও ও ভিডিও এর ফরমেটের সমন্বয়ে তৈরি। এমনকি এতে নতুন h.265 codes ও যুক্ত করা হয়েছে। ফলে ভিডিও এর মধ্যে কোন অংশও জুম করে ভালো করে দেখা সম্ভব। এটি অত্যন্ত সহজ ও ব্যবহার উপযোগী।

MOV

কোম্পানি ও ডিভাইস ভেদেও আলাদা আলাদা ফরমেট আছে। যেমন MOV হলো Apple কোম্পানির সৃষ্টি এমন এক ফরমেট যেটি অগণিত codecs সাপোর্ট করে। একই সাথে এই ফরমেটের ভিডিও অডিও edit ও তুলনামূলক সোজা।

FLV ও F4V

পরিশেষে, FLV F4V দুইটি ফরমেট নিয়ে কথা বলবো। এই দুইটি পরিচিতি লাভ করেছিলো Adobe Flash এর হাত ধরে। কিন্তু বর্তমানে Adobe Flash তাদের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে, ফলে এই ফরমেট দুইটিও তাদের জনপ্রিয়তা আর তেমন ধরে রাখতে পারছে না!

এই ছিলো নানা ধরনের ফরমেট নিয়ে আজকের যৎ সামান্য আলোচনা। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url