OrdinaryITPostAd

সদকায়ে জারিয়া কি কি - সদকায়ে জারিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত

প্রিয় দ্বীনি বন্ধুরা, সদকায়ে জারিয়া কি কি রয়েছে এ ব্যাপারে হয়তো আপনারা সুস্পষ্টভাবে জানেন না।প্রতিটি ব্যক্তির জন্য সদকায়ে জারিয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার সদকায়ে জারিয়া কি কি সে সম্পর্কে সকলেরই জেনে নেওয়া প্রয়োজন। আজ আপনাদের সামনে এই পোস্টর মাধ্যমে সদকায়ে জারিয়া কি কি এবং এর ফজিলতসমূহ তুলে ধরব।
সদকায়ে জারিয়াকে 'সাদাকাতুন জারিয়াহ্' বলেও অভিহিত করা হয়। আজ এই পোস্টটিতে আপনাদের সদকায়ে জারিয়া কি কি, সদকায়ে জারিয়া আল কাউসার, সদাকায়ে জারিয়ার ফজিলত, সদকা কিভাবে করতে হয় এসকল যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিব। তাই সম্পূর্ণ পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্র - সদকায়ে জারিয়া কি কি - সদকায়ে জারিয়া আল কাউসার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই

সদকা কি - সদকায়ে জারিয়া অর্থ কি

ইসলামে সদকা বলতে দানশীলতা বোঝায়। যাকাত আর সদকা এক নয়। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গরীব দুঃখীকে বা যে কোনো উন্নতিতে দান করাকে সদকা বলে। বান্দার গুনাহ মাফের জন্য দান সদকা করা অত্যন্ত কার্যকরী ইবাদত। সদকা কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে, দান করে অনুগ্রহ প্রকাশ করতে পারবে না অর্থাৎ গ্রহীতাকে তুচ্ছ মনে করা যাবে না।

মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন, "যারা আল্লাহর রাস্তায় তাদের সম্পদ ব্যয় করে, অতঃপর তারা যা ব্যয় করেছে, তার পেছনে খোঁটা দেয় না এবং কোনো কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট তাদের প্রতিদান রয়েছে এবং তাদের কোনো ভয় নেই, আর তারা চিন্তিত হবে না" (সূরা বাকারা : ২৬২)। সদকা মানে দান করা আর জারিয়া অর্থ হলো প্রবহমান, চিরস্থায়ী ইত্যাদি। সুতরাং সদকায়ে জারিয়া হলো এমন দান যার কার্যকারিতা কিয়ামত পর্যন্ত শেষ হবে না।
যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন সদকাকারী ব্যক্তি সওয়াব পেতে থাকবে। এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) হাদিসে বলেন, "যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমল স্থগিত হয়ে যায়, কেবল তিনটি আমল ছাড়া; সদাকায়ে জারিয়া, কিংবা এমন জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয় কিংবা এমন সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।" (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ১৬৩১)। অতএব সদকায়ে জারিয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। চলুন এবার জেনে নিই সদকায়ে জারিয়া কি কি।

সদকায়ে জারিয়া কি কি? 

মৃত্যুর মাধ্যমে আমাদের জীবনধারা বন্ধ হয়ে গেলেও মহান আল্লাহ আমাদের সওয়াব লাভের ভান্ডার বন্ধ করে দেননি। তিনি সদকায়ে জারিয়ার মাধ্যমে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত আমাদের সওয়াব লাভের সুযোগ করে দিয়েছেন। এটি মহান আল্লাহর অশেষ করুণা ও রহমত। হাদিসের আলোকে সদকায়ে জারিয়া কি কি বা কিভাবে সদকায়ে জারিয়া আদায় করা যেতে পারে চলুন জেনে নিই। আপনি এ সকল কাজগুলো সদকায়ে জারিয়া হিসেবে খুব সহজেই আমল করতে পারবেন।
  • আপনার সামর্থ্য থাকলে এতিমখানা, মক্তব, মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল স্থাপনে সহায়তা করুন। এছাড়া গাছ লাগান, টিউবওয়েল বা পান করার পানির ব্যবস্থা করুন। আপনার মৃত্যুর পরেও মসজিদ-মাদরাসায় দ্বীন শিক্ষা চালু থাকবে, হাসপাতালে রোগীরা সেবা পেতে থাকবে, গাছ থেকে মানুষ অক্সিজেন এবং খাবার পাবে, পানির উৎস থেকে পান করার পানি পেতে থাকবে। এ সব কিছু সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর দ্বারা সবাই উপকৃত হবে এবং মৃত্যুর পরেও পরকালের জীবনে আপনার আমলনামায় অসংখ্য সওয়ার যুক্ত হতে থাকবে।
  • মৃত বাবা মায়ের জন্য সবচেয়ে কার্যকর হলো তার নিজ সন্তানের দোয়া। তাই সন্তানকে সঠিক এলমে দ্বীন শিক্ষা দিন। তাহলে মৃত্যুর পর তার দোয়া আপনার পরকালের জীবনে উপকারে আসবে এবং তার জ্ঞান দ্বারা আরও ব্যক্তি সৎপথে ফিরে আসবে। এটি সদকায়ে জারিয়া হিসাবে বেশ কার্যকরী। 
  • আপনার নিকটাত্মীয়, সন্তান, বন্ধু, প্রতিবেশী এমনকি যেই হোক না কেন সবাইকে একটু হলেও দ্বীনের প্রকৃত শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার মৃত্যুর পর তারা দ্বীনের উপর অবিচল থেকে যে সওয়াব পাবে আপনিও তখন তার ভাগিদার হবেন।
  • মসজিদে কুরআন শরীফ রাখুন। যখন কোনো বান্দা সেই কুরআন পড়বে তখন তার প্রতিটি অক্ষর পড়ার বিপরীতে আপনার আমলনামায় নেকি যুক্ত হতে থাকবে। 
  • যথাসাধ্য ছোট এতিম শিশুদের সাহায্য করুন। নিজের হাত খরচের টাকা থেকে তাদের খাওয়ান। একদিন তারা আপনার মঙ্গলের জন্য দোয়া করবে।
  • জায়নামাজ ক্রয় করে মসজিদে দান করুন। কারণ সেই জায়নামাজে যতদিন মানুষ নামাজ আদায় করবে আপনিও তার ফরজ আমল আদায়ের সওয়াব পেতেই থাকবেন।
  • আপনার পুরাতন পরিধেয় পোশাক, জুতা ও যেসকল জিনিস আপনি ব্যবহার করছেন না কিন্তু ব্যবহার উপযোগী আছে তা অন্যদের দিয়ে দিন। এতে করে তারা উপকৃত হতে থাকবে।
  • সদকায়ে জারিয়া হিসাবে আপনি আপনার বাড়ির প্রবেশমুখে অথবা কোনো দেওয়ালে বা রাস্তায় দোয়া সংবলিত কিছু লিখে রাখুন। এতে করে যখনই কোনো ব্যক্তি সেই দোয়া দেখতে পেয়ে পাঠ করবে আপনিও তার দোয়া পাঠ করার জন্য সওয়ার পাবেন।
  • আপনি যদি আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টি যেমন পাখপাখালির সুবিধার জন্য বনায়ন করেন তাহলে অনেক প্রাণী তা থেকে উপকৃত হবে। এটিও সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। 
  • অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করুন, যথাসাধ্য মানুষকে দান করুন, অপরকে ভালো কাজের শিক্ষা দিন। এসব কিছুই সদকায়ে জারিয়া হিসাবে আপনার পরকালের জীবনে উপকারে আসবে ইনশাআল্লাহ।

সদকায়ে জারিয়া আল কাউসার

সদকায়ে জারিয়া কি কি আমরা তা ইতোমধ্যে জেনে নিয়েছি। এছাড়া সদকায়ে জারিয়া আরও বিভিন্ন ভাবে আদায় করা যায়। তার মধ্যে একটি হলো সদকায়ে জারিয়া আল কাউসার। কাউসার শব্দের অর্থ হলো অফুরন্ত কল্যাণ। মহান আল্লাহ সদকায়ে জারিয়া আদায়ের মাধ্যমে বান্দাকে অফুরন্ত কল্যাণ দান করেন।

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, কবরে একজন মৃত মানুষকে মহাসাগরে পতিত অসহায় ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছেন, যে সামান্য খড়কুটা আকঁড়ে ধরেও বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা করে। এ চরম অসহায়ত্বের মাঝে ঘোর অন্ধকার কবরে মানুষের একমাত্র সঙ্গী তার নেক আমল। বান্দা মৃত্যুর পর কোন নেক আমল করতে অক্ষম হলেও চলমান থাকবে সদকায়ে জারিয়া আল কাউসার। সুতরাং, সদকায়ে জারিয়া কি কি তা জেনে আমাদের সদকা আদায় করা উচিত।

সদকায়ে জারিয়ায় ফজিলত

সদকায়ে জারিয়ার ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না। আপনারা সদকায়ে জারিয়া কি কি রয়েছে এবং কিভাবে তা সহজেই আদায় করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। এবার আপনাদের সামনে সদকায়ে জারিয়ার ফজিলত নিয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা বলব।
সদকা সম্পর্কে হাদিস ও এর ফজিলত বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। এক কিতাবে রাসূল (সাঃ) বলেন, "মানুষের বিচার ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ক্বিয়ামতের ময়দানে উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকেই তার সদকার ছায়ায় অবস্থান করবে" (মুসনাদে আহমদ)। এ হাদিস থেকে বোঝা যায় সদকায়ে জারিয়ার আমল আমাদের পরকালে কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা করবে।

সদকার ফজিলত এতই বেশি যে মহান আল্লাহ কুরআনে বলেন, "তোমরা মৃত্যু আসার পূর্বেই আল্লাহ্ প্রদত্ত রিযিক থেকে ব্যয় কর, যখন তোমরা এই বলে আফসোস করবে এবং বলবে; হে আমার প্রভু! আমাকে যদি অল্প সময়ের অবকাশ দেয়া হতো তাহলে আমি সদকা করতাম এবং নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। কিন্তু কারো মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে আল্লাহ্ তা কখনো এক মুহূর্তের জন্যও পিছিয়ে দেননা। নিশ্চয়ই তোমরা যে আমল কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত" [সূরা মুনাফিকুন: আয়াত নং- ১০, ১১]। অতএব, সদকায়ে জারিয়ার ফজিলত অন্য যেকোনো ইবাদতের চেয়েও অনেক বেশি। 

শেষ কথা - সদকায়ে জারিয়া কি কি | সদকায়ে জারিয়া আল কাউসার

সম্মানিত দ্বীনি বন্ধুগণ, আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর আপনি সদকায়ে জারিয়া কি কি, সদকায়ে জারিয়া আল কাউসার, সদকায়ে জারিয়ার ফজিলতসহ সদকার যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে জানতে পেরেছেন। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে মৃত্যুর পূর্বেই সদকায়ে জারিয়ার গুরুত্ব উপলব্ধি করে তা যথাযথভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন। পোস্টটি সকলের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও সদকায়ে জারিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিন। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url