OrdinaryITPostAd

পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরছে কিন্তু আমরা টের পাচ্ছিনা কেন?


আপনি কি জানেন যে, এই মুহূর্তে আপনি ৪৬৫ মি./সেকেন্ড বেগে ঘুরছেন? শুধু আপনিই কেনো, আমি আপনি এবং পৃথিবীতে অবস্থিত সকল বস্তু ১৬৭৫ কি.মি./ঘন্টা বা ৪৬৫মি./সেকেন্ড বেগে ঘুরছি। এর গতি কিছুটা কম হবে যদি আপনি উত্তর বা দক্ষিণ পোলের কাছাকাছি থাকেন। পৃথিবী নিজের অক্ষের চারদিকে ১৬৭৫কি.মি./ঘন্টা বেগে ঘুরছে।আর এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেনের বেগের ৩গুন। যার স্পীড ৬০৩ কি.মি./ঘন্টা। শুধু পৃথিবী ই না, মহাবিশ্বে অবস্থিত সকল গ্রহ, উপগ্রহ, গ্যালাক্সি মানে মহাবিশ্বে অবস্থিত সকল বস্তুই গতিশীল। পৃথিবী তার নিজ অক্ষের চারদিকে ঘুরতে সময় নেয় ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট।

প্রশ্ন হলো আমরা কেনো পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি অনুভব করতে পারি না? উত্তর টা  খুবই সহজ, যা পৃথিবীর গতিবিধির মধ্যেই লুকিয়ে আছে। পৃথিবী যদি হঠাৎ তার ঘুর্ণন থামিইয়ে দেয় তাহলে অনুভূতি টা ঠিক প্রচন্ড গতি তে চলতে থাকা গাড়িতে হঠাৎ ব্রেক কষার মত হবে। কল্পণা করেন আপনি একটি উড়োজাহাজে করে উড়ে যাচ্ছেন এটি একটি নির্দিষ্ট বেগ ও উচ্চতায় আছে,এমতাবস্থায় যদি আপনি আপনার চোখ বন্ধ করে থাকেন তো আপনার অনুভূতি হবে আপনি স্থির রয়েছেন এবং এই অবস্থায় যখন এইর হোস্টার্সরা আপনার কাপে কফি ঢালবে তখন তা পিছনের দিকে উড়ে চলে যাবে না। কারণ কাপ, কফি এবং আপনি প্লেনের সাথে একই স্পিডে ভ্রমন করছেন এবং একই ফ্রেমে রয়েছেন। এবার মনে করেন প্লেন টি যদি গতি কমায় বাড়ায় তাহলে নিশ্চই কফির কাপ টি আপনার গায়ে পড়ে যাবে এবং আপনি তখন প্লেন টির গতি অনূভব করতে পারবেন। আরেকটি উদাহরণের সাহায্যে বলি,

Frames Of Reference :                 

মনে করন আরেকটি ব্যাক্তি ট্রেনের ভিতরে রয়েছে, যে ব্যাক্তি ট্রেনের ভিতরে রয়েছে সে একটি ফ্রেম অফ রেফারেন্সের মধ্যে রয়েছে আর যে ব্যাক্তি টি বাহিরে রয়েছে সে অন্য আরেকটি ফ্রেম অফ রেফারেন্সের মধ্যে রয়েছে। তখন দুটি ব্যাক্তির অনুভূতি আলাদা হবে, যে বাহিরে আছে সে প্লাটফর্ম এবং বাহিরের পৃথিবী স্থির অবস্থায় দেখবে আর যে ট্রেনের ভিতরে অবস্থান করছেন সে অনুভব করবে যে ট্রেন টি স্থির আছে আর বাকি সব সামনে বা পিছনের দিকে মুভ করছে। একই ঘটনা পৃথিবীর ক্ষেত্রে ও ঘটে। পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে আমাদের ক্ষেত্রে পৃথিবীর গতি অনূভব করা সম্ভব নয়, আমরা যদি পৃথিবীর এট্মোস্ফিয়ারের বাইরে  স্পেসে গিয়ে দেখি অথবা স্পেসকে যদি আমরা ফ্রেম অফ রেফারেন্স ধরি তাহলে আমরা তার ঘূর্ণন অনূভব করতে পারবো।

কারণ ট্রেনে থাকা আমি আপনি এবং ট্রেনের এট্মোস্ফিয়ার এবং ট্রেনের বাহিরে পৃথিবীতে থাকা আমি আপনি এবং পৃথিবীর এট্মোস্ফিয়ার একই গতিতে ঘুরছে, এজন্যই আমাদের পৃথিবীর গতির অনুভূতি হয় না। কিন্তু ট্রেন এবং পৃথিবীর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে, যখন ট্রেনটির গতি বাড়ে বা কবে তখন আমরা আমদের শরিরে একটি বল অনূভব করি এবং তা পদার্থবিজ্ঞানের বলের সূত্র মেনে হয়,
বল=ভর*বেগ। যখন ট্রেন তার গতি কমায় বা বাড়ায় তখন সূত্র অনুযায়ী আমরা বল অনূভব করি।
কিন্তু পৃথিবী কখনো তার বেগ বা গতির পরিবর্তন করে না,তাই আমরা সেই বেগ টা বুঝতে পারি না।যদি কখনো বেগ পরিবর্তন করতো তাহলে অবশ্যই আমরা তা অনূভব করতে পারতাম।

কিন্তু তার মানে এই না যে আমরা পৃথিবীর ঘূর্ণন দেখতে পারবো না। সূর্য এবং চন্দ্রের পূর্ব দিকে উঠে পশ্চিম দিকে অস্ত যাওয়া, দিন থেকে রাত হওয়া  সবই পৃথিবীর ঘূর্ণন এর জন্যই হয়।আমরা যদি একটি ক্যামেরা কে আকাশের দিকে দিয়ে ভিডিও রেকর্ড করি তাহলে আমরা আকাশের তারা দের ও মুভমেন্ট দেখতে পাবো। কারণ আমরা আমদের ফ্রেম অফ রেফারেন্সে অনুযায়ী আমরা তাদেরকে মুভ করতে দেখতে পারবো।

আমরা পৃথিবীতে যা ই করি না কেন আমদের অবস্থান ঠিক থাকবে কারণ পৃথিবীর এই ঘূর্ণন গতি কখনো পরিবর্তন হয় না আর তাই আমরা কখনো পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি অনূভব করতে বা বুঝতে পারি না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন